হাসপাতাল-ক্লিনিকে তো রোগী মারা যাবেই দেখতে হবে কার ভুলে রোগী মারা গেছে। আমরা অভিযোগ না পেলে ব্যবস্থা নিতে পারিনা। শুনেছি কালকে একটা ক্লিনিকে রোগী মারা গেছে। আন অফিসিয়ালী আজ একটা টিম পাঠিয়েছিলাম এখনো টিমের সাথে আমার কোন কথা হয়নি। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের ঐ ক্লিনিক লাইসেন্স পান। চলতি অর্থ বছরে তাদের লাইসেন্স নবায়ন হয়নি। মানিকগঞ্জে ২০টি হাসপাতাল এ অর্থ বছরের লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে। তবে লাইসেন্স নবায়ন না হলে চিকিৎসা দিতে পারবে না এমন কোন কথা নেই। গতকাল দুপুরে পৌরসভার সেওতা এলাকায় স্বপ্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার নামের এক অবৈধ ক্লিনিকে লিপি আক্তার নামের এক প্রসূতী মায়ের ভুল চিকিৎসায় মারা যায়। সেই বিষয়ে জানতে সিভিল সার্জন ডাঃ মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী কে ফোন করলে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
জানা যায়, রবিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে ক্লিনিকটিতে নারীর অবস্থার অবনতি হলে বেলা তিনটার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান ঐ নারী। পরে মুন্নু মেডিকেলে পৌছালে কর্তব্য চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
নিহত লিপি আক্তার মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার শ্রীবাড়ি এলাকার মোঃ উজ্জল হোসেনের স্ত্রী।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, লিপি আক্তারের অপারেশন করেছেন ডাক্তার খাইরুল হাসান এবং অ্যানেস্থেসিয়া ডাক্তার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডা. মুজাহিদুর রহমান।
এসময় উপস্থিত অপারশেন থিয়েটারে তাদের সহযোগিতা করে হাসপাতালের একজন নার্স এবং মেডিকেল এসিস্ট্যোন্ট কোর্সে অধ্যয়নরত নিক্কন নামের এক যুবক।
যোগাযোগ করা হলে নিক্কন তার বক্তব্যে বলেন, আমি মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট কোর্সের তৃতীয় বর্ষে লেখাপড়া করছি। অপারেশেনরে সময় আমিও ছিলাম।
অপারেশনের পর যখন ব্লিডিং বন্ধ হচ্ছিল না তথন খাইরুল স্যারকে খবর দেই। স্যার তিনবার এসে দেখেছেন এবং চিকিৎসা দেন। এরপর রোগীর অবস্থা খারাপ হলে তাকে মুন্নু মেডিকেলে রেফার্ড করেন খাইরুল স্যার।
লিপি আক্তারের ভাই মো. রাজিব মিয়া জানান, অপারেশনের পর থেকেই আমার বোনের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। আমার বোনের ফাইলপত্র চাইলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেগুলো দেয়নি। আমি বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাইলেও তারা কোন সদুত্তর দেয়নি।
লিপি আক্তারের চাচাতো ভাই শরিফুল ইসলাম জানান, সিজার অপারেশন করার জন্য তার বোন লিপি আক্তারকে সকাল ১০টার দিকে স্বপ্ন হাসপাতাল এণ্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। এরপর দেড়টার দিকে ডাক্তার খাইরুল হাসানের তত্বাবধানে অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পর থেকে ডাক্তাররা বার বার অপারেশন থিয়েটারে যাওয়া আসা করতে থাকে। এরপর রোগীর অবস্থা জানতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় রোগীর অবস্থা একটু খারাপ হয়ে গেছে। ভালো কোন হাসপাতালে নিয়ে গেলে ঠিক হয়ে যাবে। রোগীর অবস্থার অবনতি হলে তাকে দ্রুত মুন্নু মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যেতে বললে আমরা অ্যাম্বুলেস্নে করে মুন্নু মেডিকেলে নিয়ে যেতে চাই। কিন্ত মুন্নু মেডিকেলে পৌছানোর আগেই আমার বোন মারা যায়।
এদিকে, লিপি আক্তারের মৃত্যুর পর থেকেই ডাক্তার খাইরুল হাসান আত্মগোপনে রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ডাক্তার খাইরুল হাসানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
স্বপ্ন হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুরাদ খান বলেন, গতকাল 999 এ কল করে আমাদের হাসপাতালের ঘটনা কে যেন বলে দিয়েছিল সেই বিষয়টি নিয়ে আমি থানায় আসছি আমাদের হাসপাতালের সব কাগজ ঠিক আছে, আমাদের কাগজ পত্র সবগুলো আপটু ডেট, একটু আগেও সিভিল সার্জন অফিস থেকে এসে সব চেক করে গেছে। সব ঠিক আছে।
ফায়ার ইন্সপেক্টর হামিম বলেন, আমাদের লাইসেন্স তাদের নাই।কোনো স্থানে দাজ্ঝ্য বস্তু সংরক্ষন ও প্রকিয়া করন করলে আমাদের ফায়ার লাইসেন্স নিতে হয়।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রউফ সরকার জানান, জরুরী হেল্পলাইন ৯৯৯-এ কল পেয়ে স্বপ্ন হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারে লিপি আক্তার নামের এক গৃহবধুর মৃত্যুর ঘটনা জানতে পেরেছি।
এরপর তাৎক্ষণিক সেখানে আমাদের পুলিশ পাঠিয়েছি। প্রসূতি লিপি আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) কাজী এনায়েত করিম রাসেল বলেন, মৃত লিপি আক্তারের স্বামী ও তার ভাই অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছে আবেদন করে ময়না তদন্ত না করেই লাশ বাড়ীতে নিয়ে গেছে।
এই বিভাগের অন্যান্য খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: