চৌদ্দগ্রামের বৃহত্তর হুগুলিয়া খাল দখলে-দূষণে বিলীন 

মনোয়ার হোসেন, কুমিল্লা প্রতিনিধি | ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ১৬:৫৬

চৌদ্দগ্রামের বৃহত্তর হুগুলিয়া খাল দখলে-দূষণে বিলীন 
অবৈধ দখলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের কাদৈর বাজার সংলগ্ন হুগুলিয়া খাল। দখল-দূষণে বিলীন আজ উপজেলার বৃহত্তর এ হুগুলিয়া খাল। প্রভাবশালী কর্তৃক অবৈধভাবে দোকানঘর সহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করায় খালটি এখন বিলুপ্তির পথে। অথচ একসময় এ খালের উপর দিয়েই ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য দূর-দূরান্তের মানুষ নৌকায় চলাচল করতো। এমনকি স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল আনা-নেয়ার কাজ সহ মালামাল পরিবহনের জন্য খালটি ব্যবহার করতো। আবার শুষ্ক মৌসুমে কৃষি কাজে স্থানীয় কৃষকরা এ খালের পানি ব্যবহার করতো।
 
কালের বিবর্তনে সেই খাল এখন শুধুই স্মৃতি। দুই-তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালটি অবৈধ দখল আর দুষণে আজ হারিয়ে গেছে। খালের দুইপাশে অবৈধভাবে অসংখ্য দোকানঘর ও স্থাপনা নির্মাণ করায় বিশাল এই খালটি আজ ছোট ড্রেনে পরিণত হয়েছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে শুভপুর ইউনিয়নের জুফুয়া, বাগারপুস্করনী, তুলাপুস্করনী, হাজারীপাড়া, সাতবাড়িয়া, সুবর্ণপুর, পাইকপাড়া ও ভল্লাচৌ গ্রামসহ আশ পাশের আরো কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক হুগুলিয়া খালের পানি কৃষি কাজে ব্যবহার করতে পারছে না। এতে রবি শস্য উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। যারফলে স্থানীয় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
 
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের কাদৈর বাজারের কোল ঘেঁষে বয়ে গেছে হুগুলিয়া খাল। ডাকাতিয়া, কাকঁড়ি নদী হয়ে হুগুলিয়া খাল দিয়ে নৌকাযোগে কাদৈর বাজারে মালামাল নিয়ে আসতেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকরা শুষ্ক মৌসুমে কৃষি কাজে এই খালের পানি করতেন। কালের বিবর্তনে প্রবাহমান হুগুলিয়া খালের দুইপাশ অবৈধভাবে দখলে নিয়ে ধীরে ধীরে দোকানঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। কেউ কেউ দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যবসা বাণিজ্য করলেও অনেকে দখলের পর অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার দোকান ঘর নির্মাণের পর ভাড়া দিয়েছেন। এভাবেই দখল হতে হতে খালটির ৯০ শতাংশ জায়গা অবৈধ দখলে চলে যায়। এ কারণে চৌদ্দগ্রামের অন্যতম বৃহত্তর এ খালটি আজ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
 
তেলিগ্রামের কৃষক সিরাজুল হক বলেন, ‘হুগুলিয়া খালটি বানিজ্যক খাল হিসেবে পরিচিতি ছিল। ১৯৮০ সালের দিকেও এই খাল দিয়ে বড় বড় মালবোঝাই নৌকাগুলো কাদৈর বাজারে নোঙ্গর করতো। ব্যবসায়ীরা বাজার শেষে নৌকায় করেই আবার বাড়িতে ফিরে যেতো। এই খালের পানি এলাকার কৃষকেরা কৃষি কাজে ব্যবহার করতেন। আজ খালটি দখল হয়ে যাওয়ায় খালের ইতিহাস ঐতিহ্য বিলীন হয়ে গেছে। প্রভাবশালী মহল খালটি দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করে লাখ লাখ টাকা সালামি নিয়েছে এবং মাস শেষে ভাড়া আদায় করছে। এটি দখলমুক্ত হলে এলাকার মানুষ উপকৃত হবে।’
 
সুবর্ণপুর গ্রামের কৃষক আলী মিয়া বলেন, ‘আমরা শুষ্ক মৌসুমে জমিতে এই খালের পানি কৃষি কাজে ব্যবহার করেছি। বর্তমানে খালটি দখল হয়ে যাওয়ার কারণে শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না। আবার বর্ষা মৌসুমে খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে পাশ্ববর্তী গ্রামের বাড়ি-ঘরে পানি উঠে এবং জমিনের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। অবৈধ দখল মুক্ত করে খালটি পূনঃখনন করলে আশেপাশের গ্রামের মানুষ বেশ উপকৃত হবে।
 
হাজারীপাড়া গ্রামের ওয়াজিউল্লাহ ছয় বছর আগে খালের উপর দুইটি দোকান ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। সরকার উচ্ছেদ করে দিলে তিনি চলের যাবেন বলে জানান।
 
আঠারবাঁক গ্রামের মোস্তফা বলেন, চার বছর আগে খালের উপর নির্মিত একটি দোকান ঘর পাইকপাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন কালু থেকে দখল শর্তে ৬ লাখ টাকা দিয়ে ক্রয় করেছি। সরকারি খালের জায়গা কিভাবে ক্রয় করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সদুত্তোর দিতে পারেননি।
 
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তমালিকা পাল বলেন, ‘সরকারি কোন খাল দখলের সংবাদ পেলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। হুগুলিয়া খালটি পরিদর্শন করে অবৈধ দখলমুক্ত করা হবে। প্রয়োজনে দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ মামলা করা হবে।’


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: