সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবাদ সম্মেলন

কুরবান আলী, দিনাজপুর | ৯ মে ২০২৩, ২৩:২১

ছবি- সংগৃহীত

দিনাজপুর সদর উপজেলার ৯নং আস্করপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়ার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ উঠেছে। এমনকি বৈধভাবে সরকারী পুকুর লিজ নেয়ার পর সেই জবর দখলের অভিযোগ রয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে অপহরণ, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, অন্যের জমি জবর দখল, চাঁদাবাজি নানান অভিযোগে অর্ধশত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী সংবাদ সম্মেলন করেছে।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় দিনাজপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আস্করপুর ইউনিয়নের বীরমুক্তিযোদ্ধাগণ ও ইউনিয়নের সচেতন নাগরিকবৃন্দের ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দীন।

এসময় বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকসুদ আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরহাদ হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আজগার আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়ার মোহাম্মদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরেন্দ্র নাথ রায়সহ অর্ধশত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়- ১৪৩০ থেকে ১৪৩২ বাংলা সন পর্যন্ত আস্করপুর ইউনিয়নের তাজপুর মৌজায় অবস্থিত ৩ দশমিক ৩৩ একরের নওশনদিঘি পুকুরটি সরকারের কাছ থেকে নাগরপাড়া (সোনাকুড়ি) মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির মাধ্যমে লীজ নেয়া হয়। পুকুরটি লীজ নেয়ার পর থেকে সাবেক চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া ও তার লোকজনেরা পুকুরটি নিজেদের হেফাজতে নেয়ার চেষ্টা করে। গত ১৯ এপ্রিল দিনাজপুর শহরের উপশহর ৭নং ব্লকের সাবেক চেয়ারম্যান জিয়া ও তার সঙ্গী জুলফিকার আলী ছুট্টো, আনারুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান রাজু, সাইফুল ইসলাম, মিথুন সিং, বাচ্চুসহ আরও অজ্ঞাত ৪/৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিনের ছেলে আসাদুজ্জামান বাবুর ভাড়া বাসায় প্রবেশ করে। এসময় নওশনদিঘি পুকুরটি জিয়ার নামে লীজ প্রদান করতে হবে। এতে আসাদুজ্জামান বাবু পুকুরটি লীজ প্রদান করতে অস্বীকার করলে নির্যাতন করে।

ইতিপূর্ব থেকে আসাদুজ্জামান বাবুর বাম পা দুর্ঘটনায় অকেজো হওয়ার কারণে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। এসময় তার স্ত্রী রেবেকা সুলতানা এগিয়ে আসলে তাকেও লাঞ্ছিত ও শ্লীলহানি ঘটায়। এসময় ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। টাকা দিতে অস্বীকার করে বাড়ীতে রাখা নগদ ৪০ হাজার টাকাসহ আসাদুজ্জামান বাবুকে জোরপূর্বক তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এসময় আসাদুজ্জামান বাবু মারধরে করে ৩টি ১০০ টাকা মূল্যের ফাকা ষ্ট্যাম্পে, হলুদ ডেমি ও নীল ডেমিতে স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়- অপহরণ ও মারধরের ঘটনায় কোতয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি দায়ের করার কারণে সাবেক চেয়ারম্যান জিয়া আসাদুজ্জামান বাবুকে মোবাইলে প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করে। হুমকি দেয়ার ঘটনায় কোতয়ালী থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করে ভুক্তভোগী। দুটি মামলা দায়ের হলেও পুলিশ এখনও সাবেক চেয়ারম্যান জিয়াকে গ্রেফতার করে পারে নাই। জিয়া ও তার লোকেরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকেও বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে আসছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ- জিয়াউর রহমান জিয়ার মত সন্ত্রাসীদের তান্ডব দেখার জন্য আমরা এদেশ স্বাধীন করি নাই। আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার গড়ার স্বপ্ন নিয়ে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম। তাই অবিলম্বে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তার পরিবারের উপর অত্যাচার, নির্যাতন, চাঁদাবাজীর ঘটনায় আসামী জিয়া ও তার সহযোগীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করার প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন।

অভিযুক্ত জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে সে সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমি কোন ধরনের অন্যায়ের সাথে জড়িত নাই। আমি অল্প বয়সে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকছি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। তাই একটি মহল আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিনের ছেলে আসাদুজ্জামান সদর উপজেলার সমবায় অফিসে চাকুরী করে। এই সুবাদে উপজেলা থেকে মানুষদের কাছে টাকার বিনিময়ে পুকুর নিয়ে দেয়। তার বিরুদ্ধে মাদকসহ বহু অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আমি ২৭ এপ্রিল জেলা সমবায় অফিসারের অভিযোগ দিয়েছি। এই কারণে সে আমার বিরুদ্ধে ২৮ এপ্রিল মিথ্য মামলা দায়ের করেছে।

এব্যাপারে দিনাজপুর কোতয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মওলা বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলাগুলো তদন্তকার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। মামলাগুলো দায়েরের পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছে। তবে তাকে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অচীরেই আইনের আওতায় আনা হবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: