সিলেটের জাফলংয়ে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর ও ক্লু-লেস "পর্যটক আলে ইমরান হত্যা" মামলার রহস্য উন্মোচন, হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ২ জন আসামিকে আটক করেছে পুলিশ।
সিলেট জেলার অপরাধ দমন, আসামি আটক ও জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জেলা পুলিশ, সিলেট নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাছাড়া খুন, ধর্ষণ, চাঞ্চল্যকর ও ক্লু-লেস হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন এবং জড়িত আসামিদের আটক জেলা পুলিশ, সিলেট সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আসছে।
গত ১৭ এপ্রিল ২০২৩ তারিখ বিকালে গোয়াইনঘাট থানাধীন ৩ নং পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের জাফলং বল্লাঘাট রিভার ভিউ রিসোর্ট এর পাশে একটি অজ্ঞাতনামা যুবকের লাশ পাথর চাপা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন থানায় সংবাদ দিলে তাৎক্ষণিকভাবে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে জানা যায়, ভিকটিমের নাম আলে ইমরান (৩২), পিতা- আব্দুল জব্বার, স্থায়ী ঠিকানা- গুরই, থানা- নিকলী, জেলা- কিশোরগঞ্জ। উক্ত ঘটনায় গোয়াইনঘাট থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয় যার মামলা নং- ১৮, তারিখ: ১৮/০৪/২০২৩। উক্ত পর্যটক হত্যার ঘটনা বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয় যা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
উক্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত আসামিদের শনাক্তকরণ ও আটকে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৯ এপ্রিল ২০২৩ তারিখ রাতে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ এবং জেলা গোয়েন্দা শাখা কর্তৃক পৃথক দুটি অভিযানে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি নাদিম আহমেদ নাঈম (১৯), পিতা- মোঃ জিন্নাত, মাতা- নুরুন্নাহার, সাং- বেলদি গাজীরটেক, ইউনিয়ন- দাঊদপুর, থানা-রুপগঞ্জ, জেলা- নারায়ণগঞ্জ কে নিজ বাড়ি হতে আটক করা হয় এবং হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ভিকটিম আলে ইমরানের স্ত্রী খুশনাহার (২১), পিতা- মৃত আব্দুস ছাত্তার, গ্রাম- ছেত্রা, ইউনিয়ন- গুরুই, থানা- নিকলী, জেলা- কিশোরগঞ্জ'কে ঢাকা বসুন্ধরা এলাকা হতে আটক করা হয়।
প্রাথমিক অনুসন্ধান ও আটককৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভিকটিম আলে ইমরান এর স্ত্রী খুশনাহার এর সাথে হত্যা মামলার অন্যতম পলাতক আসামি মাহিদুল হাসান মাহিন (২৪) এর দীর্ঘ দুই থেকে আড়াই বছরের প্রেম। আসামি মাহিন ঢাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জিএম পদে কর্মরত। ভিকটিম আলে ইমরানের সাথে গত পাঁচ বছর আগে খুশনাহারের বিয়ে হয়। মাহিনের সাথে প্রেমে জড়ানোর পর থেকেই ভিকটিমের স্ত্রী খুশনাহার এবং তার প্রেমিক মাহিন বিভিন্ন সময় ভিকটিম আলে ইমরান কে হত্যা করার চেষ্টা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় হত্যা করার উদ্দেশ্যে খুশনাহার তার স্বামী ভিকটিম আলে ইমরান কে বেড়ানোর কথা বলে গত ১৫ এপ্রিল ২০২৩ তারিখ রাতে ভৈরব হতে ট্রেন যোগে সিলেট এর উদ্দেশ্য রওয়ানা করে। অন্যদিকে একই দিনে প্রেমিক মাহিন ও মাহিনের অফিসে কর্মরত আটককৃত আসামি নাদিম এবং অপর পলাতক সহযোগী ঢাকা কমলাপুর হতে ট্রেন যোগে সিলেট এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। গত ১৬ এপ্রিল ২০২৩ তারিখ সকাল আনুমানিক ০৭:৫০ ঘটিকায় জাফলং বল্লাঘাটস্থ "রিভারভিউ রিসোর্ট এণ্ড আবাসিক হোটেল" এর ১০১ নং কক্ষে ভিকটিম আলে ইমরান এবং তার স্ত্রী খুশনাহার অবস্থান করেন এবং অন্য তিন আসামি জাফলং বল্লাঘাট এ হোটেল শাহ আমিন এ অবস্থান করেন।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিমের স্ত্রী খোশনাহার হত্যাকাণ্ড সংঘটনের পূর্বেই কৌশলে তাদের অবস্থানরত হোটেল রুমের সামনের সিসিটিভি ক্যামেরা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেয়। পরবর্তীতে মাথা ব্যাথার ঔষধ এর কথা বলে রাত ১০:০০ টার সময় ভিকটিম আলে ইমরানকে তার স্ত্রী খুশনাহার ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর যখন ভিকটিম আলে ইমরান ঘুমিয়ে যান তখন স্ত্রী খুশনাহার তার প্রেমিক মাহিন কে হোটেল রিভারভিউ রিসোর্ট এন্ড আবাসিক হোটেল এ আসার জন্য বলেন। রাত আনুমানিক ১২:০০ ঘটিকার সময় হত্যাকারী মাহিন তার অপর দুই সহযোগীকে নিয়ে হোটেল রিভারভিউ এর ১০১ নং কক্ষে প্রবেশ করে এবং রাত অনুমান ০২:০০ ঘটিকার সময় আলে ইমরান এর স্ত্রী খুশনাহার এবং প্রেমিক মাহিন গলায় গামছা পেচিয়ে ভিকটিম আলে ইমরান কে হত্যা করে। এই সময় আটককৃত অপর আসামি নাদিম আলে ইমরানের পা চেপে ধরে এবং পলাতক অপর সহযোগী রুমের বাহিরে পাহাড়া দেয়। একসময় ভিকটিম আলে ইমরান এর মৃত্যু নিশ্চিত হলে আনুমানিক রাত ০৩:০০ ঘটিকার সময় হত্যাকারী মাহিন ও অপর দুই সহযোগী ভিকটিম আলে ইমরানের মৃত দেহ লুকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে হোটেলের পাশে পাথর চাপা দিয়ে রাখে। পরবর্তীতে হত্যাকারীরা হোটেল থেকে রাত আনুমানিক ০৪:৩০ ঘটিকার সময় বের হয়ে সিএনজি যোগে সিলেট পালিয়ে যায়।
সিলেট জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রাথমিকভাবে আটককৃত আসামিরা উক্ত হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামিদের আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আটককৃত আসামিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: