ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আত্মগোপনে; বন্ধ হয়ে গেছে স্কুলের শিক্ষক ও কর্মচারীর বেতন-ভাতা

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি | ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ০৩:৫৭

প্রতীকী ছবি

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার রাজারামপুর সরফ উদ্দিন (এসইউ) উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে থাকায় বেতন-ভাতা তুলতে পারছেন না বিদ্যালয়ের ২৪ জন শিক্ষক ও কর্মচারী। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটছে শিক্ষক ও কর্মচারীদের।

জানা যায়, রাজারামপুর সরফ উদ্দিন (এসইউ) উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ৭নং শিবনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মামুনুর রহমান চৌধুরী বিপ্লব। সভাপতি মামুনুর রহমান চৌধুরী বিপ্লবের কাছে ১৩ লাখ টাকা পাওনাদার উপজেলার রাঙ্গামাটি গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে মেসার্স এফএ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ফিরোজ আহম্মেদ আদালতে চেক ডিজঅনারের মামলা করেন আদালতে। ওই মামলায় বিজ্ঞ আদালত মামুনুর রহমান চৌধুরী বিপ্লবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করেছেন। একই সঙ্গে অন্য পাওনাদারদেরও চাপ বেড়েছে পাওনা টাকা আদায়ে। এসব কারণে আদালতের গ্রেপ্তারী পরোয়ানা এড়াতে মামুনুর রহমান চৌধুরী বিপ্লব গা-ঢাকা দিয়ে আত্মগোপনে গেছেন। সভাপতির অনুপস্থিতির কারণে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের বেতন-ভাতার সীটে সভাপতি মামুনুর রহমান চৌধুরী বিপ্লবের স্বাক্ষর না হওয়ায় বেতন-ভাতা তুলতে পারেননি ওই বিদ্যালয়ের ২৪ জন শিক্ষক ও কর্মচারী। সভাপতির আত্মগোপনের কারণে স্থবির হয়ে গেছে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। শুধুমাত্র সভাপতির অনুপস্থিতির কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাচ্ছে না কর্মচারী নিয়োগের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, এলাকার মুদি দোকানে সারা মাসের খরচ শেষে বেতন পাওয়ার পর বাকী-বকেয়া পরিশোধ করে নতুন করে বাকীতে খরচা খরচ করতে হয়। কিন্তু সভাপতি পলাতক থাকায় জানুয়ারি মাসের বেতন-ভাতা তুলতে না পারায় দোকানদারও আর বাকীতে মালামাল দিচ্ছেন না। এতে বিপাকে পড়েছেন পরিবার পরিজন নিয়ে।

শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ থাকার সত্যতা নিশ্চিত করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মামুনুর রহমান চৌধুরী বিপ্লবের স্বাক্ষর না হওয়ায় শিক্ষক ও কর্মচারিদের জানুয়ারি মাসের বেতন-ভাতা ব্যাংকে জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি। যার কারণে শিক্ষক ও কর্মচারিরা তাদের বেতন-ভাতা উত্তোলন করতে পারেননি। গত কয়েকমাস আগে কর্মচারী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং আবেদন গ্রহণ করার পরও সভাপতির অনুপস্থিতির কারণে নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। সভাপতির বিরুদ্ধে ১৩ লাখ টাকার চেকের মামলার রায় এবং আদালত থেকে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি হয়েছে। আবার অন্য এক পাওনাদারও ৬৩ লাখ টাকা আদালতে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন বলেও জানা গেছে। তবে সভাপতির অনুপস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষরে শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতার বিল উত্তোলনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

রাজারামপুর সরফ উদ্দিন (এসইউ) উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মামুনুর রহমান চৌধুরী বিপ্লবের মুঠোফোনে ফোন দেওয়া হলে তার মুঠোফোনের সুইচ অফ পাওয়া যায়, ফলে এ বিষয়ে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুর আলম বলেন, তিনি সম্প্রতি এ উপজেলায় যোগদান করেছেন, এ কারণে এ বিষয়ে পুরোপুরি তিনি কিছুই জানেন না। বিষয়টি জেনে সভাপতির জটিলতা নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ওয়াসিকুল ইসলাম বলেন, রাজারামপুর সরফ উদ্দিন (এসইউ) উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মামুনুর রহমান চৌধুরী বিপ্লব অনুপস্থিতিতে সরকারি বিধি মোতাবেক ইউএনও হিসেবে স্বাক্ষর করে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা উত্তোলনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো কারণে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি অনুপস্থিত থাকলে তার অনুপস্থিতিতে ইউএনও ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সীটে স্বাক্ষর করবেন। ফলে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: