প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকায় প্রবাস যাওয়া যাদের একমাত্র কাজ, এদের মধ্যে জমিতে সবজি চাষ করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন এক সময়ের ধান চাষ করা এক কৃষক মিন্নত আলী। তার বাগানে ফলেছে আশাতীত সবুজের ফসল। তার এ বাগান দেখতে প্রত্যহ লোকজনের সমাগম ঘটছে। উৎসাহিত হচ্ছেন এলাকার বেকার মানুষজন কৃষি-খামার ও ফসলাদি উৎপাদনে।
মিন্নত আলী সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের জুগল নগর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ফসলী জমিতে ধান চাষ করে আসছিলেন, ধান বিক্রয় করে যা পেতেন তা দিয়ে কোনো রকম চলতো তার পরিবার। এ অবস্থায় চিন্তিত হয়ে পড়েন পরিবার পরিজনের ভরপোষণ ও ব্যয়ভার নিয়ে, পরিবারের আট সদস্য নিয়ে এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিলেন বাড়ির কাছে থাকা নিজের পতিত জমি সহ ধান চাষের জমিতে সবজি চাষ করার, নিজের মালিকানা ১২০ শতক জমি নিয়ে শুরু করেন সবজি ক্ষেত।
এদিক সেদিক করে টাকা যোগাড় করে মনুযোগ দিয়ে শুরু করেন সবজি চাষ, কৃষি অফিস বা সরকারী কোনো প্রকার সহায়তা ছাড়াই ক্ষেতের কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি। এক সময় তার সবজি ক্ষেত হয়ে ওঠে সবুজ-শ্যামল এক বাগানে। চলতি শীত মওসুমে তার ফলানো রকমফের সবজির মধ্যে রয়েছে রয়েছে বাহারী জাতের শিম, লাউ, বেগুন, টমেটো, বাঁধা কপি, ফুল কপি, গাজর, শষা ইত্যাদি।
সবজি বাগান করতে খরচ হয়েছে প্রায় দুই লাখ টাকা। ভালো ফলন হয়েছে আমির আলীর সবজি ক্ষেতে, প্রতিদিনি সকালে সবজি ব্যবসায়ীরা ভিড় করেন তার ক্ষেত থেকে সবজি আনতে। এ পর্যন্ত তিনি তিন লাখ টাকার শীতকালীন সবজি বিক্রি করতে পেরেছেন, পুরো ফসল তুলতে পারলে আরও ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকার সবজি বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
তবে পোকার আক্রমণে তার শিমগাছে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। শীত শেষে তার ক্ষেতে ঐ জমিতে বর্ষাকালীন নানা ধরণের সবজি যেমন- ঝিঙ্গা চিচিঙ্গা, ডেঙ্গা, কুমড়ো, দেঁড়শ, লগী শিম ইত্যাদি ফলানোরও ইচ্ছে রয়েছে তার।
মিন্নত আলী জানান, পরিবারের আট সদস্য নিয়ে শুধু বোরো ফসল করে সংসার চালানো যখন কষ্ট হচ্ছিল। ২০১৭ সালে আমি নিজ উদ্যোগে সরকারি কোনো প্রকার আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা ছাড়াই ভালো ফলন পেয়েছেন তিনি।
তার দেখাদেখি এলাকার আরোও অনেক লোকজন তাদের পতিত জমিতে সবজি বাগান করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন। তিরি আরো জানান, প্রায় তিন বছর ধরে সরকারের কৃষি অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। আরো বেশি করে সহযোগিতা করলে আরো ভালো ফলন পেতে পারবেন। তাই সরকারি ভাবে তার সবজি বাগান পরিদর্শন ও সর্বপ্রকার সহযোগিতা প্রদানের দাবি জানান তিনি।
জগন্নাথপুরের কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার বলেন, মিন্নত আলীসহ আমাদের উপজেলার কৃষকদের কৃষি অফিস থেকে সবজি চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা করে আসছি।
মিন্নত আলী এবার ৪ একর জায়গায় সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি চাষ করেছে, ফলনও ভাল হচ্ছে, টার্গেট পুরণ করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা তাকে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করব।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: