বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা: পুরোদমে চলছে ফানুস ও রথ তৈরীর কাজ

আকাশ মারমা, মংসিং, বান্দরবান | ৬ অক্টোবর ২০২২, ২৩:৩৫

সংগৃহীত

বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস বর্ষাবাস পালনের পর আসে প্রবারণা পূর্ণিমা।

প্রবারণা হলো আত্মশুদ্ধির অনুষ্ঠান, অশুভকে বর্জন করে সত্য ও সুন্দরকে বরণের অনুষ্ঠান। যা মারমা ভাষায় বলা হয় মাহাঃ ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে। এই পূর্ণিমা তিথিতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা নিজ কৃত অপকর্ম বা ভুল ভ্রান্তি স্বীকার করে পরিশুদ্ধ হয়। পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা ৩ মাসে উপবাস পালনের পর পূর্ণিমা তিথীতে সব কিছু পরিত্যাগ করে আনন্দে মেতে উঠে।

জানা গেছে, প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব উদযাপনকে ঘিরে বান্দরবানে বিভিন্ন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পল্লীগুলোতে যুবক-যুবতীরা মিলে ফানুস বানানো, রথ ও পিঠা উৎসবের প্রস্তুতি গ্রহন করেছে পুরোদমে। এছাড়াও রাজ হংসীর আদলে রথ তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁশ, বেত আর হরেক রকমের রঙিন কাগজ। শিল্পীরা শেষ সময়ের রং তুলির আঁচড় দিচ্ছেন রথে। আর অনুষ্ঠানের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দিতে তৈরি করা হচ্ছে রং বেরং এর কাল্পনিক ভূত। এই পূর্ণিমাকে সামনে রেখে প্রতিটি পাড়া ও মহল্লায় যুবক- যুবতীরা মিলে বিহার গুলোতে করছে পরিষ্কার-পরিছন্নতার কাজ।

এদিকে বান্দরবান সদরে বরাবরের মতই অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ থাকছে মহামঙ্গল রথযাত্রা এবং ফানুস উড়ানো উৎসব। এবারের রথযাত্রায় মূল আকর্ষণ রয়েছে ড্রাগন। প্রবারণা উদযাপনে প্রথম দিনেই শুরু হবে মহামঙ্গলময় শুভ রথযাত্রা। সন্ধ্যায় ৭ ঘটিকায় সময় ড্রাগন রথে গৌতম বুদ্ধকে বসিয়ে বান্দরবান শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করা হবে। দ্বিতীয় দিনে সন্ধ্যায় দিকে পুরো বান্দরবান শহর ঘুরে মঙ্গলময় রথ শোভযাত্রা এর পাশাপাশি রং বেরং এর কাল্পনিক ভূত নৃত্য নেশায় ঘুরবে পুরো শহর জুড়ে। প্রবারণা উৎসবের রথ টানার মধ্য দিয়ে সাংঙ্গু নদীতে বির্সজন দিয়ে প্রবারণা পূর্ণিমার সমাপ্তি ঘটবে। এসময় পাহাড়ের বৌদ্ধ সম্প্রদায় ছাড়াও বাঙ্গালী হিন্দু ও ঘুরতে আসা পর্যটকও এই উৎসবে হবে মাতোয়ারা।

জেলা শহর ঘুরে দেখা যায়, বান্দরবান সদর, বালাঘাটা, কালাঘাটা, রেইছা, সুয়ালক, জামছড়ি, রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচিসহ প্রত্যেক বৌদ্ধধর্মালম্বী গ্রামগুলোতে নতুন নতুন জামা-কাপড় কেনা থেকে শুরু করেই পিঠা তৈরি ও ফানুস বানানোর সরঞ্জাম কেনার ধুম পড়েছে হাটগুলোতে। ছোট কিংবা বড়, সকল বয়সী মানুষজন কেনাকাটা ব্যস্ততার সময় পার করছেন। কাপরের পাশাপাশি তিনদিনের যাবতীয় পণ্যসামগ্রী কিনে নিয়ে ফিরছেন নিজ বাড়ি।

বাজার করতে আসা হ্লাহ্লা ও মিমিচিং মারমা বলেন, সামনে প্রবারণা পূর্নিমাকে ঘিরে নতুন জামা কাপড় কিনতে এসেছি। নতুন নতুন ডিজাইনের থামি পরে বিহারের ছোয়াইং (আহার) দিতে যাবো। সব মিলিয়ে আমরা এখন আনন্দে মাতোয়ারা।

ডনাইপ্রু নিলি জানান, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। এটি বেশির ভাগ বান্দরবান জেলায় চোখে পড়ার মতন। এই পূর্ণিমায় দিনে বয়স্কদের সন্মান করি, ছোয়াইং (আহার) তৈরী করি, ভিক্ষুদের অর্থদানসহ সব মিলিয়ে যেন এই পূর্নিমা সবার কাছে অন্যতম দিন।

ফানুস তৈরীর কারিগর তাহ মে ও ছুড়ি মং মারমা জানান, এইবারে ফানুস তৈরী করা হয়েছে প্রায় এক হাজার উপরে। বানানো ফানুসের মধ্যে হাতী ফানুস, নৌকা ফানুস, প্যারাসুট ফানুস ও গোল ফানুস তৈরী করা হয়েছে। যা সম্পুর্ণভাবে তৈরী করতে সময় লেগেছে ১৫ দিনের মত। আমরা বন্ধুমহল মিলে ফানুস তৈরী করেছি। এই ফানুসগুলো ৯ ও ১০ তারিখে বিভিন্ন স্থান হতে চুলা মনি উদ্দেশে আকাশে উড়িয়ে দেওয়া হবে।

রথ তৈরী কারিগর ক্যওয়ং সিং মারমা জানান, রথ তৈরীতে প্রায় মাসখানিক মত সময় লেগেছে। সব কিছু কাগজ লাগানো শেষ হলে আগামিকাল রঙ তুলি দিলে পূর্ণিমা দিন আগেই রথটি পুরোপুরি সম্পন্ন করতে পারবো আশা করছি।

বান্দরবান প্রবারণা উদযাপন পরিষের সাধারণ সম্পাদক শৈটিং ওয়াই মারমা জানান, প্রবারণা পূর্ণিমাকে সামনে রেখে পুরোদমে ফানুস ও রথ তৈরী কাজ চলছে। ৯ তারিখ আগে আমাদের কাজ সম্পন্ন হবে। এবং জাকজমক ভাবে এই অনুষ্ঠান হবে বলে তিনি আশা করছেন।

বান্দরবান সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো, শহিদ ইসলাম বলেন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ৩ দিন ব্যাপী প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। পাশাপাশি অনুষ্ঠানের দিনের শুরুতেই আইনের পোশাক ও সাদা পোশাকে সব স্থানে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। যাতে সুশৃঙ্খল ভাবে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: