সনদ আর ১৩'শ টাকায় সীমাবদ্ধ রেখেই মহেশখালীতে আনসার ভিডিপির দশ দিনের গ্রাম ভিত্তিক মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। গত ২৮ আগস্ট আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা কার্যালয় কক্সবাজার স্বাক্ষরিত পত্রের নীতিমালা অনুসরণ না করে মনগড়া নিয়মে নানান অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে প্রশিক্ষণটি শেষ করে মহেশখালী উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা ফখরুদ্দিন রাজিব।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের শাপলাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিচতলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়- ইউনিফর্ম পরিধান না করে প্রশিক্ষণার্থীরা বসে আছে। পাশেই লুডু খেলছে কয়েকজন। সবমিলিয়ে হযবরল অবস্থা। সেখানেই কথা হয় মহেশখালী উপজেলা আনসার ভিডিপির কর্মকর্তা ফখরুদ্দিন রাজিবের সাথে। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর সকল প্রশিক্ষণার্থীদের ড্রেস পরিধান করতে দেয়। এদিকে প্রশিক্ষণ শেষে সনদ ও সম্মানী ভাতা প্রদানের সময় কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী কক্ষে প্রবেশ করে।
প্রজ্ঞাপন পর্যালোচনায় দেখা গেছে- ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০ দিনের গ্রাম ভিত্তিক মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয় মহেশখালীতে। সেখানে পুরুষ ৩২ জন, মহিলা ৩২ জন এবং ১ জন করে পুরুষ মহিলা দলনেতা সহ মোট ৬৬জন প্রশিক্ষণার্থী থাকার কথা। এছাড়াও বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের পুরানো ১টি ওয়ার্ডের সকল গ্রাম থেকে প্রশিক্ষণার্থী বাধ্যতামূলক নির্বাচনের কথা উল্লেখ রয়েছে। পাশাপাশি ৮ জন প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিবে বলে প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়- আনসার ভিডিপির মৌলিক প্রশিক্ষণ যে ওয়ার্ডে হচ্ছে সেটি শাপলাপুর ইউপির পুরানো ২নং ওয়ার্ড। এটির অধীনে বর্তমানে ৪,৫ ও ৬নং গঠিত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- ৪ ও ৫ নং ওয়ার্ড থেকে প্রশিক্ষণার্থী না নিয়ে শুধুমাত্র ৬নং ওয়ার্ড থেকে প্রশিক্ষণার্থী বাছাই করা হয়। যেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও চাকুরীজীবি অন্তর্ভুক্ত ছিল। যার কারণে ওয়ার্ড গুলোর বেকার শিক্ষিত নারী পুরুষরা প্রশিক্ষণ থেকে বাদ পড়ে।
অপরদিকে ৮ জন প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ দেয়ার নিয়ম থাকলেও প্রশিক্ষণে আনা হয় ৬জন প্রশিক্ষককে। একদিন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হলেও উপস্থিত হয়নি দুর্যোগ ব্যবস্থা অফিসের কোন কর্মকর্তা।
একটি সূত্রে জানা গেছে- প্রশিক্ষণে অংশ না নিয়ে সরকারী চাকরীতে কোটা সুবিধা পেতেই সনদের জন্যই বেসরকারী সংস্থায় চাকরিরত অবস্থায় প্রশিক্ষণার্থী হয়েছেন অনেকেই। কিন্তু তারা প্রশিক্ষণে অনিয়মিত ছিলেন। আর অবৈধ সুবিধা নিয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা।
এই বিষয়ে উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা ফখরুদ্দিন রাজিব বলেন- "আমি আমার ইচ্ছেমত প্রশিক্ষণার্থী নির্বাচন করেছি। কারো কোন আপত্তি নেই। প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণার্থীরা লুডু খেলছে কেন এবং সনদ ও সম্মানী ভাতা নেয়ার সময় বাইর থেকে প্রশিক্ষণার্থী কেন আসছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন- তারা আমার কথা মানছেনা। যারা দেরী করে আসছে তারা নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
দুই প্রশিক্ষক কেন আনা হয়নি সেই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান- দাওয়াত দেয়ার পরেও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলার পঃপঃ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আসেননি।
যদিও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইয়াসিন জানিয়েছেন- তিনি সনদ বিতরণে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শণ থাকায় যেতে পারেননি। তবে তিনি ওই প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক ছিলেননা।
অপরদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ মাহফুজুল হক জানান- প্রশিক্ষকের ব্যাপারে আনসার ভিডিপির কেউ যোগাযোগ করেননি।
অভিযোগের বিষয়ে কক্সবাজার জেলা কমান্ড্যান্ট অম্লান জ্যোতি নাগ জানিয়েছেন- প্রশিক্ষণে নীতিমালা বহির্ভুত কোন কাজ করা হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বিষয়টি খোঁজ নেয়ার আশ্বাস দেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: