গাছের মগডালের শাখা-প্রশাখার সবুজ পাতার আড়ালে উঁকি দিচ্ছে সাদা-কালো বাহারি পাখি। শরতে বাতাসের দোলায় ডানার ঝাপটানি দিয়ে আকাশে পেজা তুলোর মেঘপুঞ্জের মত ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ছে অসংখ্য পাখি।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাছ বাজারের কাছে সুবিশাল কড়ই গাছে শামুকখোল পাখির অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে। খাদ্য ও নিরাপদ আবাসস্থলের নিশ্চয়তা পেয়ে দূরদূরান্ত থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে আসা শামুকখোল এসে আশ্রয় নিয়েছে গাছটিতে। পাখির কলকাকলিতে মুখরিত গোটা এলাকা।
শামুকখোল দেখতে বকের মতো। তবে অনেক বড়। গায়ের রং ধূসর সাদা। তবে বাসা বাধার সময় শরীর একদম সাদা হয়ে যায়। লেজ ও পাখার শেষভাগ কালো রঙের। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে শামুকখোল পাখির এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত হলেও বর্তমানে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। আবাসস্থল, খাবার ও নিরাপত্তা থাকলে এরা স্থায়ীভাবে বসবাস করে।
গাছে শামুক খোল পাখি সংসার পেতে নিরাপদ প্রজননের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করছে। এমন নিরাপদ প্রজননের অনূকুল পরিবেশ পেয়ে দিন দিন বাড়ছে পাখির সংখ্যা। বিভিন্ন জলাশয় থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে এসব পাখি। এরা শামুক খেতে খুব ভালোবাসে। শামুক পেলে ঠোঁট দিয়ে শামুকের খোল ভাঙে, তারপর সেটা ওপরে তুলে আকাশের দিকে মুখ করে গিলে ফেলে। এ জন্য এর নাম শামুকখোল। তবে এরা শুধু শামুকই খায় না খাল-বিলের ছোট ছোট শামুক-ঝিনুক, ছোট মাছ, আর ফসলের মাঠের পোকা-মাকড় খেয়ে জীবন বাঁচায় এই পাখি। ঝাঁক বেধে শামুকখোলের খাবার শিকার করা এবং দল বেধে উড়ে চলা এখানকার প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে।
বাংলাদেশে বিলুপ্তপ্রায় এ পাখিটির প্রায় ২০ বছর ধরে এ এলাকায় বিচরণ মানুষকেও মুগ্ধ করছে। ফলে স্থানীয় লোকজন এর অবাধ বিচরণে সচেতন রয়েছে।
ওই এলাকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, উপজেলার চারপাশে পাখিদের খাদ্য আহরণে রয়েছে ধাইজান নদী, চাড়ালকাটা নদী, বিল, মজা পুকুরসহ বিভিন্ন জলাশয়গুলোতে প্রচুর মাছ ও শামুক। তাই বছরের ৫/৬ মাস এত পাখির দেখা মেলে। এখানে কাউকে পাখি শিকার করতে দেওয়া হয় না। তবে উপজেলা প্রসাশনের সহযোগিতায় বাজার এলাকায় পাখি সংরক্ষণ কমিটির প্রয়োজন। প্রসাশনের পক্ষ থেকে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে এলাকায় পাখি শিকার নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ-এই মর্মে জেল-জরিমানা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে প্রচারসহ সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিলে পাখির অভয়ারণ্য বাড়বে মনে করেন তিনি।
নীলফামারী বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মোনায়েম বলেন, বড় শামুকখোলরা বেশী খাদ্য খায়। পাশাপাশি বসবাসের জন্য বেশ পুরাতন লম্বা গাছ এদের প্রথম পছন্দ। তাই প্রাচীন গাছগুলোতে এরা বাসা বাধে। এটি বিলুপ্ত প্রায় প্রাণী। খুবই কম দেখা মেলে এই পাখিটির। তাই এ পাখিটির যত্নসহ সার্বিক বিষয় দেখাশুনা করার জন্য সচেতনতাসহ স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করা হবে। যে কোন পাখি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাসহ মানুষের সকল ক্ষেত্রে উপকার করে। তাই শুধু শামুকখোলই নয় সবুজ প্রকৃতিতে বিচরণকারী সব পাখিরই অভয়ারণ্য থাকা উচিত।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: