বসতভিটা আছে ঘর নেই

ঘরের জন্য সরকারের কাছে আকুল আবেদন মাজেদার

রাকিব হাসান, মাদারীপুর | ২৮ আগষ্ট ২০২২, ০১:০৮

সংগৃহীত

মাজেদা বেগমের বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মধ্যে ঝাউদি এলাকায়। পঞ্চাশেরর্ধ্ব মাজেদা বেগম। দীর্ঘ বিশ বছর ক্যান্সার সাথে যুদ্ধ করেও হেরে গেছে তার স্বামী। রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন বিছানায়। স্বামী চিকিৎসার জন্য ফসলি জমিসহ নিজের বসত বাড়িটুকু ব্যয় করতে হয়েছিলো মাজেদার। তারপরেও বাচাতে পারেনি তার স্বামী হাফেজ মূন্সীকে।

এরপরে শুরু হয় ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের নিয়ে মানবতার জীবন। সংগ্রাম এক বিশাল পরিহাস বয়ে চলেছে তার জীবনে।স্বামীর মৃত্যুর পরে উপায়ন্তর না পেয়ে হাল ধরতে হয় সংসারের।শহরের এক আত্মীয় বাড়িতে একটু থাকার জায়গায় হয় মাজেদার। অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে এক ছেলে আর তিন মেয়েকে বড় করে তুলেন মাজেদা বেগম। ঝিয়ের কাজ করে কোন মতে এক মেয়েকে বিয়ে দিছে। এখন মাথার উপর দু-দুটি মেয়ে বিয়ের বয়সের।

এমনিতে বয়সের ভারে শরিরে রোগ নিয়ে পারছেনা মানুষের বাড়িতে কাজ করতে। একদিন কাজে গেলে, তিনদিন রোগে যন্ত্রণায় ভোগে।ছেলে কোন মতে উপার্যন করে তাতে কি আর চলে মাজেদার সংসার।মাজেদা বেগমের দাবি সরকার যদি তাকে একটা ঘর দিতো তাহলে তার স্বামীর বসত ভিটায় ঘর তুলে থাকতে পারতো।

মেয়েদের বিয়ের বয়স হয়েছে এক অর্থের অভাব তারপর আবার ঘরের অভাব।ঘর না থাকায় তেমন কোনো সমন্ধ আসেনা মেয়েদের দেখতে।সরকার যদি আমাকে একটা ঘর দেয় তাহলে আমি আমার মেয়ে দুটি বিয়ে দিতে পারব। মেয়ে দেখতে আসলেই পাত্রপক্ষরা বলে মেয়েদের ঘরবাড়ি নেই।এই মেয়ে নেওয়া যাবে না। এসকল কথাগুলো বলে আর হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে মাজেদা বেগম।

মাজেদা বেগমের ছেলে মাসুদ মুন্সী বলেন, দীর্ঘ ২০ বছর হল আমার বাবা ক্যান্সার রোগে মারা গেছে। তখন আমরা ছোট ছিলাম। আমার মা বাড়ি বাড়ি কাজ করে আমাদের বড় করছে। বাপের চিকিৎসার জন্য বসত বাড়িটা বিক্রি করতে হয়েছিলো। এখন আমাদের জমি আছে কিন্তু ঘর নাই। সরকার যদি আমাদের একটি ঘর দেয় তাহলে আমরা সেখানে ঘর তুলে থাকতে পারব। এবং আমার দুইটি বোন আছে এখনও তাদেরকে বিয়ে দিতে পারিনি টাকার অভাবে। পরের বাড়ির থাকার জন্য কোন সম্বন্ধ আসে না। আমাদের ঘরের অভাব তাই সরকারের কাছে জোর দাবি সরকার যেন আমাদের একটি ঘর দেয়।

স্হানীয় বাসিন্দা রাসিদা বেগম বলেন, দীর্ঘ দিন হয়েছে মাজেদার জামাই মারা গেছে। আমরা নিজ চোখে দেখছি টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেননি। তারপরে সে কোন কিছু উপায় না পেয়ে তার বাড়ি টুকু বিক্রি করে দিয়েছে স্বামীর চিকিৎসার জন্য। এখন অন্যের বাড়িতে থাকে অনেক কষ্ট করে থাকে। তার দুটি সেনাডাঙ্গার মেয়ে আছে। ঘর না থাকার কারনে কোন সমন্ধ আসেনা। সরকার যদি তারে একটা ঘর দেয় তাহলে সে তার এই জমিতে ঘর উঠেছে থাকতে পারবে। সরকারের কাছে আমাদের জোর দাবি এই অসহায় মাজেদারে যেন একটি ঘর দেয়।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মফেজ মুন্সী বলেন মাজেদার স্বামী যখন ক্যানন্সারে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিল তখন আমরা স্থানীয়ভাবে তাকে কিছু সাহায্য সহযোগিতা করেছিলেন। কিন্তু আমরা গরীব মানুষ আমরা কিভাবে দিব তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি একটা দাবি সরকার যেন মাজেদাকে ঘর দেয়।

৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নেছার মুন্সি বলেন,দীর্ঘ বছর হলো মাজেদার স্বামী ক্যানন্সারে মারা গেছে। স্বামীর চিকিৎসার জন্য বসত ঘর ব্যয় করতে হয়েছিলো। তার জমি আছে কিন্তু ঘর নেই। সে ঘরের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করলে আমি তার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করব তাকে ঘর দেওয়ার জন্য।

মাদারীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাইনউদ্দীন বলেন,মাজেদা বেগম আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা আবেদন যাচাই-বাছাই করে দেখবো সে পাওয়ার যোগ্য কিনা যদি পাওয়ার যোগ্য হয় তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্যই তাকে ঘর প্রদান করা হবে।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: