‘আমারা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চরিত্রে দেখতে চাই’

আসিফ আজাদ সিয়াম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় | ২৩ আগষ্ট ২০২২, ০৩:২৬

সংগৃহীত

পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্রছাত্রী সম্মান এবং মর্যাদার সাথে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যত আইন-কানুন, বিধি নিষেধ আছে সেগুলো সকল শিক্ষার্থীর জন্য সমান ভাবে প্রয়োজ্য হবে। কিন্তু আমারা এর রেশ মাত্র এখানে দেখতে পাচ্ছি না। ছাত্রলীগের এক দল গুণ্ডাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে লালন করা হচ্ছে। লালন করার কথাটা বলবো এই জন্য যে যদি লালন নাই করা হতো তাহলে বছরের পর বছর ধরে তারা একই ধরনের নৈরাজ্য ও নিশ্বংসকর কর্মকাণ্ড তারা কিভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। কেনো প্রতি সপ্তাহে, প্রতি মাসে এই ধরনের জঘন্য ঘটনা আমাদের সংবাদ পত্রে দেখতে হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে সংবাদপেত্রে যেগুলো দেখতে পাচ্ছি এগুলোই কি সব?’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের নির্যাতন ও টাকা ছিনতাই সহ বিভিন্ন হলে আবাসিক শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক হয়রানি ও নিপীড়ন এবং শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে আয়েজিত এক মানবন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। সোমবার (২২ আগষ্ট) সকাল সাড়ে দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবনের সামনে ‘নিপীড়ন বিরোধী ছাত্র- শিক্ষক ঐক্য’ ব্যানারে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

অধ্যাপক নকীব আরো বলেন, ‘ভুক্তভোগীকে বলা হয়েছে তুমি যদি নির্যাতনের কথা প্রকাশ করো তাহলে আবরারের পরিণতি ভোগ করতে হবে। আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রকে যদি আবরারের পরিণতি ভোগ করতে হয় তাহলে প্রশাসন কি ভেবে দেখেছে তারা কোথায় থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারাটা কেমন হবে? পারবেন সামলাতে? এটা যদি চলতেই থাকে তবে সেরকম দিন আসবে। এবং সেরকম দিন আসলে এই সমস্ত কুলাঙ্গার যারা এগুলো দেখেও দেখছে না তাদের কিন্তু খুঁজেও পাওয়া যাবে না। তাই এর অবসান ঘটাতে যা ব্যাবস্থা নেয়ার তা আপনারা নিন’।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শামসুল ইসলামকে তিন ঘন্টা ধরে নির্যাতন করা হয়েছে। একজন সাধারন শিক্ষার্থীকে যদি এত দীর্ঘ সময় নির্যাতন করা হয় তাহলে সে ছেলে কথা বলার মত অবস্থায় থাকে না। এমনকি ছাত্রলীগ নেতা তাকে আবরারের ঘটানার উদাহরণ টেনে হত্যা করার হুমকিও দিয়েছিল। এই আগস্ট মাসে দাঁড়িয়ে গত ১০ দিন ধরে ছাত্রলীগের নিপীড়নের কথা শুনছি আর ভাবছি শিক্ষক হিসাবে কি করছি আমরা! দিনের পর দিন এই ক্যাম্পাসে এগুলো ঘটছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা ততক্ষণ নিরাপদ থাকে যতক্ষণ শিক্ষার্থীরা নিরাপদ থাকে। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ তারা যেনো খুব দ্রুত এই পরিস্থিতি গুলোর প্রত্যেকটি ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে ব্যাবস্থা গ্রহণ করেন।

আরবী বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, যারা প্রতিনিয়ত এরমকম অপরাধ করে বেড়াচ্ছে তারা ছাত্র নামে কলঙ্ক। এরা হায়না, এরা তান্ডবকারী, সন্ত্রাসী এদের কে ছাত্র পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে। একজন ছাত্র তার পড়ালেখার পাশাপাশি পরিবারের খরচ চালানোর জন্য কিছু আয় করার চেষ্টা করছে। এমন একজন ছাত্রের কাছে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেওয়ার তাকে ডেকে নিয়ে তিন ঘন্টা নির্যাতন করে। এই ছাত্রলীগ না পারে ছাত্রদের অধিকার আদায় করতে না পরে সংগঠন চালাতে। তার পারে শুধু ছাত্রদের অধিকার কেড়ে নিতে। এসময় তিনি বিগত দিনে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান।

সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, আজকে একজন ছাত্র সাহস করে নির্যাতনের কথা বলেছে তাই আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু এরকম অসংখ্য ঘটনা আছে যা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। আবরারের মতো হত্যার হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু এ সব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন দায়িত্বহীন বক্তব্য দিচ্ছে। দায়িত্বহীন কিছু শিক্ষকের দায়িত্বে অবহেলার কারণে ছাত্রদের কে নির্যাতিত হতে হচ্ছে।

মানবন্ধনে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানের সঞ্চালনায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: