সোনালী ব্যাংক কাণ্ড: আল-আমিরের ম্যানেজার ১০ দিনের রিমাণ্ডের আবেদন

গাইবান্ধা প্রতিনিধি | ১৩ আগষ্ট ২০২২, ১০:০৫

সংগৃহীত

গত মাসে ডাচ-বাংলা ব্যাংক গাইবান্ধা শাখার সোয়া তিন কোটি টাকার একটি চেক সঠিক অ্যাকাউন্টে না পাঠিয়ে অন্য একটি অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড গাইবান্ধা প্রধান শাখা। বিপুল পরিমাণ এই টাকা চলে যায় ঢাকার আল-আমির ইন্টারন্যাশনালে। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার আবু তাহেরকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমাণ্ড চেয়েছে গাইবান্ধা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আদালত রিমাণ্ড মঞ্জুর না করে শুনানির দিন ধার্য্য করেছেন।

গাইবান্ধা ডাচ-বাংলা ব্যাংক, পিবিআই ও সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ জুলাই গাইবান্ধা ডাচ-বাংলা ব্যাংক থেকে গাইবান্ধা সোনালী ব্যাংক প্রধান শাখার সিনিয়র অফিসার (ক্যাশ) বি.এস.এম. ফনি ভূষন বর্মনকে তিন কোটি ২৫ লাখ টাকার একটি চেক ও জমা ভাউচার দেওয়া হয়। সেসময় ফনি ভূষন বর্মন চেকটি দায়িত্বরত কমকর্তা শারমিন নাহারের কাছে সঠিকতা যাচাইয়ের (অথরাইজ) জন্য পাঠান। পরে কম্পিউটারে পোষ্টিং দেওয়ার সময় ঢাকার জনশক্তি রপ্তানীকারক সংস্থা আল-আমির ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চলে যায় সমুদয় টাকা। কিন্তু এই টাকা যাওয়ার কথা ছিল ঢাকার সোনালী ব্যাংকে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অ্যাকাউন্টে। এরপর গত ৪ আগষ্ট গাইবান্ধা সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার মো. জাহিদুল ইসলাম নিয়মিত তদারকি (রুটিন চেক) করার সময় ডাচ বাংলা ব্যাংকের টাকা ঢাকার আল-আমির ইন্টারন্যাশনালের অ্যাকাউন্টে চলে যাওয়ার বিষয়টি টের পান।

পরে ঢাকায় সোনালী ব্যাংক থেকে পিবিআইয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে ঢাকা ও গাইবান্ধা পিবিআইয়ের একদল পুলিশ গত সোমবার নোয়াখালী সদরের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে আবু তাহেরকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার ঢাকার এক বাসা থেকে ২০ লাখ টাকা ও বুধবার ঢাকায় স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আছে ১৫ লাখ টাকা এবং বাকী দুই কোটি ৮০ লাখ টাকা গত ১৭ জুলাই থেকে উত্তোলন করা হয় ও অন্যান্য অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়।

এ ঘটনার এক মাস চারদিন পর গত বুধবার রাতে সোনালী ব্যাংক গাইবান্ধা প্রধান কার্যালয়ের ম্যানেজার মো. জাহিদুল ইসলাম গাইবান্ধা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি তদন্তের জন্য গাইবান্ধা পিবিআইকে দেওয়া হয়।

গাইবান্ধা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক মো. আবদুস সবুর বলেন, সোনালী ব্যাংক যদি ঘটনা বুঝতে পারার সাথে সাথেই আইনের আশ্রয় নিতো, তাহলে পুরো টাকা তখনই উদ্ধার করা সম্ভব হতো। একমাত্র ব্যাংক কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই টাকাগুলো হাতছাড়া হয়ে গেছে। আমরা টাকা উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছি।

আল-আমির ইন্টারন্যাশনালের প্রকৃত মালিক মোহাম্মদ আমিনুল হক বিষয়টি স্বীকার করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস আলী বলেন, আবু তাহের হচ্ছেন ম্যানেজার। প্রতিষ্ঠানটির দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। মোহাম্মদ আমিনুল হকের খুবই বিশ্বস্ত হচ্ছেন আবু তাহের। এজন্য একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে ম্যানেজার আবু তাহেরের নামে। আবু তাহের আল-আমির ইন্টারন্যাশনালের ট্রাভেলস ব্যবসা দেখেন। আর মোহাম্মদ আমিনুল হক জনশক্তি রপ্তানীর ব্যবসা দেখেন। সে হিসেবে বলা যায় আবু তাহেরও স্বত্ত্বাধিকারী। সোনালী ব্যাংক থেকে যে টাকা গিয়েছে সেটি আবু তাহেরের অ্যাকাউন্ট।

ইলিয়াস আলী আরও বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে গাইবান্ধার অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. নজরুল ইসলামের আদালতে আবু তাহেরকে হাজির করে ১০ দিনের রিমাণ্ড চাওয়া হয়। কিন্তু আদালতের বিচারক রিমাণ্ড মঞ্জুর না করে আগামী রবিবার শুনানির দিন ধার্য করেছেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: