ডিজেলের ব্যবহার শূণ্যে নামিয়ে কৃষকের সেচ খরচ কমানোসহ নানা কারণে ২০১৪ সাল থেকে সারাদেশে স্থাপন করা হচ্ছে সৌর শক্তিচালিত সোলার ইরিগেশন পাম্প (এসআইপি)।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব এসআইপি স্থাপন করছে। এর সুফলও পাচ্ছে কৃষকরা।
কিন্তু গাইবান্ধায় এসব এসআইপিতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ না করায় বছরের আট মাসের বেশি সময় মাঠেই অপচয় হচ্ছে বিদ্যুৎ। এসব এসআইপি স্থাপনের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি করলে ও জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলে লোডশেডিংরোধসহ বহু সুবিধা পাবে কৃষকসহ সরকার ও জনগণ।
ইডকল ও কৃষি বিভাগসহ অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে ইডকলের অর্থায়নে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে (এসআইপি) প্রথম সেচ কাজ শুরু হয় দেশের ১০ জেলায়। এরপর ক্রমাগত এর পরিধি বাড়তে থাকে। এসব এসআইপি স্থাপনে ইডকল ছাড়াও আর্থিক সহযোগিতা করে থাকে সরকারের টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা)। এসআইপির ক্ষমতা ৩৯ কিলোওয়াট বা তদুর্দ্ধ পর্যন্ত হয়ে থাকে ও প্যানেলের ক্ষমতা ২০ বছর মেয়াদী।
বর্তমানে গাইবান্ধার সাত উপজেলায় বোরো ও আমন ধানের চাষাবাদ হলেও শুধুমাত্র বোরো ধানেই সেচ দিতে হয়। আমন ধানে তেমন একটা পানির প্রয়োজন পড়েনা। এসআইপি কর্মসূচির শুরু থেকেই গাইবান্ধায় তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত জেলার সাঘাটা ও সাদুল্লাপুরসহ অন্যান্য উপজেলায় বেশ কিছু এসআইপি স্থাপন করেছে এসডিআরএস, এটিইএস বাংলাদেশসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এসব এসআইপি স্থাপনের ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও গাইবান্ধার একটি এসআইপি থেকেও জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
এসআইপি বাস্তবায়নকারী একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তা জানান, এসআইপিগুলো থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কাছাকাছি জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের লাইন পর্যন্ত পৌঁছাতে হয় নেট মিটারিং সিস্টেমের মাধ্যমে।
এজন্য মিটার, ট্রান্সফরমার, তার, খুঁটি ও শ্রমিকের মজুরিসহ অন্যান্য ব্যয়বাবদ দূরত্বভেদে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় হবে। যা সহযোগি প্রতিষ্ঠানগুলো বহন করতে সম্মত হচ্ছেনা। এদিকে, ইডকলও এই ব্যয় বহন করছে না। ফলে জাতীয় গ্রিডেও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় মাঠের বিদ্যুৎ মাঠেই অপচয় হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, সারাদেশে স্থাপিত সব এসআইপি থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক পূরণ হবে বিধায় লোডশেডিং তেমন একটা থাকবে না। বেশি বেশি এসআইপি স্থাপনের ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর উপর চাপ হ্রাস পাবে এবং ডিজেল আমদানি কমবে ও এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি করতে হবেনা। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে সরকারের ভর্তুকি ব্যয়ও কমবে। বিশ্বে এসআইপির ব্যবহার যতো বেশি হবে পরিবেশও মারাত্মক ক্ষতির হাত থেকে ততোই রেহাই পাবে। ফলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে রক্ষা পাবে বিশ্ববাসী।
গাইবান্ধা শহরের এক ব্যবসায়ী নেতা ও জনপ্রতিনিধি বলেন, সোলার প্যানেলের মাধ্যমে মাঠেই বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে আবার মাঠেই অপচয় হচ্ছে। কিন্তু মানুষের কোন কাজে লাগছে না। এটা চরম হতাশাজনক। অথচ এসব বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে লোডশেডিং থেকে রেহাই পাওয়া যেতো। লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার ও শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পরিবেশও বিঘ্নিত হতো না। তাই যত দ্রুত সম্ভব এসব এসআইপি থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
এসডিআরএসের মতে, যদি অফ-সিজনে এই এসআইপিগুলো থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে অব্যবহৃত সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর পথ খুলে যাবে। আর এই পথকে আরও সুগম করতে ২০২৭ সালের মধ্যে সারাদেশে ১০ হাজার এসআইপি স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ইডকল। যা সত্যিই এক মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।
কৃষি কাজের জন্য বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সারাদেশে যে সেচ ব্যবস্থা চালু করেছে সেসবের প্রত্যেকটিতে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিবর্তে সোলার প্যানেল লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সেচ কাজ চালু রাখলে লোডশেডিং শূণ্যের কোঠায় নেমে যাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সেই সাথে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চাপ কমবে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেওয়া ভর্তুকির পরিমাণও কমবে। তাই অতিদ্রুত বরেন্দ্রর এসব সেচ পাম্পে সোলার প্যানেল লাগানোর জোড় দাবি সর্বস্তরের মানুষের।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: