কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের উজিরপুর ইউনিয়নের কুখ্যাত ভূমিদস্যু বাচ্চু মিয়ার নানামুখী অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ।
তার বিরুদ্ধে ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পাশের ভূমি মালিকের জায়গা জবরদখল করে সীমানা প্রাচীরসহ বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযুক্ত বাচ্চু মিয়া উপজেলার উজিরপুর ইউনিয়নের কোমারডোগা গ্রামের মৃত আলী আকবরের ছেলে এবং মিয়াবাজারস্থ শরীফ হার্ডওয়্যার নামীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগিদের অনেকেই বিক্ষুব্ধ হয়ে মুখ খুলতে শুরু করায় অভিযুক্ত বাচ্চু তাদেরকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ভূমিদস্যু বাচ্চু উপজেলার উজিরপুর ইউনিয়নের ঘাসিগ্রামের মরহুম আব্দুর রহমানের ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হারুন গংদের পৈতৃক সম্পত্তি ও পারিবারিক কবরস্থানের কিছু অংশ জোরপূর্বক দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ ও পারিবারিক কবরস্থানে সুয়ারেজ লাইন স্থাপন করেছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম্য শালিসে বসার পর সাবেক ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সিদ্ধান্তক্রমে কমপক্ষে চারবার দুইপক্ষের মনোনীত সিভিল কোর্ট আমিন দ্বারা পরিমাপের পর বাচ্চু তার খরিদকৃত ৮ শতক জমির অতিরিক্ত ভূমি দখল করেছে বলে প্রমাণিত হয়।
এ সময় অতিরিক্ত দখলকৃত জমি ছেড়ে দিতে গ্রাম্য আদালতের দেয়া সিদ্ধান্তের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে বিবাধমান জায়গায় আরেকটি ভবন নির্মাণ করতে থাকে। উপায়ান্তর না পেয়ে ভুক্তভোগিরা আদালতে ১৪৫ ধারায় মামলা দায়েরের পরে আদালত কাজ বন্ধ রাখার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে বাচ্চু জোরপূর্বক দ্বিতীয় ভবন নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাওয়ায় ভুক্তভোগি ইঞ্জিনিয়ার হারুন গং আদালত কর্তৃক জারিকৃত নিষেধাজ্ঞার কাগজপত্র দেখিয়ে বাচ্চুকে কাজ বন্ধ রাখতে বলে। এ সময় বাচ্চু মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে উল্টো ভূমির মালিক ইঞ্জিনিয়ার হারুন গংদের বিরুদ্ধে থানায় চাঁদাবাজির একটি মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাদেরকে হয়রানির অপচেষ্টা করলেও থানা পুলিশ বিষয়টির অধিকতর তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা না পাওয়ায় থানা মামলাটি গ্রহণ করেনি।
মামলা দিয়ে হয়রানির অপচেষ্টা করেই সে ক্ষান্ত হয়নি। বরং মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্যসমৃদ্ধ পোষ্ট ফেসবুকসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করে ইঞ্জিনিয়ার হারুন গংদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে তাদের মানহানী করে।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সোবহান এর ছোট ভাই ইলিয়াস হোসেনের আশ্রাফপুর এলাকার একটি জমির প্রায় ৩ শতক জায়গা দখল করে টিউবওয়েল ও মোটর পাম্প স্থাপন, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, মহাসড়ক সংলগ্ন চাঁন্দুল রাস্তার মাথা এলাকায় কোমারডোগা গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে আব্দুস সালাম ও আব্দুল হাই এর একটি জমির কিছু অংশ দখল করে ভবন নির্মাণ, মিয়াবাজার মানিকপুর রোডে বালিমুড়ি গ্রামের আব্দুর রশিদের খরিদা সম্পত্তির প্রায় ১ শতক জায়গা দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ, কোমারডোগা গ্রামের মরহুম তোফাজ্জল হোসেন মেম্বার ওরফে সুন্দর কালা মিয়া সর্দারের পরিবারের প্রায় ১০০ শতক জমি জোর দখল করে দীর্ঘদিন যাবৎ ভোগ করছে। খোঁজ নিলে ভূমি দস্যু বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে এমন অনেক অভিযোগ পাওয়া যাবে।
তার জমিনের সাথে লাগোয়া ভূমি মালিকগণ অতিষ্ঠ তার এহেন অত্যাচারে। অনেকেই তার বিরুদ্ধে গ্রাম্য আদালতে বিচার দিয়েও কোনো সুরাহা পায়নি। কেননা, সে একজন লেবাসধারী বকধার্মিক। ধার্মিকতার আড়ালেই সে এসব অপকর্ম করে বেড়ায়। মূলতঃ পাঞ্জাবী-টুপি, দাঁড়ি ও জায়নামাজকে সে মানুষ ঠকানোর মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। টাকার গরম আর লাঠির জোরে আইন আদালতকে হরহামেশা বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করতে সে সিদ্ধহস্ত। অবশ্য তার এহেন অত্যাচারের বিরুদ্ধে এখন অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছে।
ইউনিয়নবাসী কুখ্যাত এ ভূমিদস্যু ও অত্যাচারী বকধার্মিক বাচ্চু মিয়ার অত্যাচার থেকে পরিত্রাণ চায়। এজন্য স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সৃ-দৃষ্টি কামনা করছেন ভুক্তভোগিরাসহ ইউনিয়নের সচেতন মহল ও সাধারণ জনগণ।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগি ইঞ্জিনিয়ার হারুন বলেন, বাচ্চু আমাদের কিছু জায়গা দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে। উজিরপুর ইউপির সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে দুই পক্ষের মনোনীত সিভিলকোর্ট সার্ভেয়ার দ্বারা বিরোধপূর্ণ জমিটি চারবার পরিমাপ করা হয়।
বাচ্চু মিয়া শালিসি রায় প্রত্যাখান করে আমাদের নামে চাঁদাবাজির একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অপচেষ্টা করায় আমরা আদালতের দারস্ত হয়েছি। আদালত চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তমালিকা পালকে বিষয়টি তদন্তের ভার দিয়েছে। সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমি এ ভূমিদস্যু বাচ্চু মিয়ার বিচার প্রার্থনা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানাচ্ছি’।
এ ব্যাপারে জমি বিক্রেতা আশ্রাফপুর গ্রামের হাজী আলী নোয়াজ বলেন, আমি তার কাছে ৮ শতক জায়গা বিক্রি করেছি। এর বেশি জায়গা দখল করে থাকলে তা অবশ্যই পাশের ভূমি মালিকদের। এটার বিহীত হওয়া প্রয়োজন।
অভিযুক্ত বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘আমার বিল্ডিং এর ধোয়ামোছার পানি তাদের কবরস্থানে যায়। এটি আমি অস্বীকার করিনা। তারা আদালতে মামলা করেছে। বিষয়টি আদালতের মাধ্যমেই সমাধান হবে’।
এ ব্যাপারে উজিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক নায়িমুর রহমান মাছুম বলেন, ‘বাচ্চু মিয়ার সাথে ঘাসিগ্রামের হারুনদের জায়গা সংক্রান্ত ঝামেলায় সাবেক চেয়ারম্যানের আমলে দুই পক্ষের সার্ভেয়ার দ্বারা কয়েকবার বাচ্চুর জায়গাটি পরিমাপ করা হয়। সর্বশেষ আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই আরিফ হোসেনের সহযোগিতায় বিষয়টি নিয়ে থানায় বৈঠক হয়।
সেখানে জমিটি পুনরায় পরিমাপ করার সিদ্ধান্ত হয়। পরে উভয় পক্ষের মনোনীত সার্ভেয়ার দ্বারা জমিটি পরিমাপে দেখা গেছে বাচ্চু মিয়া তার বিল্ডিং এর দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশের ভূমি মালিক হারুনদের ৬০ সেন্ট জায়গা দখল করে নিয়েছে।
বাচ্চু মিয়া অত্যন্ত মিথ্যাবাদী ও অসামাজিক লোক। পরে বাচ্চু মিয়া গ্রাম আদালতের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করায় হারুন গং আদালতে মামলা দায়ের করে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: