চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণ ও একের পর এক খুনের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। তার সাথে ভয়াবহভাবে যুক্ত রয়েছে মাদক বিক্রির মহোৎসব ও কিশোরগ্যাংয়ের উৎপাত। জেলার থানাগুলোতে স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা অপরাধীদের বেপরোয়া করে তুলেছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগি ও সাধারণ মানুষের। দুই বছরের ভয়াবহ চিত্রের মধ্যে গত এক মাসে ১১টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে কয়েকটি হত্যাকান্ড অত্যন্ত নৃসংশ। ভুক্তভোগি অনেকেই হতাশ হয় যখন দেখে পুলিশের অসাধু কর্মকর্তার সাথে খোশ গল্পে মেতে থাকে চোরাইল তেল ব্যবসায়ি, চাঁদাবাজ, ভ’মিদূস্য, মাদক ব্যবসায়ি ও মাদক ব্যবসায়িদের শেল্টারদাতারা। মোটকথা আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বিগ্ন জেলার সাধারণ মানুষ।
নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজনের সাথে কথা বললে তারা জানান, পুরো জেলায় প্রধান দুই সমস্যা হচ্ছে মাদক ও কিশোরগ্যাং। এরমধ্যে সদর উপজেলায় কিশোরগ্যাংয়ের উৎপাত আতঙ্ক ছড়িয়েছে সর্বত্র। কিশোরগ্যাংয়ের উৎপাতে প্রতিনিয়ত অনাকাঙ্খিত ঘটনায় আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে মানুষ।
জুলাই মাস জুড়ে মায়ের বিরুদ্ধে সন্তানকে হত্যা, পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে কিশোরগ্যাং হামলায় লোমহর্ষক হত্যাকান্ডসহ পুরো মাসে একাধিক ঘটনায় ১১টি খুনের ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৬টি, সোনারগাঁয়ে ২টি, আড়াইহাজারে ২টি ও রূপগঞ্জ একটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত তথমতে, ১ জুলাই সোনারগাঁয়ে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে জুনু আক্তার নামে এক গৃহবধূকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ উঠে। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
৩ জুলাই আড়াইহাজারের উজান গোবিন্দপুর এলাকায় জুয়ার টাকার জোগার করতে গিয়ে মা ও ছেলেকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ঘাতক সাদিকুর রহমান সাদিকে আড়াইহাজারের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
৪ জুলাই ফতুল্লায় শারমিন নামের এক নারীর বিরুদ্ধে তার আড়াই বছরের শিশুকন্যাকে গলা টিপে হত্যার অভিযোগ উঠে।
৬ জুলাই আড়াইহাজারে আনোয়ারা নামে এক গৃহবধূকে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
২০ জুলাই রূপগঞ্জে এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড নামের একটি ডক ইয়ার্ডের পরিত্যক্ত ঘর থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ে এক তরুণীর (২২) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ইট দিয়ে তরুণীর মুখ থেঁতলে দেয়া হয়।
২৬ জুলাই ফতুল্লায় বোনকে মারধরের প্রতিবাদ করায় হাশেম মোল্লা (৫০) নামের এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে ভগ্নিপতি। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই জামাল হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেছেন। অভিযুক্ত আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
৭ জুলাই সিদ্ধিরগঞ্জে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ‘কিশোর গ্যাংয়ের’ হামলায় ইমন (১৭) নামের এক কলেজ ছাত্র খুন হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুই কলেজ ছাত্র।
২৮ জুলাই সোনারগাঁয়ে নিখোঁজের দুদিন পর মাটি চাপা অবস্থায় হুমায়ারা (৮) নামের এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় হুমায়রার ভাবি বৈশাখী আক্তার নামের এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ।
২৮ জুলাই রাতে চর আলীরটেকের ধলেশ্বরী নদী থেকে হাত-পা বাঁধা ভাসমান অবস্থায় বশির ব্যাপারী (৩২) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ।
৩০ জুলাই রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফতুল্লার পশ্চিম দেওভোগ মাদ্রাসার শেষ মাথায় মিয়াপাড়ার মাঠে হোসিয়ারী শ্রমিক মেহেদী হাসান (২৩)কে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়।
মাসের শেষ দিন রাতে জেলা শহরে ঘটে ভয়াবহ ঘটনা। যেখানে আইনের রক্ষকদের আনাগোনা, সেই এলাকাতেই প্রকাশ্যে কিশোরগ্যাং এর হামলায় খুনের ঘটনা ঘটে। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) কার্যালয়ের সামনে কিশোরগ্যাং এর ছুরিকাঘাতে সজিব (২৫) নামে যুবককে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা কামাল হোসেন ২১ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলায় ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশের অপরাধ বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আমীর খসরু এই বিষয়ে বলেন, জেলা জুড়ে এ মাসে বিভিন্ন কারণে খুনের ঘটনা ঘটেছে। পারিবারিক কলহ এগুলোর মধ্যে প্রধান কারণ। পারিবারিক কলহের পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
দাম্পত্য কলহ, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ, বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্ক, যৌতুক, মাদকাসক্ত এসব বিষয় হত্যাকাণ্ড গুলোর প্রধান কারণ হিসেবে রয়েছে। এসকল ঘটনা বন্ধ করার জন্য আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে হবে। সচেতনতা তৈরী করতে হবে।
কিশোর গ্যাং এর উৎপাতের বিষয়ে বলেন, কিশোর গ্যাং আরাজকতা আগের তুলনায় কমেছে। আমরা কিশোর গ্যাং এর উৎপাত রোধে আবারো অভিযান শুরু করব।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: