ঠাকুরগাঁওয়ে বায়নামা দলিলমূলে ক্রেতারা জমিতে সাইনবোর্ড টাঙাতে গিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। সকলে এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
গত শনিবার (৩০ জুলাই) দুপুরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া হাটের দক্ষিণে অবস্থিত খেলার মাঠটিতে সাইনবোর্ড টাঙাতে গেলে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি থমথমে বিরাজ করছে।
সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে সরেজমিনে গেলে জানা যায়, পৈত্রিকসূত্রে প্রাপ্ত মনজু রহমান, হামিদুর রহমান, শফিকুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, নূরুল হুদা মোঃ কামরুজ্জামান, নুর আলম, বিলকিস বেগম ও সালেহা বেগমের কাছ থেকে গত ২৫ মে ও ৩০ জুন গড়েয়া ইউনিয়নের চোঙ্গাখাতা মৌজার, জেল নং- ৭৭, রকম- ডাঙ্গা, খতিয়ান নং- সি এস খতিয়ান-২১৭, খারিজ খতিয়ান নং- ৮৫৭,১১৮৫,১১৮৬, ১১৮৭, এসএ খতিয়ান - ২২৭, দাগ নং -৬৪৫, ১ একর ২৯ শতক হইতে ১ একর ০৮ শতক ও দাগ নং -৬৪৬, ১ একর ২৬ শতক হইতে ৫২ শতক। দুই দাগে সর্বমোট ১ একর ৬০ শতক জমি বায়নামা দলিল মূলে ক্রয় করেন স্বজল কুমার চৌধুরী ও ফখরুল ইসলাম জুয়েল। বায়নামা দলিল মূলে রেজিষ্ট্রিকৃত দলিল সম্পর্কিত স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় লিগ্যাল নোটিশও দেন ক্রেতা স্বজল কুমার চৌধুরী ও ফখরুল ইসলাম জুয়েল।
বায়নামা দলিলমূলে ক্রয়কৃত ক্রেতারা শনিবার দুপুরে তাদের জমিতে সাইবোর্ড টাঙাতে যান স্বজল কুমার চৌধুরী ও ফখরুল ইসলাম জুয়েল। এসময় ক্রয়কৃত জমিটি খেলার মাঠ দাবি করে একদল দুর্বৃৃত্ত ও তাদের লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে এসে স্বজল কুমার চৌধুরী ও ফখরুল ইসলাম জুয়েলকে মারপিট করে।
এদিকে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে আহত অবস্থায় স্বজল কুমার চৌধুরী ও তার লোকজনকে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতলে ভর্তি করানো হয়।
জমির বিক্রেতা নূরুল হুদা মো. কামরুজ্জামান বলেন, এই জমিটির মালিক আমরা পৈত্রিকসূত্রে। বাপ-দাদার আমল থেকে নিয়মিতভাবেই জমির খাজনা-খারিজ আমরা দিয়ে আসছি। এই জমির মালিক আমরা। যেহেতু জমির মালিক আমরা সেক্ষেত্রে জমিটি বিক্রয় করা হয়েছে স্বজল কুমার চৌধুরী ও ফখরুল ইসলাম জুয়েলের কাছে।
জমির ক্রেতা স্বজল কুমার চৌধুরী বলেন, আমরা টাকা দিয়ে জমিটি পৈত্রিকসূত্রে প্রাপ্ত মালিকদের কাছ থেকে কিনেছি। কেনা জমিতে সাইনবোর্ড টাঙাতে গেলে স্থানীয় দুর্বৃত্তরা ও ভূমিদস্যুরা আমাদের হামলা করে এবং মারপিট করে। আমরা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
তবে জমিতে সাইনবোর্ড টাঙাতে বাঁধা দেওয়া ব্যক্তিরা কেউ ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে তারা জানিয়েছেন, এই জমিটি দীর্ঘদিন যাবৎ খেলার মাঠ হিসেবে স্থানীয়রা ব্যবহার করে আসছে। বিভিন্ন সময় এই মাঠে খেলার টুর্ণামেন্ট ছাড়া হয়। তাই এই জমিটি খেলার মাঠ হিসেবেই থাকুক।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, ক্রয়কৃত জমিতে সাইনবোর্ড টাঙাতে গেলে ক্রেতা ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দেয়নি, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান বলেন, যে জমিতে ক্রেতারা সাইনবোর্ড টাঙাতে গিয়েছিল সেটি সরকারি খাস খতিয়ান ভুক্ত জমি নয়। সেটি ব্যক্তি মালিকানা জমি। যেহেতু ব্যক্তিগত মালিকানা জমি সেক্ষেত্রে মালিক যে কারও কাছে জমি ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে। এতে আমাদের কোন ধরনের বাঁধা নেই।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: