তিস্তার গর্ভে চলে যাচ্ছে ভিটেমাটি

রোকন মিয়া, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি | ২ আগষ্ট ২০২২, ০১:৩৭

সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নে তিস্তা নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে একটি গ্রাম। ভাঙন চলছে আরও দু'টি গ্রামে। এবছরই প্রায় পাঁচ শতাধিক বসতভিটা এরই মধ্যে চলে গেছে নদীগর্ভে। ভাঙ্গনে ঝুঁকিতে রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় মাদ্রাসা মসজিদ মন্দির ঈদগাহ মাঠ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙ্গনকবলিত জনগণ তাদের বাড়িটা অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। বসতভিটা হারিয়ে তাদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। কোথায় যাবেন কি খাবেন সে চিন্তায় তাদের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে।

বিলীন হয়ে যাওয়া সাতালস্কর গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেন, গোলাম হোসেন, আজিত, ওসমান গনি, মফিজল, নুরনবী, নজরুল, এরশাদ বলেন, ৭ দিনে ৮০ বসতভিটা ভাংছে। দুই বছরে বিলীন হয়ে গেলো গ্রামটা। কম করে হলেও হাজারখানেক বাড়িওয়ালার বাস ছিলো এখানে। সবারই বাড়ি ঘর ভেঙে গেছে। আমরা এখন খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাইতেছি। কোথায় যায় কী খায় সেই চিন্তায় রয়েছি। জমিজমা তো সব গিয়েছে, যদি বাড়িভিটা কোনা থাকিল হয় এটাতে কাজ করি খেলাম হয়। সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ আমাদের এখানে একটা স্থায়ী পদক্ষেপ নিয়ে আমাদেরকে শান্তিতে থাকার ব্যবস্থা করে দিক।

নদী ভাঙনের শিকার পশ্চিম বজরার রুস্তম আলী, আতাউর রহমান, মাইদুল ইসলাম, মমিনুল ইসলাম, সাইফুল আজগার মোস্তফা ফজিয়াল শাহিবুল বলেন গত তিন বছর ধরে এইখানে তিস্তা নদী খুব ভাঙছে। এই বছরে প্রায় ১০০ খানিক বাড়ি ভেঙে গেল। পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন ব্যবস্থা নেয় নাই। আবাদি জমি ঘরবাড়ি নদীতে যাওয়ায় খুব বিপদে আছি। একেবারে আশ্রয়হীন। মুচিরবাধ থেকে যদি টি বাঁধ পর্যন্ত একটি বাঁধ নির্মাণ করা যেত এবং কয়টি টি বাঁধ দেওয়া হতো তাহলে হয়তো এই এলাকাটা টিকে থাকত। আমরা খুব দুর্বিষহ অবস্থায় আছি।

সাদুয়া দামারহাট গ্রামের গোলাপ উদ্দিন ও শাহেদ আলী জানান, এই গ্রামের দুই শতাধিক বাড়িঘর ভেঙ্গে গেছে। যাই যেখানে পেয়েছে সেখানে আশ্রয় নিয়েছে।মসজিদের পাড়ে কিছু জিও ব্যাগ ফেলাইতেছে। কিন্তু তাতে কাজ হবে না। একটা ভালো ব্যবস্হা না নিলে আমরা যাবো কোথায়?

৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এনামুল হক বলেন আমার ওয়ার্ডের একটি ক্লিনিক, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ-মাদ্রাসা, মন্দিরসহ বসতভিটা, আবাদি জমি ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে। যদি এখানে একটা কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যেত বাঁধ নির্মাণ করা যেত তাহলে এই এলাকাটা রক্ষা করা যেত। এই ওয়ার্ডে প্রায় দুই আড়াই মাইল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে এখন যদি কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া হয় তাহলে বাকিটুকুও নদীগর্ভে চলে যাবে।

বজরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম সরদার বলেন, আমার ইউনিয়ন নদী ভাঙন কবলিত একটি ইউনিয়ন। প্রতি বছর ভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছে জনগণ। অনেক বলা কওয়ার পরেও এখানে ভাঙন রোধে তেমন কোন কাজ করা হয় নাই। অবহেলিত রয়ে গেছে। আমরা চাই এখানে নদী ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্হা নেয়া হোক। যাতে আমরা অন্তত শান্তিতে নিজের বাড়িতে ঘুমাইতে পারি।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: