৭ বছরে বদলে গেছে দাশিয়ার ছড়ার জীবন

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি | ১ আগষ্ট ২০২২, ০৫:৩২

সংগৃহীত

ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময়ের ৭ বছর আজ (৩১ জুলাই)।

১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে বিনিময় ঘটে ভারত ও বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহলের। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে এবং ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ভারতের মূল ভূখণ্ডে যুক্ত হয় এই দিনে। সমাপ্তি ঘটে ১৬২ ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের বন্দিদশা।

ছিটমহল বিনিময়ের পর থেকেই বঞ্চিত এ মানুষগুলোকে মূলধারায় যুক্ত করতে বিভিন্ন উন্নয়ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে হাসিনা সরকার। এ কয়েক বছরের মধ্যেই যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্যসহ সামাজিক নিরাপত্তার মতো নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের সবকিছুই পূরণ করেছে সরকার। দেশের অভ্যন্তরে অন্যান্য ছিটমহল গুলোর মতো উন্নয়ন ঘটেছে সবচেয়ে বড় কুড়িগ্রামের দাশিয়ারছড়া ছিটমহলেও। র্দীঘ ৭ বছরে বদলে গেছে প্রতিটি মানুষের জীবন। ছিটমহল এখন শুধুই ইতিহাস ও অতীত স্মৃতি। 

এ এলাকার মানুষদের জীবন মানের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বদলে গেছে জীবন ব্যবস্থা। ছিটমহলটির বাসিন্দারা পাচ্ছেন আধুনিক সব সুবিধা।প্রতিটি গ্রামে রয়েছে প্রশাস্ত পাকা রাস্তা। প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ। মসজিদ-মন্দির, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ, ডিজিটাল সেন্টার, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান সরকারের নানারকম উন্নয়নমূলক উদ্যোগে পরিণত হয়েছে এক নতুন জনপদ দাসিয়ারছড়া।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দাখিল মাদরাসা, দুটি কলেজ, ডিজিটাল আইসিটি ট্রেনিং সেন্টার, ২৭ দশমিক ৪০ কিলোমিটার পাকা সড়ক, কালীর হাটে কমিউনিটি রিসোর্স সেন্টার, পাঁচটি মসজিদ, একটি মন্দির, একটি ব্রিজ, বক্স কালভার্ট, ৩৫টি ইউড্রেন, কবরস্থান, শ্মশানঘাট, টিউবওয়েল, কাঁচাপাকা ল্যাট্রিন স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া বসতবাড়ি নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক, শতভাগ বিদ্যুতের সংযোগ, দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ।

শতভাগ সেচের আওতায় আনা হয়েছে কৃষি জমি। ৩হাজার ভিজিডিসহ শতভাগ বাড়িতে নিশ্চিত করা হয়েছে সুপেয় পানি ও সেনিটেশন ব্যবস্থা। এসব উন্নয়নে জীবনচিত্রের পরিবর্তন ঘটেছে এখানকার মানুষের। 

স্হানীয়রা জানান, ছিটমহল বিনিময়ের পর থেকেই তাদের জীবন মানের উন্নতি হয়েছে। শিক্ষা, চাকুরী সহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা গুলো তারা পাচ্ছেন। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার কারণে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়ছে। এসব সুযোগ সুবিধা একসময় তাদের কল্পনা ছিলো। কিন্তু এখন সেই কল্পনা বাস্তব হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত আন্তরিক প্রচেষ্টায় তা সম্ভব হয়েছে।

বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় বাংলাদেশ অংশের দাসিয়ারছড়া ইউনিটের সভাপতি আলতাফ হোসেন জানান ইতিমধ্যে ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। ৫৭কিমি নুতুন লাইনে সংযোগ দেয়া হয়েছে ২হাজারেরও বেশি পরিবারকে। পাকা করা হয়েছে ২৬ কিলোমিটার সড়ক। নির্মাণ হয়েছে ১টি ৩৬মিটারের ব্রিজসহ ৫ ব্রিজ ও বেশকিছু কালভার্ট। আমাদের এই কালিরহাট বাজারে একটি মসজিদ আছে। তার ঠিক ১০০ গজ দূরে একটি বড় মন্দির আছে। যে যার ধর্ম পালন করছে। আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। আমরা মুসলিম-হিন্দু মিলে অনেক ভালো আছি। বর্তমান সরকার আমাদের ভালো রেখেছে।

ফুলবাড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, সুমন দাস জানান ছিটমহলে ইতিমধ্যে সরকারের নেয়া পরিকল্পনা বেশীরভাগ বাস্তবায়িত হয়েছে। সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের মূল জণগোষ্ঠির সাথে তাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে যা যা করার দরকার তার পদক্ষেপ নেবে সরকার।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: