ইটনায় ২০০টি ফার্মেসীর মধ্যে ড্রাগ লাইসেন্স আছে মাত্র ০৯টির

মুজাহিদ সরকার, ইটনা (কিশোরগঞ্জ) | ৩১ জুলাই ২০২২, ০৫:২৯

সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার সদর ইউনিয়ন বাজারে ২৩-২৫টা ছাড়াও ০৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন বাজার ও মহল্লায় আনুমানিক দুই শতাধিক ওষুধের দোকান গড়ে উঠেছে। হাতেগোনা কয়েকটি দোকান ছাড়া বেশিরভাগ ওষুধের দোকানে লাইসেন্স, কেমিস্ট ও ফার্মাসিস্ট ছাড়াই চলছে রমরমা ওষুধ ব্যবসা। 

জানা যায়, প্রশাসনের কোন রকম নজরদারি না থাকায় আইনের তোয়াক্কা না করে সরকারি রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এন্টিবায়েটিক, ঘুমের ঔষুধসহ সব ধরনের ওষুধ বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া অবাধে বিক্রি হচ্ছে যৌন উত্তেজক টেবলেট ও মহিলাদের গর্ভপাতের ওষুধ। আবার অনেক ফার্মেসিতে ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি রোগের চিকিৎসাও দেয়া হচ্ছে। 

কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে ইটনা উপজেলার অতিরিক্ত দূরত্ব হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের চিকিৎসাসেবার অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে লাইসেন্সবিহীন এসব ফার্মেসী। আর এতে করে মারাত্বক স্বাস্থ্য ঝুঁকি মধ্যে পড়ছেন উপজেলার মানুষ। অন্যদিকে লাভবান হচ্ছে একদল ওষুধ ব্যবসায়ী। 

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর(কিশোরগঞ্জ) সূত্রে জানা যায়, ইটনা উপজেলায় সরকারিভাবে ড্রাগ লাইসেন্সধারী ফার্মেসী রয়েছে মোট ৭৩টি। এর মধ্যে অ্যালোপ্যাথিক ৬৯টি, হোমিওপ্যাথিক ০২টি এবং ইউনানি ০১টি এবং হোল সেল ১টি ফার্মেসী রয়েছে। উল্লেখ্য যে, ইটনা উপজেলায় এই ৭৩টি এর মধ্যে শুধুমাত্র ০৯টি অ্যালোপ্যাথিক ফার্মেসীর ড্রাগ লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছে। নবায়ন হয়েছে "গীতা ড্রাগ হাউজ,জয়িতা ফার্মেসী,মুসলিম মেডিকেল হল,সাথী ফার্মেসী, ইসলামিয়া ফার্মেসী,জয় মেডিসিন সেন্টার,উর্মি মেডিকেল হল, পুষ্পকলি ওষুধালয় এবং জননী মেডিসিন গার্ডেন। কিছু ফার্মেসী আছে ২০১০-১৪ইং সালের পর আর নবায়ন করা হয় নাই কিন্ত উপর মহল ম্যানেজ করে ওষুধের রমরমা ব্যবসা বাণিজ্য চলছে। 

সঠিক তথ্য নিশ্চিত করার জন্য, ওষুধ ফার্মেসীতে সাজানো রোগী পাঠায় রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ছারপত্র ছাড়াই। আমাদের সাজানো ক্রেতা র চাহিবার মাত্রই এন্টিবাইটিক ওষুধ বিক্রি করেন ফার্মেসীতে দায়িত্বরত লোকজন অথচ তাদের ফার্মাসিস্ট সার্টিফিকেট নাই। একই চিত্র উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের ফার্মেসীগুলোতেও।

দেখা যায়, আবার অনেক ফার্মেসীতে মানুষের ওষুধের পাশাপাশি গরু-ছাগল, হাঁস মুরগির ওষুধও বিক্রি করতে। এসব ঔষুধ সংরক্ষণও করা হয় যেনতেন ভাবে। 

গত ২৪ শে নভেম্বর ২০২০ইং নীলফামারীতে মডেল ফার্মেসী উদ্বোধনের সময় বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান বলে ছিলেন, ওষুধ ফার্মেসী স্থাপন করতে হলে ড্রাগ লাইসেন্স ও ফার্মাসিস্ট থাকতে হবে। ড্রাগ লাইসেন্স এবং ফার্মাসিস্ট ছাড়াই যেসব ফার্মেসী স্থাপন করা হয়েছে, তা আইনানুযায়ী অবৈধ। ওই সব অবৈধ ফার্মেসীতে কোনো ওষুধ কোম্পানি ওষুধ সরবরাহ করতে পারবে না। ড্রাগ লাইসেন্স ও ফার্মাসিস্ট ছাড়া যেসব ওষুধের দোকান চালু আছে, তা ক্রমান্বয়ে বন্ধ করে দেওয়া হবে। 

নামপ্রকাশ না করার শর্তে এক ফার্মেসীর মালিক বলেন, আমরা ইটনা সদরের সব থেকে বড় ওষুধের দোকান 'গীতা ড্রাগ হাউজ' থেকে ওষুধ কিনে এনে বিক্রি করি। আমার মতো ড্রাগ লাইসেন্সবিহীন বিভিন্ন ইউনিয়নের ওষুধের দোকানে সব ধরনের ওষুধ বিক্রি করে গীতা ড্রাগ হাউজ কিন্ত গীতা ড্রাগ হাউজের হোলসেল করার অনুমতি নেই। 

গীতা ড্রাগ হাউজের মালিক সনজিত রায় বলেন, আমার এখন থেকে যারা ওষুধ কিনে নেন তাদের বেশিরভাগ-ই গ্রামের মহল্লার ছোট ছোট ওষুধ ব্যবসায়ী। ড্রাগ লাইসেন্স আছে নাকি নাই এগুলো ওষুধ কোম্পানি থেকেও খোঁজ করেন না তবে আমরা ফার্মেসীর মালিকদের সাথে মিটিং করে বার বার বলছি ড্রাগ লাইসেন্স করার জন্য। 

উর্মি মেডিকেল হলের মালিক শাওন চন্দ্র দে বলেন, আমরা সরকারের নির্দেশ মেনে ট্যাক্স দিয়ে ড্রাগ লাইসেন্স নবায়ন করে বৈধ ভাবে ব্যবসা করছি। অনেকে ট্রেড লাইসেন্স ও ড্রাগ লাইসেন্স না থাকার পরও জমজমাট ব্যবসা করে যাচ্ছে। প্রশাসনের উচিত মোবাইল কোর্ট করে জরিমানা দিয়ে ছেড়ে না দিয়ে তাদের ড্রাগ লাইসেন্স গুলো দ্রুত করার জন্য সহযোগিতা করা। 

ইটনা উপজেলা ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও ওষুধ ব্যবসায়ী হায়দার আলী বলেন, আমরা সবাই কে বলবো ড্রাগ লাইসেন্স করার জন্য এবং যাদের ড্রাগ লাইসেন্স আছে তাদের নবায়ন করার জন্য। তিনি আরও বলেন, কিছুদিনের মধ্যে ওষুধ ব্যবসায়ীদের কে নিয়ে মিটিং করবো। 

ইটনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.প্রসূন সাহা বলেন, চিকিৎসক এর প্রেসক্রিপশন ব্যতীত অপ্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক, ব্যাথানাশক বড়ি এবং মানহীন ঔষধ মানব শরীরে কিডনি, লিভার সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি করে। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাফিসা আক্তার জানান, কিছু মাস আগে উপজেলার বাজারে ওষুধের দোকানগুলোতে উপজেলা প্রশাসন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন এবং বেশ কিছু দোকানকে নগত অর্থ জরিমানা করা হয়েছিল। ওষুধ ব্যবসায়ীদের সবাইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল ড্রাগ লাইসেন্স করার জন্য এবং যাদের ড্রাগ লাইসেন্স আছে কিন্ত নবায়ন করা হয়নি তাদের কে দ্রুত নবায়ন করার জন্য।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: