রাজশাহী জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরীর লুটপাট, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২৩ জুলাই) রাজশাহীর কাটাখালী বাজারে রাজশাহী জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়ন এর শ্রমিকরা এই বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন। সমাবেশে শ্রমিকদের নেতৃত্ব দেন শ্রমিক নেতা কোষাধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম জনি।
সমাবেশে বলা হয়, রাজশাহী জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী অসহায় শ্রমিকদের কোটি কোটি টাকা লুটপাট ও আত্মসাৎ করেছেন। আজ যারা তার অন্যায় অপকর্ম দেখেও আশেপাশে বসে আছেন, তাদের দিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণ হবে না। তারা নিজেদের কল্যাণে ব্যস্ত। সমাবেশ থেকে মাহাতাবের সকল অন্যায় অপকর্মে সকল শ্রমিক ভাইদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলেন আহ্বান জানানো হয়।
এ সময় শ্রমিকরা প্রশ্ন করেন, রাজশাহী জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের জমি বিক্রয়ের বাকি ৯০ লক্ষর অধিক টাকা গুলো কোথায়? রাজশাহী জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের নতুন সদস্য ভর্তি হওয়া ১ কোটির অধিক টাকাগুলো কোথায়? আঞ্চলিক কমিটির নামে গাড়ি প্রতি প্রতিদিন ২০ টাকা করে নেওয়া টাকাগুলো কোথায়? রাজশাহী জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের জেনারেল ফান্ডের প্রতিদিনের আদায়কৃত হাজার হাজার টাকাগুলো কোথায়? রাজশাহী জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের টাকাগুলো ব্যাংকে জমা করা হলো না কেন? কারণ অনিয়ম আর দূর্নীতিতে ছেয়ে গেছে রাজশাহী জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়ন। গুটিকয়েক তেলবাজকে সঙ্গে নিয়ে মাহাতাব হোসেন চৌধুরী অর্থ লুটপাটের মহাউৎসব করছেন।
বিক্ষোভ ও সমাবেশে শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। শ্রমিকদের স্থগিত করা কার্ডগুলো সচল করে দিতে হবে। শ্রমিকদের মৃত্যুর এককালীন টাকা পরিশোধ করে দিতে হবে। শ্রমিকদের কন্যাদায়ের টাকা পরিশোধ করে দিতে হবে। শ্রমিকদের ছেলেদের শিক্ষা ভাতার টাকা পরিশোধ করা, আদায়কারী ও কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করা। যার যে কাজ তাকে দিয়েই করানো। অফিসের নিয়ম নীতি মেনেই চালানো সহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন তারা।
উল্লেখ, মাহাতাব আলীর অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতনের ভয়ে এত বড় বড় দুর্নীতি হওয়া সত্ত্বেও শ্রমিকরা শুধু কর্ম হারানোর ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর, মুখ বুজে সয়ে যাচ্ছে শ্রমিকরা।
সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরীর অন্যায় অপকর্মের প্রতিবাদ করায়, জহুরুল ইসলাম জনিকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বহিষ্কার ঘোষণা করেন। যা সেচ্ছাচারীতা ছাড়া কিছুই না। ক্ষমতার অপব্যবহারে কি করা যাবে আর কি করা যায় না তা তিনি ভুলেই গেছেন।
কোষাধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম জনি বলেন, গত বছর ৮ জুন আমাদের কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিং হয়। কিছু কাগজপত্র স্বাক্ষর করে নেয়, আর ১৫ মাসের হিসাব চাওয়াকে কেন্দ্র করে আমাকে মারধর করা হয়। অদ্য ২০/০৬/২০২১ ইং তারিখে জমি বিক্রয়ের রেজুলেশন করার জন্য বেলা ১১ টায় একটি মিটিং হয়। সেই মিটিংয়ে আমি সড়ক দূর্ঘটনার কারণে উপস্থিত হতে পারিনি। গত ০৬/০৬/২০২২ ইং তারিখে আমি সাংবাদিক সম্মেলন করি। এরপর ০৭/০৬/২০২২ ইং তারিখে মাহাতাব আলী জরুরী সভা ডেকে কিছু শ্রমিক, সাংবাদিক, কর্মচারী নিয়ে আমার সদস্য ও কোষাধ্যক্ষ পদ বহিষ্কার করেছে মর্মে জানায়। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল কোষাধ্যক্ষ পদে উপ নির্বাচন দেওয়া কিন্তু মৃত মুকুল ও কালাম নেতা মারা যাওয়ার কারনে ৩ টি পদের উপ নির্বাচন দেওয়ার ঘোষণা দেন। অথচ ২৬/০৬/২০২২ ইং তারিখে বিশেষ সভা ডেকে সহ সভাপতি মোঃ রজব আলী সড়ক সম্পাদক পদে মৃত আবুল কালামের ছেলে মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জনিকে সড়ক সম্পাদক পদে ঘোষনা দেন মাহাতাব আলী। আমার কোষাধ্যক্ষ পদে ঘোষনা দিতে পারেনি। এখন মিথ্যা ষড়যন্ত্র করে ব্যাক ডেটে কার্যনির্বাহী মিটিং এ আমাকে অনুপস্থিত দেখিয়ে বহিষ্কার করার ষড়যন্ত্র করছে সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব আলী। মিথ্যা ষড়যন্ত্র আমাকে দমন করা যাবে না বলেও উল্লেখ করেন জনি।
তিনি আরও বলেন, অতিশীঘ্রয় মাননীয় মেয়র মহোদয়ের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। শ্রমিকদের অধিকার ফিরিয়ে দেন। এসময় শ্রমিকরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক মেয়র লিটনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এছাড়াও ভুক্তভোগী পরিবারের নিরাপত্তাও চান শ্রমিকরা।
এ বিষয়ে জানতে রাজশাহী জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরীকে ফোন দিলে তার ব্যবহৃত ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: