গাইবান্ধায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ বহু মানুষ ত্রাণের বাহিরে 

রওশন আলম পাপুল, গাইবান্ধা | ১৪ জুলাই ২০২২, ২২:৫৮

সংগৃহীত

গত মাসের জুনের শেষ সপ্তাহে গাইবান্ধার চার উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বন্যায় ২১ হাজার ৮৩৪ পরিবারের ৬১ হাজার ৫১৪ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

তবে ত্রাণের চাল পৌঁছেছে মাত্র আট হাজার পরিবারের কাছে। বাকী রয়েছে আরও ১৩ হাজার ৮৩৪ পরিবার। যা পাঁচ ভাগের তিন ভাগের বেশি পরিবার ত্রাণের বাহিরে থাকে। বন্যায় তারা খাদ্য সংকটে ভুগেছে ও ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। 

কিন্তু বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ এসব পরিবার সরকারের ত্রাণ সুবিধার আওতায় এলে তারা উপকৃত হতো। অথচ অনেক বেশি পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী মজুদ থাকার পরও তা সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে বরাদ্দ প্রদান করা হয়নি। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন থেকে প্রস্তুতকৃত বন্যার প্রতিদিনের তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে। 

গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ের গত ২৩ জুনের তথ্যানুযায়ী, বন্যায় গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ২৩টি ইউনিয়নের সর্বোচ্চ ২১ হাজার ৮৩৪ পরিবারের ৬১ হাজার ৫১৪ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সাঘাটা উপজেলায়, আট হাজার ৭৬০ পরিবারের ৩৫ হাজার ৪০ জন। 

সূত্রটি আরও জানায়, বন্যাকবলিতদের জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৬০৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২২ লাখ টাকা, শিশু খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকা, গো-খাদ্য ক্রয়ের জন্য ৩৭ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে বন্যাকবলিত চার উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৮০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৬ লাখ টাকা, শিশু খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, গো-খাদ্য ক্রয়ের জন্য ১৬ লাখ টাকা ও ২৫৫ প্যাকেট শুকনা খাবার। মজুদ থাকে ৫২৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১৬ লাখ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য তিন লাখ ৪৩ হাজার টাকা ও গো-খাদ্যের জন্য ২১ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। 

এতো বিপুল পরিমাণ চাল ও গো-খাদ্যের জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা মজুদ থাকলেও তা বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোয় বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। তবে বরাদ্দের নগদ টাকায় শুকনা খাবার, তাঁবু, পলিথিনসহ অন্যান্য উপকরণ কিনে দেওয়া হয় বন্যার্তদের মধ্যে। ত্রাণ পাওয়া প্রত্যেক বন্যাকবলিত পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। 

ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কামাল পাশা বলেন, বন্যায় ২ মেট্রিক টন চাল পেয়েছিলাম। তা নদীভাঙনের শিকার ২০০ পরিবারকে ১০ কেজি করে দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় এক হাজার ৫০০ পরিবারকে কোন ত্রাণ (চাল) দিতে পারিনি। অথচ আমার ইউনিয়নে আরও ত্রাণের চাল দরকার ছিল। চেয়েও তা পাইনি। 

সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, ১০ মেট্রিক টন চাল পেয়েছিলাম। তা বন্যাকবলিত এক হাজার পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া কিছু শুকনা খাবার, শিশু খাদ্য ও গো-খাদ্য পেয়েছি তা ধাপে ধাপে বিতরণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অনেক পরিবারের সদস্য দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজে-কর্মে থাকায় এখানকার মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো। তাই তাদের মধ্যে ত্রাণের চাহিদা নেই। 

এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এস. এম. ফয়েজ উদ্দিন বলেন, ইউএনওরা ত্রাণের চাহিদা দিলে তখন আমরা বরাদ্দ দিয়ে থাকি। বন্যায় যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের ত্রাণের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সেসময় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় কোন ইউএনওই আর ত্রাণের চাহিদা দেননি। 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: