গাইবান্ধার সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার দরিদ্র, নদী ভাঙ্গনের শিকার, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, নারী প্রধান পরিবার, মাংস ক্রয়ে অক্ষম ও অসহায় ৩ হাজার পরিবারকে কোরবানীর মাংস দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১১ জুলাই) সাঘাটা উপজেলার হাট ভরতখালী এলাকায় নূতনকুঁড়ি বিদ্যাপীঠ স্কুল মাঠে সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত উপকারভোগীদের মাঝে এই মাংস দেওয়া হয়।
প্রত্যেক পরিবারকে ২ কেজি করে মাংস দিয়েছে স্থানীয় বেসরকারী সংগঠন এসকেএস ফাউণ্ডেশন । ১০০টি গরু দিয়ে করা এই কোরবানী কর্মসূচির মাংস বিতরণে সহযোগিতা করে ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ। এর মধ্যে রয়েছে সাঘাটা উপজেলার ২১০০ পরিবার এবং ফুলছড়ি উপজেলার ৯০০ পরিবার।
সাঘাটা উপজেলার সাঘাটা, ভরতখালী, মুক্তিনগর, হলদিয়া, কামালেরপাড়া, জুমারবাড়ী ইউনিয়ন এবং ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া, ফুলছড়ি ও উদাখালী ইউনিয়নের মোট ৩ হাজার পরিবারকে ২ কেজি করে মাংস দেওয়া হয়।
জানা গেছে, ১১ বছরের বেশি সময় ধরে ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ এবং এসকেএস ফাউন্ডেশনে প্রতি বছরই ঈদ-উল-আজহার ২য় দিন এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে।
সকালে মাংস বিতরণের পূর্বে নূতনকুঁড়ি বিদ্যাপীঠ স্কুল মাঠে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এসকেএস ফাউণ্ডেশনের নির্বাহী প্রধান রাসেল আহম্মেদ লিটন, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন সুইট, ভরতখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফারুক হোসেন মন্ডল, ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ প্রতিনিধি মো. জাকির হোসেন।
আরও বক্তব্য রাখেন এসকেএস ফাউণ্ডেশনের সহকারী পরিচালক ফিল্ড অপারেশন (ডিপি) খন্দকার জাহিদ সরওয়ার ও সোশ্যাল এন্টার প্রাইজিংয়ের সমন্বয়কারী আবু সাঈদ সুমন প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাসেল আহম্মেদ লিটন বলেন, ‘এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি আয়োজন। কেননা এভাবে সবাই করেন না। এটিতে সহযোগিতা করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইসলামিক রিলিফ। এজন্য এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এই অঞ্চল দরিদ্র, উত্তরবঙ্গের এমন কয়েকটি জেলার মধ্যে গাইবান্ধাও একটি। এর মধ্যে সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলা সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া। তাই এই দুই উপজেলায় এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়।’
এ বিষয়ে ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি মো. জাকির হোসেন জানান, ‘১১ বছরের বেশি সময় ধরে ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ এসকেএস ফাউণ্ডেশনকে সাথে নিয়ে কোরবানী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে দরিদ্র, নদী ভাঙ্গনের শিকার, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, নারী প্রধান পরিবার, মাংস ক্রয়ে অক্ষম অসহায় পরিবারকে ২ কেজি করে মাংস দেওয়া হয়।
মাংস পেয়ে উচ্ছসিত সাঘাটা ইউনিয়নের গোবিন্দি গ্রামের রাহেলা বেগম (৭০) নিজের ভাষা বললেন, অভাব থাকায় ব্যাটারঘরে (ছেলে) সংসারোত মোর জাগা (জায়গা) হয় নাই। তাই অ্যালা মুই বেটির (মেয়ে) বাড়ীত থাকোম। গরুর গোশত বাদে অন্য কোন গোশত খাবার পামনা। কুন দিন যে গরুর গোশত খাচিনু, তাও মনে নাই। এত্তি থাকি গোশত পায়্যা খুবই উপকার হলো। এবার অ্যালা সগলে মিলে মজা করি খাবার পাম বাবা। মুক্তিনগর ইউনিয়নের পুটিমারী গ্রামের মো. খলিল মিয়া (৭০) বলেন, সাড়ে ছয়শো ট্যাকা কেজি গরুর গোশতের। গোশত কেনার সামর্থ নাই যে কিনি খামো। এত্তি থাকি যে এতা গুল্যা গোশত পানু সেই গোশত এবার ভালো করি খাবার পামো বাবা। এই গোশত গুল্যা পায়্যা উপকারই হলো।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: