সাবেক এমএনএ শহীদ এমএ গফুর এর হত্যার বিচার পাইকগাছা গণ-মানুষের প্রাণের দাবি

পাইকগাছা প্রতিনিধি | ৭ জুন ২০২২, ১১:০৬

সংগৃহীত

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সহচর, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাষা সৈনিক পাইকগাছা-কয়রার কৃতি সন্তান সাবেক এমএনএ শহীদ এমএ গফুরের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ম্যুরালে পুষ্প্যমাল্য অর্পণ, র‍্যালি, আলোচনা সভা ও মসজিদে মসজিদে দোয়া মাহফিল, এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণের মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে।

প্রতিবছর মতো মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সোমবার সকালে র‍্যালি শেষে পৌরসভার সরল শহীদ গফুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমএনএ শহীদ এমএ গফুরের ম্যুরালে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, মিলনায়নে আলোচনা সভা, যোহরবাদ লোনাপানি কেন্দ্র মসজিদে দোয়া মাহফিল এবং রাড়ুলী আল-হিরা এতিমখানায় খাবার বিতরণ করা হয়। এসকল অনুষ্ঠানে এমএ গফুরের জ্যৈষ্ঠ পুত্র পাইকগাছা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার ইকবাল মন্টু উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়।বর্তমান স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস অর্ধশত বছরের আর মহান ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ৭০ বছরের পেরিয়েছে অথচ দীর্ঘ এ সময়ে ইতিহাসের একদিকে যেমন ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি মেলেনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ভাষা সৈনিক শহীদ এমএ গফুরের। অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখার পরও এখনো পর্যন্ত মেলেনি স্বাধীনতা পদক। হত্যার বিচার হয়নি আজও। দেরিতে হলেও বর্তমান সরকারের সময়ে বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন শহীদ এম,এ গফুর এর হত্যার বিচার, ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি এবং স্বাধীনতা পদক পাবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেছেন শহীদ এমএ গফুরের পরিবার ও বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত এলাকাবাসী। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট এ মহান নেতার হত্যার বিচারের দাবিতে দক্ষিণ বঙ্গের মানুষরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। 

 এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বিদ্যুৎ রঞ্জন সাহা,ইন্সট্রাক্টর রিসোসসেন্টার মোঃ ঈমান উদ্দিন,সহকারী শিক্ষা অফিসার আসাদুজ্জামান, ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, প্যানেল মেয়র এসএম তৈয়বুর রহমান ও কবিতা রানী দাশ, সহকারী অধ্যাপক ময়নুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষক সেলিনা পারভিন, জগদীশ রায়, আরশাদ আলী বিশ্বাস প্রমূখ।উল্লেখ্য, খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার হরিনগর গ্রামে বিখ্যাত সানা বংশে আলী সানার ঘরে বাংলা ১৩৩২ সালের ২৬শে বৈশাখ জন্ম নেন বরেণ্য নেতা এম এ গফুর। মৌখালী খাসমহল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করেন।১৯৪৪ সালে আশাশুনির বুধহাটা স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করে পরবর্তী ভর্তি হন খুলনা বিএল কলেজে।যোগ দেন নয়া-সাংস্কৃতিক সংসদ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অঙ্গণে। রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রী দলের খুলনা জেলা সম্পাদক পদে অধিষ্টিত হোন। ভারত বিভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে ভাষা আন্দোলন শুরু হলে ভাষা সংগ্রাম কমিটির খুলনা জেলা আহ্বায়কের দায়িত্ব নিয়ে ছাত্র-যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে মাতৃভাষার জন্য সংগ্রাম করে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। উঠে আসেন শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বে।

 

১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠিত হলে জেলা সম্পাদকেরর দায়িত্ব পান।প্রবল গতিতে এগিয়ে যান রাজনৈতিক অঙ্গণে শীর্ষ পদে। নজর কেড়ে নেয় বাঙালী জাতির ধারক, বাহক ও পথপ্রদর্শক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের।

 

১৯৭০ সালের ৭ই ডিসেম্বর পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর মনোনীত হয়ে পাইকগাছা আশাশুনি (বর্তমান কয়রা পাইকগাছা) হতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা পাকিস্তান সরকারের যোগাযোগামন্ত্রী খান এ সবুরের বিরুদ্ধে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন।উক্ত সংসদীয় আসন টি বাংলাদেশের পাঁচটি আসনের মুসলিম লীগের বিজয়ী আসন হিসেবে থাকলেও অকল্পনীয়ভাবে এ অঞলের মানুষ এম এ গফুরকে জয়ী করে মেম্বর অফ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি (এমএনএ) পদে বসান। 

নির্বাচিত হয়ে তিনি বেড়িবাঁধ, রাস্তাঘাটসহ এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করেন। এরই মধ্যে আসে স্বাধীনতার ডাক। স্বাধীনতার একজন অন্যতম সংগঠক হিসেবে এলাকার ছাত্র-যুব সমাজকে নিয়ে গেরিলাযুদ্ধ শুরু করে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর অাগ্রাসনকে প্রতিহত করে বীর বিক্রমে যুদ্ধ করে এলাকাকে করেন হানাদারমুক্ত। এম এন এ (এমপি) পদে থাকার সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান পাইকগাছার আলমতলা নামক স্থানে বেড়িবাঁধ উদ্বোধন করতে এসে তাকে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিলেও তিনি মন্ত্রীত্ত্ব না নিয়ে এলাকার উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখেন।

এরপর আসে সেই নির্মম দিন, ১৯৭২ সালের ৫ জুন। এম এ গফুর নদীপথে নৌকাযোগে বিভিন্ন নদী ও খালের বাঁধ, বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করে তেরআলিয়া নদীর বাঁধ দেখে সন্ধ্যায় পাইকগাছার উদ্দেশে রওনা দেন। পাইকগাছার সাহাপাড়ায় পৌঁছালে, আগে থেকে ওত পেতে থাকা আততায়ীরা

 তাকে লক্ষ করে গুলিবর্ষণ করে। স্বাধীনতার মাত্র ছয় মাসের মাথায় পরাজিত ঘাতকদের বুলেটের আঘাতে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

বন্ধ হয়ে যায় এলাকার সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড। অভিভাবকহীন হয়ে পড়েন দক্ষিণবঙ্গের হাজার হাজার মানুষ। এ ঘটনায় তার সঙ্গী চাঁদখালীর রিয়াজউদ্দিন ও হড্ডার কামাল হোসেনও শহীদ হন। এ ঘটনায় ওই সময় ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তী সময় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে এই হত্যাকান্ডের আর বিচার হয়নি। মামলাটি চলে যায় হিমাগারে। বর্তমান সরকার মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে রায় কার্যকর করছে। কিন্তু এম এ গফুর হত্যার বিচার না হলে, দক্ষিণ অঞ্চল কলঙ্কমুক্ত হবে না বলে বিজ্ঞজনরা অভিমত দিয়েছেন। এ ব্যাপারে এম এ গফুরের জ্যৈষ্ঠ পুত্র পাইকগাছা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ার ইকবাল মন্টু বলেন, আমার বাবা জাতির জনকের অত্যন্ত আস্থাভাজন ব্যক্তি ছিলেন। এলাকার উন্নয়নে তিনি জীবনবাজি রেখেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার বাবার হত্যার বিচার অবশ্যই করবেন সেই আশায় এখনো বুক বেঁধে আছি।

সাবেক এমএনএ শহীদ এম এ গফুর (পাইকগাছা-কয়রা -আশাশুনি) ৫০তম শাহাদাত বার্ষিকীতে আমরা এম এ গফুরের উত্তরাধিকার হিসেবে অবিলম্বে এই হত্যাকান্ডের বিচার করে রায় কার্যকর করে দক্ষিণ বঙ্গের মানুষের প্রাণের দাবি বাস্তবায়নে বর্তমান সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: