বান্দরবানে ছাত্রাবাস বন্ধ; পড়ালেখা বঞ্চিত ৪২ জন শিক্ষার্থীর

বান্দরবান প্রতিনিধি | ২ জুন ২০২২, ০২:৩৪

সংগৃহীত

 মহামারী করোনা নিয়ন্ত্রণের থাকার পর এখনো খুলেনি বান্দরবানে দুটি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপজাতীয় আবাসিক ছাত্রাবাস। দুই বছর পর করোনা নিয়ন্ত্রণ হওয়াতেই চলতি বছরের ২ মার্চ থেকে শুরু হয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ের ক্লাস। প্রতিনিয়ত ক্লাসে পাঠদান চললেও প্রত্যন্ত এলাকার থেকে পড়ুয়া ৪২জন শিক্ষার্থীর আবাসিক ছাত্রাবাস বন্ধ থাকায় পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে কেউ পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে পরিবারে হাল ধরছে আবার কেউ নিম্ন ক্লাসে গিয়ে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে। কেন দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবাসিক খুলছেন না সেটি প্রশ্ন শিক্ষার্থীর ও অভিভাবকের মনে।

জানা গেছে, বান্দরবান সদর উপজেলার বালাঘাটা উপজাতীয় আবাসিক ছাত্রাবাস করোনা পর থেকে এখনো পর্যন্ত খোলা হয়নি। কারণ কোন বরাদ্ধ না থাকায় এখনো বন্ধ হয়ে পড়ে আছে সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রাবাস। অন্যদিকে আলীকদম আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপজাতীয় আবাসিক ছাত্রাবাসের ও একই রুপ। সেখানে কোন বরাদ্ধ না দেওয়া কারণে বন্ধ হয়ে আছে দীর্ঘবছর। তাতে দুর্ভোগ ও পড়ালেখা থেকে বিছিন্ন হয়ে যাচ্ছে দুর-দুরান্ত থেকে পড়তে আসা সেসব শিক্ষার্থীদের।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবান পৌর শহরে বালাঘাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়মিত পাঠদান হলেও এখনো খুলেনি ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপজাতীয় আবাসিক ছাত্রাবাস। এতে দুর্গম এলাকার থেকে ৫ম শ্রেনীর পড়ুয়া ১৮ জন শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের আসেনি। অন্যদিকে একইভাবে আলীকদম আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের করোনা পর বিদ্যালয়েয় আসেনি ৫ম শ্রেনীর পড়ুয়া ২৪ জন শিক্ষার্থীর।প্রত্যন্ত এলাকার থেকে আসার শিক্ষার্থীদের একমাত্র সম্বল আবাসিক ছাত্রাবাস। সে ছাত্রাবাস না খোলাতেই পড়ালেখা ছেড়ে পরিবার কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছেন ৪২ জন ঐসব শিক্ষার্থীরা।

এব্যাপারে আলীকদম আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আপ্রুমং ও বালাঘাটা উপজাতীয় আবাসিক ছাত্রাবাসে তত্ত্বধায়ক মংক্যচিং মারমা জানিয়েছেন, করোনা পর থেকে আবাসিক হল বন্ধ। সে কারণে দুর- দুরান্ত ৪২ জন শিক্ষার্থীর আর বিদ্যালয়ে আসেনি। তবে আবাসিক খোলার ব্যপারে উর্ধতন কর্মকর্তা নিকট জানানো হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, করোনা নিয়ন্ত্রনের থাকার পর ও এখনো খুলেনি বান্দরবানে জেলার ২টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপজাতীয় আবাসিক ছাত্রাবাস । সে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত পাঠদান চললেও সেই প্রতিষ্ঠানে উপজাতীয় আবাসিক ছাত্রাবাস খুলে না দেওয়াতে ৪২ জন ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রাবাস বন্ধ থাকাতেই কেউ কেউ এখন লেখাপড়া বাদ দিয়েছে। আবার ও বই নিয়ে গিয়ে অন্য বিদ্যালয়ের নিম্ন ক্লাসে গিয়ে ভর্তি হয়েছেন। আবার কেউ কেউ শিক্ষার্থীর পড়ালেখা করতে না পেরে পরিবারের হাল ধরে মা-বাবার সাথে জুম চাষসহ নানান কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু কিছুদিন পর সে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা। তবে সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেন খুলে দেওয়া হচ্ছে নাহ ছাত্রাবাসটি। 

এব্যাপারে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানিয়েছেন, আবাসিক খুলে না দিলে সন্তাদের আর লেখা পড়া করতে পারবেন না। কারণ প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রাবাস। তাই সে গুরুত্বপূর্ণ ছাত্রাবাস বন্ধ থাকাতেই তাদের মতো জুম চাষ করেই বাকী জীবন অতিবাহিত করতে হবে বলে জানান শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা। 

বালাঘাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রনীর শিক্ষার্থী লাল হোম সাং বম বলেন, ছাত্রাবাস খুলে না দেওয়ার কারনে প্রতিদিন ৭ কিলোমিটার রাস্তা ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ের আসি। প্রতিদিন ১শত টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে কষ্ট করে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। আবাসিক খুলে দিলে খুব ভালো হতো।

রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা প্রফুমক পাড়া শিক্ষার্থী সাইনিয়া খুমী জানিয়েছেন, বান্দরবান শহরে বালাঘাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে উপজাতীয় আবাসিক ছাত্রাবাসে উঠে ছিলেন। হঠাৎ করোনা মহামারীর কারনে ছাত্রাবাসটি বন্ধ করে দিলে বাড়ীতে গিয়ে আর স্কুলে ফিরে আসেনি। বর্তমানে বাবা-মা"র সাথে জুমে কাজ করে যাচ্ছেন।

বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শফিউল আলম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে চাহিদা প্রেরণ করে আবাসিক ছাত্রাবাস দুটি খুলে দেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। মৌখিক ভাবে নির্দেশ দিলেও এখনো অধিদপ্তর থেকে কোন লিখিত নির্দেশ পায়নি। তবে লিখিত পেলে অতি দ্রুত আবাসিক ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এব্যপারে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনটি ধরেননি।

 

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: