হাতীবান্ধা ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ফেনসিডিল ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি | ১ জুন ২০২২, ০৪:০২

সংগৃহীত

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় প্রকাশ্য দিবালোকে রবিউল ইসলাম নামের এক গ্রাম পুলিশকে (চৌকিদার) মারধর করে উদ্ধারকৃত ভারতীয় নিষিদ্ধ মাদক দ্রব্য ফেন্সিডিল ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতা জাহেদুল ইসলাম জাহিদ ওরফে হাতকাঁটা জাহিদ ও তার ক্যাডার বাহিনীর বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় গুরুতর আহত গ্রাম পুলিশ রবিউল ইসলাম গত শুক্রবার (২৭ মে) রাতে চার জনের নাম উল্লেখ করে ও আরো অজ্ঞাত ৫-৭ জনের নামে হাতীবান্ধা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৬মে) দুপুরে উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের দক্ষিন জাওরানী এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। 

অভিযুক্তরা হলেন, উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের উত্তর জাওরানী এলাকার এহসান আলীর ছেলে ছাত্রলীগের ইউনিয়নের নেতা জাহেদুল ইসলাম জাহিদ, জাহিদের ভাই মামুন, একই এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে জুয়েল ও নরুল ইসলামের ছেলে রুহুল। এছাড়া জাহেদুল ইসলাম জাহিদ হাতীবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

ভুক্তভোগী রবিউল ইসলাম উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের মধ্যম কাদমা এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে। এছাড়া সে ভেলাগুড়ি ইউনিয়নে গ্রাম পুলিশ হিসেবে কর্মরত আছেন।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ছাত্রলীগ নেতা জাহেদুলের ভাই মামুন ও জুয়েল মোটর সাইকেলে করে বস্তা ভর্তি ফেন্সিডিল নিয়ে কালীগঞ্জের উদ্দ্যেশ্যে যাচ্ছিলেন। গ্রাম পুলিশ রবিউলের উপস্থিতি বুঝতে পেয়ে মামুন ও জুয়েল মোটরসাইকেলটি ফেলে রেখে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় গ্রাম পুলিশ স্থানীয়দের উপস্থিতিতে রবিউল মোটরসাইকেলে থাকা ব্যাগটি খুললে তার ভিতরে ভারতীয় নিষিদ্ধ মাদক ফেন্সিডিল দেখতে পেয়ে ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে ফোনে জানান। ইউ পি চেয়ারম্যান উদ্ধারকৃত মাদকগুলো ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন এমতাবস্থায় ছাত্রলীগ নেতা জাহিদ তার ভাই মামুন ও অভিযুক্ত তার ক্যাডার বাহিনী গ্রাম পুলিশ রবিউলের উপর হামলা চালিয়ে তাকে মারধর করে উদ্ধারকৃত ফেন্সিডিল ও মোটরসাইকেলটি ছিনিয়ে নিয়ে ছটকে পড়ে। পরে স্থানীয়রা ওই গ্রাম পুলিশকে হাতীবান্ধা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়।

এদিকে খোজ নিয়ে জানা গেছে, জাহেদুল ইসলাম জাহিদ চিহ্নিত একজন চোরাকারবারি। সে মাদক, গরু পাচার, নারী শিশু পাচারসহ সকল কারবার করে থাকে। সীমান্ত এলাকায় সব ধরনের অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে সে ও তার ক্যাডার বাহিনী জড়িত। ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় সেই পদের অপব্যবহার করে সব ধরনের অপকর্ম চালাচ্ছেন তিনি। তার বিষয়ে কেউ কোন কথা বলতে পারে না। কেউ তার বিষয়ে মুখ খুললে বিভিন্নভাবে তাকে মামলায় ফাঁসিয়ে দেয় এই জাহিদ। এলাকায় হাত কাঁটা জাহিদ নামে সে পরিচিত।

এ বিষয়ে গ্রাম পুলিশ রবিউল ইসলাম বলেন, জহিদ ও তার ভাই এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারি। আমি বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই এলাকায় যাচ্চিলাম এ সময় জাহিদের ভাই মামুন ও জুয়েল মোটরসাইকেল যোগে আসতেছিলো। আমাকে দেখেই তারা মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়। আমি স্থানীয়দের উপস্থিতিতে সেই মোটরসাইকেলে থাকা ব্যাগ থেকে ফেন্সিডিল উদ্ধার করে চেয়ারম্যানকে জানাই। এর কিছুক্ষন পর জাহিদ তার ভাই মামুন ও মাদক ব্যবসায়ীরা আমাকে মারধর করে উদ্ধারকৃত মোটরসাইকেল ও ফেন্সিডিলগুলো নিয়ে চলে যায়।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, বিষয়টি মিথ্যা বলে ফোনটি কেটে দেয়।

এ বিষয়ে ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মন্ডল বলেন, এ ঘটনায় গ্রাম পুলিশকে থানায় লিখিত অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফাহিম শাহরিয়ার খান জিহান বলেন, বিষয়টি জানা নেই। অভিযোগ পেলে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, গ্রাম পুলিশ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষটি তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: