বান্দরবানকে বলা হয় পর্যটনের স্বর্গ রাজ্য। স্বর্গ রাজ্য ভ্রমণ পিপাসুরা সুযোগ পেলে ছুটে আসেন নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখতে। আবার প্রাকৃতিক নগরী বান্দরবানকে পার্বত্য রূপের রানীও বলা হয়। দিগন্ত জোড়া সবুজ পাহাড় ও মেঘের লুকোচুরি খেলা দেখতে চ বান্দরবান এক অতুলনীয় স্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অবারিত সবুজের সমারোহ আর মেঘ ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে যার আছে সে বাংলাদেশের পাহাড়ী কন্যা বান্দরবান ঘুরে আসতে পারেন। আসুন জেনে নেই সহজে বান্দরবান যাওয়ার উপায়:
*ঢাকা থেকে বাসে করে বান্দরবান যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে বান্দরবানের দূরত্ব ৩২৬ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে বাসে করে প্রায় ৮ থেকে ১০ ঘন্টা সময় লাগতে পারে।ঢাকার আরামবাগ থেকে শ্যামলী, ঈগল, ইউনিক বাস সার্ভিস সরাসরি বান্দরবান যায়।সময় ভেদে বাড়ার তারতম্য ঘটতে পারে।
*ট্রেনে করে বান্দরবান যাওয়ার উপায়:
ঢাকা থেকে রেল পথে সরাসরি বান্দরবান যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই ট্রেন ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রথমে ঢাকা হতে চট্টগ্রাম এসে চট্টগ্রাম নগরীর বদ্দারহাট বাস টার্মিনাল হতে পূবালী বা পূর্বানী বাসে চড়ে জনপ্রতি ২২০ টাকা ভাড়ায় বান্দরবান যেতে পারেন। তাছাড়াও চট্রগ্রামের দামপাড়া বাস স্ট্যান্ড হতে জনপ্রতি ২০০ – ৩০০ টাকায় বান্দরবান যাওয়া যাবে।
*ঢাকার কমলাপুর রেলষ্টেশন হতে:
ঢাকার কমলাপুর রেলষ্টেশন হতে আন্তঃনগর সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, সুবর্ন এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী, তূর্ণা এক্সপ্রেস এবং মহানগর গোধূলী ট্রেন চট্টগ্রামের পথে চলাচল করে থাকে। আন্তঃনগর ট্রেন ছাড়াও ঢাকা হতে চট্টগ্রামগামী বেশকিছু মেইল ও এক্সপ্রেস ট্রেনও রয়েছে।
*চট্টগ্রাম হয়ে বান্দরবান:
দেশের যেকোন এলাকা থেকে বান্দরবান যাওয়ার জন্য প্রথমে চট্টগ্রাম যেতে হবে।সেখানের বহদ্দারহাট টার্মিনাল থেকে বাস-এ করে যেতে হবে বান্দরবান। বিভিন্ন বাস সার্ভিস আছে।প্রতি ৩০ মিনিট পরপর বাস ছেড়ে যায়।ভাড়া জনপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
*বান্দরবান গিয়ে যেখানে থাকবেন:
বান্দরবান সদরে বেশ কয়েকটি হোটেল রয়েছে। এগুলো হল- হোটেল ফোর স্টার, হোটেল গ্রিন হিল, হোটেল হিল বার্ড, হোটেল পূরবী, হোটেল প্লাজা ইত্যাদি। এছাড়া হোটেল থ্রি স্টার বান্দরবান বাসস্ট্যান্ডের পাশে অবস্থিত। নীলগিরির গাড়ি এই হোটেলের সামনে থেকে ছাড়ে। এই হোটেলের সুবিধা হল এখানের ৪ বেডের একটি ফ্ল্যাটে ৮ থেকে ১০ জন একসাথে থাকতে পারে।
*বান্দরবান গিয়ে যেখানে যেখানে ঘুরবেন:
নীলাচল ও শুভ্রনীলা....
বান্দরবান জেলা সদরের প্রবেশ মুখ টাইগার পাড়ার কাছাকাছি পাশাপাশি অবস্থিত এ পর্যটন কেন্দ্র দুটি। নীলাচল জেলা প্রশাসন ও শুভ্রনীলা বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই পর্যটন কেন্দ্র দুটি পরিচালিত হয় । নীলাচল-এর উচ্চতা প্রায় ১৭০০ ফুট। বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে এটা অবস্থিত। এ পাহাড়ের উপর নির্মিত এ দুটি পর্যটন কেন্দ্র থেকে পার্শ্ববর্তী এলাকার দৃশ্য দেখতে খুবই মনোরম।
মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র........
বান্দরবান শহরে ঢুকতে বান্দরবান কেরাণীহাট রাস্তার পাশেই পার্বত্য জেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় এটি অবস্থিত। পাহাড়ের খাদে বাঁধ নির্মাণ করে কৃত্রিম হ্রদের সৃষ্টি করা হয়েছে । বান্দরবান শহর থেকে এই কেন্দ্রটির দূরত্ব ৪ কিলোমিটার। বেড়াতে আসা পর্যটকদের চিত্ত বিনোদনের জন্য এখানে রয়েছে শিশুপার্ক, নৌকা ভ্রমনের সুবিধা, ঝুলন্ত সেতুর মাধ্যমে চলাচলের ব্যবস্থা এবং সাময়িক অবস্থানের জন্য একটি রেস্টহাউস। এছাড়া আকর্ষণীয় একটি চিড়িয়াখানা এই কেন্দ্রের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে বহুগুণ। বান্দরবান জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্ববধানে এটি পরিচালিত হয়।
নীলগিরি.…..
নীলগিরি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যটন কেন্দ্র। এর উচ্চতা প্রায় ৩ হাজার ফুট। এটি বান্দরবান জেলার ‘থানছি’ উপজেলায় অবস্থিত। বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্ব দিকে এই পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান। এই পর্বতের পাশেই রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত উপজাতী সম্প্রদায় ম্রো পল্লী। যাদের বিচিত্র সংস্কৃতি দেখার মত। বর্ষা মৌসুমে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র থেকে মেঘ ছোঁয়ার দূর্লভ সুযোগ রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে নীলগিরি থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। বান্দরবানের সবচেয়ে সুন্দর ও আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র এটি। যা সেনা তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এর পাশেই রয়েছে একটি সেনাক্যাম্প। বান্দরবান জেলা সদর থেকে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় অধিকাংশ পর্যটক দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসেন। বান্দরবান জিপ স্টেশন থেকে জিপ, ল্যান্ড রোভার, ল্যান্ড ক্রুজারসহ অন্যান্য হালকা গাড়িও ভাড়ায় পাওয়া যায়। নীলগিরি যাওয়ার পথে সেনা চেকপোস্টে পর্যটকদের নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হবে। বান্দরবান জেলা সদর থেকে সাধারণত বিকেল ৫ টার পর নীলগিরির উদ্দেশে কোন গাড়ি যেতে দেয়া হয় না। এছাড়া নিরিবিলিতে স্বপরিবারে কয়েকটা দিন কাটাতে এটি একটি আদর্শ জায়গা।
শৈল প্রপাত.....
বান্দরবান রুমা রাস্তার ৮ কিলোমিটার দূরে শৈলপ্রপাত অবস্থিত। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব সৃষ্টি। সারাক্ষণ ঝর্ণার হিমশীতল পানি এখানে বয়ে যাচ্ছে। এই ঝর্ণার পানিগুলো খুবই স্বচ্ছ। বর্ষাকালে এ ঝর্ণার দৃশ্য দেখা গেলেও ঝর্ণাতে নামা বেশ কঠিন। বছরের বেশিরভাগ সময় দেশী বিদেশী পর্যটকে ভরপুর থাকে। রাস্তার পাশেই শৈলপ্রপাতের অবস্থান হওয়ায় এখানে পর্যটকদের ভিড় বেশি দেখা যায়। এখানে দুর্গম পাহাড়ের কোল ঘেঁষা আদিবাসী বম সমপ্রদায়ের সংগ্রামী জীবন প্রত্যক্ষ করা যায়। বান্দরবান শহর থেকে চাঁদের গাড়ি কিংবা গাড়ি ও জিপ ভাড়া করে শৈলপ্রপাতে যাওয়া যায়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: