ফরিদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাড়িঘর ভাংচুর-লুটপাট : দুইপক্ষ মুচলেকা দিয়ে রেহাই

এহসান রানা, ফরিদপুর প্রতিনিধি | ১৬ এপ্রিল ২০২২, ০৪:৩৭

ছবিঃ সংগৃহীত

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায় শতাধিক বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১টা পর্যন্তু দফায় দফায় উপজেলার পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের পরমেশ্বরদী চরপাড়া, কাজীপাড়া ও চৌধুরীপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনাস্থল থেকে ৫ জনকে আটক করে। সংঘর্ষের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৪ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে বলে জানা যায়।

বৃহস্পতিবার বিকেলে এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে দুইপক্ষের লোকজন এলাকায় সংঘর্ষ ও গোলমাল করবে না মর্মে পুুলিশের কাছে মুচলেকা দিয়ে সংঘর্ষ স্থগিত করে রেহাই পেয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সৈয়দ মাসুদ হোসেন এবং পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান আ. মান্নান মাতুব্বরের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ আসছে। এলাকায় আধিপত্য বিরোধের জের ধরে বুধবার সন্ধ্যায় কুমার নদের পরমেশ্বরদী ব্রীজের উপর সৈয়দ মাসুদের সমর্থক ও চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বাকবিতন্ডাকারীদের মধ্যে থেকে ৫ জনকে আটক করে হেফাজতে নেয়। আটককৃতরা হলেন- পরমেশ্বরদী গ্রামের শারফিন, ময়েনদিয়া গ্রামের গিয়াসউদ্দিন, ময়েনদিয়া বেড়িবাঁধ এলাকার আতাহের, পার্শ্ববর্তী সালথা উপজেলার যদুনন্দি ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মোল্যার ছেলে রনি মোল্যাসহ ওই ইউনিয়নের খাড়দিয়া গ্রামের এনামুল শেখ। এ ঘটনার জের ধরে রাত ১টার দিকে পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের চরপাড়া, কাজীপাড়া ও চৌধুরীপাড়া গ্রামে মাসুদের সমর্থকদের প্রায় শতাধিক বাড়িঘরে ভাংচুর ও লুটপাট চালায় ইউপি চেয়ারম্যান মান্নান মাতুব্বরের সমর্থকেরা। খবর পেয়ে ডহরনগর ফাঁড়ি, বোয়ালমারী থানা এবং ফরিদপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ পরমেশ্বরদী গ্রামের সৈয়দ মাসুদের সমর্থক ৩ নম্বর ওয়ার্ড কৃষকলীগের সহসভাপতি জিল্লু মোল্যা বলেন, চেয়ারম্যান মান্নান মাতুব্বরের অনুগত জলিল মোল্যার নেতৃত্বে মান্নান মোল্যা, চুন্নু কাজী, নজরুল কাজী, সোলাইমানসহ অজ্ঞাতরা আমাদের দলীয় লোকজনের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। এমনকি গৃহপালিত পশু গরু, ছাগল, নগদ অর্থ, স্বর্ণসহ আমাদের প্রায় ৫০লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করেছে হামলাকারীরা।

পরমেশ্বরদী গ্রামের বাসিন্দা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের কর্মী সৈয়দ মাসুদ ঢাকায় অবস্থান করায় মোবাইল ফোনে জানান, ২০২১ সালের ২৩ জুলাই পরমেশ্বরদী গ্রামের শহীদুল ফকির ওরফে শহীদ হত্যা মামলায় চেয়ারম্যান আ. মান্নান মাতুবরের নামে চার্জশীট হওয়ায় ক্ষীপ্ত হয়ে ওই মামলার স্বাক্ষী এনায়েত শেখের বাড়িসহ শতাধিক বাড়িতে হামলা করে ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়েছে।

এ ব্যাপারে পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ. মান্নান বলেন, সালথার যদুনন্দি ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, ডহরনগর ফাঁড়ি ইনচার্জ মুক্তার হোসেন , মাসুদ পক্ষের মান্নান ফকির (টিন মান্নান) ও আমিসহ স্থানীয় গন্যমান্যদের উপস্থিতিতে এলাকায় গোলমাল হবে না মর্মে আপোষ মীমাংসা হয়েছে। পরবর্তীতে বসে ক্ষতিগ্রস্থদের অবস্থা বুঝে ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করা হবে।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার ডহরনগর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. মুক্তার হোসেন জানান, উত্তেজনার খবর পেয়ে বুধবার সন্ধ্যায় ৫জনকে পুলিশী হেফাজতে নেওয়া হয়। গভীর রাতে দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে মাসুদ পক্ষের লোকজনের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়। রাতেই মধুখালী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কর, বোয়ালমারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সালাহউদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মধুখালী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারের নির্দেশে বৃহস্পতিবার বিকেলে পরমেশ্বরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে মাসুদ পক্ষের মান্নান ফকির ও পরমেশ্বরদী ইউপি চেয়ারম্যান মান্নান মাতুব্বর এলাকায় আর কোন সংঘর্ষ ও গোলযোগ হবে না মর্মে মুচলেকা দেন। সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্থদের পরবর্তীতে পুনরায় বসে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে। পুলিশী হেফাজতে নেওয়া ৫জনকে ইউপি চেয়ারম্যানের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: