কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মধ্যস্থল দিয়ে বয়ে যাওয়া ধরলা নদী থেকে ইজারা ছাড়াই অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। প্রভাবশালীরা যে যার মত অবাধে বালু উত্তোলন করছে। এতে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। বাঁধ, ফসলি জমিসহ ঘরবাড়ি হুমকিতে পড়েছে। ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদরের ২নং হলোখানা ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ধরলা নদী থেকে ইজারা ছাড়াই অবৈধ ভাবে বাংটুরঘাট, মরাকাটা নদী, খইরুল্লাপুর, চন্দনপাট, লক্ষীকান্তঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে ধরলার তীরবর্তীতে ড্রেজার ও শ্যালো মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু তুলছেন। শুধু তাই নয়, ধরলা নদীর তীর থেকে এক্সভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক্টর দিয়ে আশপাশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। এতে ধরলার তীরে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বালু উত্তোলনের কারণে বিভিন্ন স্থানে ধসের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যেকোনও সময় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধসে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ধরলার তীরবর্তী বাসিন্দা আব্দুর রহমান খন্দকার, মজিবর রহমান, শাহাদাত আলী, মিথুন ও রিপন খন্দকারসহ কয়েকজন জানান, প্রভাবশালী মাটি ও বালু ব্যবসায়ীরা অনুরোধ সত্ত্বেও বালু ও মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছেন। সারা দিনরাত ট্রাক্টরে মাটি ও বালু পরিবহন করায় গ্রামীণ সড়কগুলো ধসে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। আবার বালু তোলার কারণে ধরলা নদীর তীরবর্তী ফসলি জমি ও বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়েছে।
তারা আরও বলেন, প্রভাবশালী বালু ও মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে অভিযোগ করে প্রতিকার মেলেনি। মাঝে মাঝে প্রশাসন থেকে অভিযান পরিচালনা করা হলেও কিছুদিন পর আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। এ অবস্থা বিরাজ করলে আগামী দু’তিন বছরের মধ্যে ধরলার পাশের ফসলি জমি, ভিটে ও বাড়িঘর ধসে নদগর্ভে বিলীন হবে।
ট্রাক্টর চালকরা জানায়, তারা প্রতি ট্রাক্টর ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা করে বালু কেনে। এরপর বিভিন্ন এলাকায় প্রতি ট্রাক্টর বালু ১০০০-১৪০০ টাকা দরে বিক্রি করে তারা। জানা যায়, প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫টি ট্রাক্টরে বালু পরিবহন করা হয়। প্রতিটি ট্রাক্টর প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৮ বার করে বালু নিয়ে যায়।
ভেরভেরী গ্রামের এক কৃষক জানায়, এখানে বালু উত্তোলনের ফলে আমাদের অনেক ফসলি জমি ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। হলোখানা ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম জানান, অবৈধ বালু উত্তোলন বিষয়ে আমাকে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মিজানুর রহমান জানান, হলোখানা ইউনিয়নে এর আগে কয়েকবার অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছিলাম। আবারও যদি অবৈধ বালু উত্তোলন করে থাকে আমার মোবাইল ফোনে এসএমএস এর মাধ্যমে ঠিকানা দেন ব্যবস্থা নেব।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের আশ্বাস দেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: