দিনাজপুরের ৫০ ইউনিয়নে পানির তীব্র সংকট

দিনাজপুর প্রতিনিধি | ২২ মার্চ ২০২২, ২১:০৫

পানি সংকট

দিনাজপুরের ৫০ ইউনিয়নে সুপেয় পানির তীব্র সংকট সুপেয় পানির তীব্র সংকটে নাজেহাল দিনাজপুরের ৫০ ইউনিয়নের অধিবাসী শুষ্ক মৌসুম যেন দিনাজপুরবাসীর জন্য বয়ে আনে সীমাহীন কষ্ট!

চৈত্র-বৈশাখ মাস এলেই জেলার অন্তত ৫০টি ইউনিয়নে দেখা দেয় সুপেয় পানির তীব্র সংকট। প্রতি বছর ভুক্তভোগী ইউনিয়নের এ সংখ্যা বাড়ছে। ইরি-বোরো ধান চাষ শুরু হলেই পানির চাহিদা বেড়ে যায়। তখন টিউবওয়েল থেকে সুপেয় পানি মেলে না। 

দিনাজপুরে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, খরা মৌসুমে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্থিতিতল ২৫ ফুটের নিচে নেমে গেলে টিউবওয়েলে পানি তোলা সম্ভব নয়। প্রতি বছরই স্থানভেদে পানির এই স্থিতিতল গড়ে প্রায় এক মিটার করে নেমে যাচ্ছে। জেলার ১০২টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ৫০টি ইউনিয়নে খরা মৌসুমে এ সমস্যা দেখা দেয়।

আরও জানা যায়, এ সমস্যা সমাধানে ২০২০ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জেলার ১০২টি ইউনিয়নে ৩ হাজার ১৫০টি টিউবওয়েল (তারাপাম্প) বসায়। একইভাবে ২০২১ সালে বসানো হয় ২ হাজার ৬৭৮টি টিউবওয়েল। চলতি বছরও টিউবওয়েল বসানোর প্রক্রিয়া চলমান।

দিনাজপুর চিরিরবন্দর উপজেলার ৭ নম্বর আউলিয়াপুকুর ইউনিয়নের মাঝিনা গ্রাম। গ্রামটির ঠিক দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বাগানপাড়া নামে একটি আদিবাসীপল্লি রয়েছে। ৩৬টি বাড়ি নিয়ে প্রায় দেড়শ লোকের বসবাস এই পল্লিতে। প্রতি বছরই ইরি-বোরো মৌসুম অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু করে জুন মাস পর্যন্ত এই পল্লির মানুষের মধ্যে থাকে পানির জন্য হাহাকার। অনেকেরই সকাল-সন্ধ্যায় প্রায় দেড় কিলোমিটার দূর থেকে খাবার পানি নিয়ে আসতে হয়।

পানির এ সমস্যা কৃষিতে সেচের ক্ষেত্রেও। কৃষকরা বলছেন, পানির স্থিতিতল নেমে যাওয়ায় ফসলি জমিতে সেচের অভাব ও সময় দুই-ই বেড়েছে। এতে একদিকে যেমন বাড়ছে উৎপাদন খরচ, অন্যদিকে সেচের অভাবে কমছে উৎপাদন।

মিনতি মুর্মু নামে এক গৃহিণী বলেন, চৈত্র মাসে যখন ইরি-বোরো ধানের আবাদ হয় তখন আমাদের পানির কষ্ট বেড়ে যায়। চারদিকে ডিপ (গভীর নলকূপ) চলে, আর আমরা পানি পাই না। এখানে সরকার থেকে একটা টিউবওয়েল দিয়েছে, তাতেও পানি ওঠে অনেক দেরিতে। তাই অনেক দূর থেকে পানি আনতে হয়।

একই এলাকার বিউটি মুর্মু নামে এক গৃহিণী বলেন, আমাদের এখানে পানির খুব কষ্ট। আবাদি জমিতে পানি বেশি লাগে। তাই আমরা পানি পাই না। ফ্লাগুন-চৈত্র মাসে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এ এন নাইমূল এহসান গণমাধ্যমকে বলেন, বিভিন্ন কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্থিতিতল নেমে যাচ্ছে। প্রতি বছরই স্থানভেদে পানির এই স্থিতিতল গড়ে প্রায় এক মিটার করে নামছে। এর মধ্যে বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তন, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাব, ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর অধিক নির্ভরতা এবং ভূ-উপরস্থ পানির স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণ রয়েছে। পানির এমন সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার টিউবওয়েল বসানো, নদী খননসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।

 

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: