১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত কুয়েট বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ার নির্দেশ

সময় ট্রিবিউন | ৪ ডিসেম্বর ২০২১, ০২:০৩

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-ফাইল ছবি

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি শুক্রবার বিকাল চারটায় মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

কুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে কুয়েট প্রশাসনিক ভবনে সিন্ডিকেট বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে উপাচার্যসহ সিন্ডিকেট সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সিন্ডিকেট সভা শুরু হওয়ার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ না করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেয় ছাত্রলীগ। বৈঠককে কেন্দ্র করে আগে থেকেই ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

পরে বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীদের আজ বিকেল ৪টা মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কাজী সাজ্জাদ হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।

এর আগে, গত মঙ্গলবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক  ও লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক সেলিম হোসেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অভিযোগ উঠেছে, সেদিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের লাঞ্ছনা ও অপদস্থের শিকার হওয়ার পর তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন।

এ সংক্রান্ত একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তায় ড. সেলিম হোসেনের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছেন এবং তাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক চলছে। পরে ছাত্রলীগ কর্মীরা ওই শিক্ষককে অনুসরণ করে তড়িৎ প্রকৌশল ভবনে শিক্ষকের ব্যক্তিগত কক্ষে প্রবেশ করেন। প্রায় আধা ঘণ্টা কক্ষের ভেতর অবস্থান করে বেরিয়ে যান ছাত্রলীগ কর্মীরা। পরে অধ্যাপক সেলিম বের হয়ে বাসায় যান।

শিক্ষকের স্বজনদের ভাষ্য, বাসায় ফেরার পর ড. সেলিম বাথরুমে যান। বেলা আড়াইটার দিকে তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন, দীর্ঘ সময় হলেও সেলিম হোসেন বের হচ্ছেন না। দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় কুয়েট প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। তবে ওই কমিটির ২ সদস্য তদন্ত করতে অপারগতার কথা জানান। উপাচার্য অধ্যাপক কাজী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, 'তদন্ত কমিটির ২ সদস্যের অপারগতার পর প্রশাসন নতুন সিদ্ধান্ত নেয়নি।'

সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের খাদ্য ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে কয়েক দিন ধরে ছাত্রলীগ নেতারা প্রভোস্ট ড. সেলিম হোসেনকে চাপ সৃষ্টি করছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে ছাত্রলীগ নেতারা ওই শিক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং হুমকি দেন। ড. সেলিম এতে প্রচণ্ড মানসিক আঘাত পান। ধারণা করা হচ্ছে, এর জেরেই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে বুধবার উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করেন শিক্ষার্থীরা। তারা পাঁচ দফা দাবি জানান। পাশাপাশি ঘটনার তদন্ত ও বিচার দাবিতে কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন শিক্ষকরা।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেটের জরুরি সভা ডাকা হয়। কিন্তু, কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সেই সভা শেষ হয়।

এর আগে, গতকাল দুপুর সাড়ে ১১টায় অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। সেখানে প্রায় ১৫০ জন শিক্ষক কালো ব্যাজ ধারণ করেন।

সমাবেশ শেষে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে স্মারকলিপি দেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: