পবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের সমস্যা ও সংকটে ভরসার নাম রেজোয়ানা হিমেল

পবিপ্রবি প্রতিনিধি | ১ ডিসেম্বর ২০২১, ০৭:৫৫

ছবিঃ সংগৃহীত

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যায়নরত ছাত্রী কিংবা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সমস্যা, সংকট বা প্রয়োজনে একটি অন্যতম নাম রেজোয়ানা হিমেল।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে রেজোয়ানা হিমেল এর খ্যাতি থাকলেও পরোপকারে দলমত নির্বিশেষে সকলের জন্য সবার আগেই এগিয়ে আসেন রেজোয়ানা হিমেল। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান ভর্তি পরীক্ষায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অংশ নিতে আসা অসংখ্য ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী বিশেষ করে ছাত্রী ও তাদের নারী অভিভাবকদের থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা করে দিয়ে আলোচনায় এসেছেন রেজোয়ানা হিমেল। অনেক ভর্তিচ্ছু ছাত্রী গভীর রাতেও ক্যাম্পাসে এসে রেজোয়ানা হিমেল এর সহায়তা চেয়ে নিরাশ হতে হয়নি।

পবিপ্রবিতে চলমান ভর্তি পরীক্ষায় সুদূর নীলফামারী থেকে ভর্তি পরীক্ষায় দিতে মাকে সঙ্গে করে এসেছিলেন মারিয়া তাবাসসুম। দূরের যাত্রায় একদিন আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে গিয়ে গভীর রাত হয়ে যায় ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে। ক্যাম্পাসে পৌঁছালেও কোথায় আশ্রয় নিবেন, কোথায় রাত কাটাবেন কিছুই জানা ছিলো না মারিয়া তাবাসসুমের। নানা মাধ্যম হয়ে ত্রাতা হয়ে এগিয়ে আসেন রেজোয়ানা হিমেল। গভীর রাতেই ছাত্রী হলে আন্তরিক আতিথেয়তা পান মারিয়া ও তার মা।

সুদূর রাজশাহী থেকে একাই ভর্তি পরীক্ষা দিতে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন লিয়া মনি। কিন্তু পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দূরের কথা পটুয়াখালী শহরই তার অচেনা। লিয়া মনির বাবা নেই, মা অসুস্থ সঙ্গে নেই কোনো অভিভাবকও। এখানেও সাহায্যকারী আর আশ্রয়দানকারী হিসেবে এগিয়ে আসেন রেজোয়ানা হিমেল। থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন তিনি। পরদিন যথাসময়ে পরীক্ষায় অংশ নেন লিয়া মনি।

লিয়া মনি বলেন, রাজশাহী থেকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে পটুয়াখালীতে আমি ছিলাম অভিভাকহীন। একা মেয়ে হিসেবে আমার নিরাপদ থাকার কোনো জায়গা ছিলো না। ভর্তি পরীক্ষা অনলাইন গ্রুপে অনেকের কাছেই থাকার জন্য সাহায্য চেয়েছিলাম পরে হিমেল আপুর সহায়তা ও তত্ত্বাবধানে আমি থাকার সুযোগ পেয়েছি। আপুর কাছে আমি চির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।

একই রকম তথ্য জানান পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী আজিমাতুন্নেছা। আজিমাতুন্নেছা বলেন, ‘আমার একজন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী নারী অভিভাবকসহ রাত ৩টায় ক্যাম্পাসে পৌঁছে জামালপুর থেকে। তাদের থাকার কোনো ব্যবস্থা ছিলো না। রাত ৪ টায় হিমেল আপুকে কল দিলে তিনি তাৎক্ষণিক সাড়া দেন বলে তুই গেটে আসতে বল তাদের এবং নিজেই এগিয়ে এসে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও নারী অভিভাবককে থাকার সুব্যবস্থা করে দেন। আজিমাতুন্নেছা বলেন আমাদের সকল সমস্যার সমাধান হল হিমেল আপু, তার জন্য আমরা মেয়েরা পথ চলার শক্তি ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পাই।

এভাবে চলমান ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কয়েকশ ছাত্রী ও তাদের নারী অভিভাবকদের আতিথেয়তা দিয়েছেন রেজোয়ানা হিমেল। থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। সহস্র ছাত্রীকে ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কে নানা দিক নির্দেশনা ও সুপরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছেন। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহায়তার পাশাপাশি করোনাকালে স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ, রমজানে ইফতার ও সেহরি বিতরণ, ঈদে অসহায় পরিবারের মাঝে উপহারসামগ্রীসহ নানা ধরনের সহায়তা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমে সবার অগ্রভাগে থাকেন রেজোয়ানা হিমেল।

রেজোয়ানা হিমেল তিনি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যাংন্স এন্ড ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্টের এমবিএর শিক্ষার্থী। একজন মুজিব আদর্শের সৈনিক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই পড়ালেখার পাশাপাশি সহপাঠী সিনিয়র জুনিয়র শিক্ষার্থীদের সমস্যা ও সংকটে পাশে থাকার ব্রত নিয়েই নিয়েই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।

রেজোয়ানা হিমেল বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী। ছাত্রলীগের ত্যাগ, আদর্শ এবং সংগ্রামের ইতিহাস বুকে ধারণ করেই আমি সবার পাশে দাঁড়াই। চলমান ভর্তি পরীক্ষায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভর্তিচ্ছু ছাত্রীদের পাশে থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি'।

রেজোয়ানা হিমেল আরও বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীদের কল্যাণে ও এবং তাদের সমস্যা সংকটে পাশে থাকার সর্বাত্বক চেষ্ঠা করি। এছাড়া সিনিয়র জুনিয়র অনেকেই আমাকে এই ভর্তি পরীক্ষায় ও সেবামূলক কাজে সহায়তা করেন'।

রেজোয়ানা হিমেল বর্তমানে সভাপতি হিসেবে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল শাখা ছাত্রলীগ, পবিপ্রবি এর দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি নানা সেবামূলক ও সামাজিক সংগঠনেরও নেতৃত্ব প্রদান করছেন। তিনি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, পবিপ্রবি শাখার সভাপতি, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বরিশাল বিভাগীয় ডিবেটিং সোসাইটি (বিডিএস), সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা পবিপ্রবি, সভাপতি সমকাল সুহৃদ সমাবেশ পবিপ্রবি, ইউনিট লিডার গার্ল ইন রোভার স্কাউটস পবিপ্রবি, সাংগঠনিক সম্পাদক বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দুমকি উপজেলা,সহ-সমান্বয়ক বিডিক্লিন দুমকি উপজেলা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ পটুয়াখালী জেলার সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: