বিভাগীয় প্রধানের অপসারণ ও দ্রুত ক্লাস পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে উপাচার্যের আশ্বাসে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি সাময়িক প্রত্যাহার করলো বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এর আগে দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অর্থনীতি বিভাগের প্রধান জনি পারভিনের পদত্যাগসহ অতিদ্রুত ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে বিভাগের কলাপসিবল গেটে তালা দিয়ে প্রশাসন ভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় উপাচার্যের সাথে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল দেখা করলে উপাচার্য তাদের দাবি আদায়ের বিষয়ে আশ্বস্ত করেন এবং বিভাগের তালা খুলে দিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন।
আজকের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিলো, অর্থনীতি বিভাগ সেশনজটমুক্ত ও আইকিউএসি রেটিংয়ে প্রথম স্থানপ্রাপ্ত বিভাগ ছিল। কিন্তু জনি পারভীন বিভাগীয় প্রধান হওয়ার পর থেকে লাগাতার অনুপস্থিত থাকছেন। করোনাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে অনলাইনে ক্লাস চালু করলেও তিনি এক বছর সাত মাসেও কোনো একাডেমিক সভা আহ্বান এবং শিক্ষকদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করেননি। ফলে বিভাগের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সেশনজটে পড়েছে।
তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, জনি পারভীন অর্থনীতি বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিভাগের শিক্ষার্থীদের হয়রানি করছেন। এছাড়া আজকের মধ্যে তাকে বিভাগের পদ থেকে অপসারণ না করলে আন্দোলন অব্যাহত রাখার হুশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় উপাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ শেষে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলে থাকা সাদিয়া, সাহেদ ও রনি জানান, উপাচার্য তাদের দাবি শুনেছেন এবং অতিদ্রুত এসব সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। উপাচার্য জানতেন না যে অর্থনীতি বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা দীর্ঘ দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।
তারা জানান, উপাচার্য তাদের কাছে কিছুদিন সময় চেয়েছেন এর মধ্যে সমস্যা সমাধান করে দেবেন।
এ-বিষয়ে সাদিয়া বলেন, উপাচার্যের প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে। তার আশ্বাসে আমরা আন্দোলন সাময়িক প্রত্যাহার করে নিয়েছি। তবে অতিদ্রুত দাবি আদায় না হলে আমরা কঠোর সিদ্ধান্ত নিবো।
তবে এবিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদের কোন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে গত ১৮ নভেম্বর জনি পারভীনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে বিভাগের প্রধান থেকে অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগপত্র জমা দেন বিভাগের ৬ শিক্ষক।
অভিযোগপত্রে শিক্ষকরা উল্লেখ করেন, একাডেমিক সভায় অন্য শিক্ষককে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেন জনি পারভীন। কারো পরামর্শ না নিয়ে নিজের মতকে সবার ওপর চাপিয়ে দেন। বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সঙ্গে সবসময় অমানবিক আচরণ করেন, যা বিভাগের পরিবেশ ও শৃঙ্খলা নষ্ট করছে।
শিক্ষকরা আরও উল্লেখ করে বলেন, জনি পারভীন একাডেমিক কমিটির প্রথম সভায় বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সভার সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে শিক্ষকদের বাদ দিয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে উপাচার্যকে অন্তর্ভুক্ত করেন। কমিটি নিয়মের বহির্ভুত হওয়ায় বিভাগের অধ্যাপক ড. মোরশেদ হোসেন পদত্যাগ করেন। অনুপস্থিতির কারণে তার ডেস্কে বিভিন্ন আবেদনপত্র ও জরুরি কাগজপত্র আটকে থাকছে।
অভিযোগপত্রে বিভাগের অধ্যাপক ড. মোরশেদ হোসেন, সহকারী অধ্যাপক খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী অধ্যাপক শাফিউল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক বেলাল উদ্দীন ও প্রভাষক কাজী নেওয়াজ মোস্তফা সই করেন।
তবে এবিষয়ে জনী পারভীনের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: