ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে জাবিতে রমরমা শীট ব্যবসা

মান্নান, জাবি প্রতিনিধি | ২১ নভেম্বর ২০২১, ০০:০১

ছবিঃ সংগৃহীত

৯ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০২০- ২০২১ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষা। ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে শীট ও বই বিক্রির রমরমা ব্যবসা। গত কয়েকদিনে সরেজমিনে দেখা যায়, ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরি গেট) ও এর আশেপাশে, অমর একুশের পাদদেশে, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে, শহীদ মিনার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি জায়গায় অস্থায়ী শীট-বইয়ের দোকান বসেছে। এসব দোকানে বিভিন্ন ভর্তি গাইডের পাশাপাশি ৫/১০ পৃষ্ঠার শীট নিয়ে বসেছেন অনেকেই। এদের অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

এ সব বইয়ের উপরে লেখা আছে ১০০% কমনের নিশ্চয়তা সহ নানা প্রলোভন। দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য এসব লেখা থাকলেও এসব বই প্রস্তুত করা হয় মূলত বিভিন্ন ভর্তি গাইড থেকে হুবহু কপি করা গুটিকয়েক প্রশ্ন দিয়ে।

কুমিল্লা থেকে 'সি' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা মনিরুল ইসলাম এক দোকান থেকে এসব শীট কিনতে ছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “বিক্রেতা ভাইয়েরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শীক্ষার্থী। তারা বলছে পরীক্ষায় আসা অধিকাংশ প্রশ্নই এখান থেকে আসবে। তাই এই শীট বইটা ৭০ টাকায় কিনলাম।”

এসব বই প্রস্তুতে ১০-২০ টাকা ব্যয় হলেও ভর্তিচ্ছুদের কাছে নানা প্রলোভন দেখিয়ে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি করা হয়। চাহিদা বেড়ে গেলে টাকার অঙ্ক বেড়ে ১৫০ পর্যন্ত হয়ে যায়। আকর্ষণীয় উপস্থাপনা ও প্রলোভনে পড়ে ভর্তিচ্ছুরাও শেষ সময়ের প্রস্তুতি হিসেবে এসব শীট কে নির্ভরযোগ্য ভেবে কিনতে আগ্রহী হয়। তবে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে এসব শীট কিনে কোন লাভ হয়নি বলে জানান ভূক্তভোগীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪৯তম আবর্তনের এক শিক্ষার্থী সময়ট্রিবিউনকে বলেন, “গতবছর ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে চট্টগ্রাম থেকে রওনা দিয়েছিলাম। পরীক্ষার দিন ভোর ৬ টায় ক্যাম্পাসে পৌছে দেখি কয়েকজন ভাই শীট বিক্রি করছেন। পরীক্ষা ৯ টা থেকে হওয়ায় ৯০ টাকা দিয়ে ১৬ পৃষ্ঠার একটি শীট বই কিনেছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো এ বই থেকে পরীক্ষায় প্রশ্ন আসতে পারে। এ বই থেকে পরীক্ষায় ১/২ টি প্রশ্ন এসেছে তবে সেগুলো পূর্বে পড়া ছিলো।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শীট বিক্রেতা বলেন, “ভর্তিচ্ছুরা যাতে ভর্তি পরীক্ষার সময় স্বল্প সময়ে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সেরে নিতে পারেন সেজন্য ভর্তি পরীক্ষার আগে থেকে অনেকে এসব শীট তৈরি করেন। ভর্তিচ্ছুদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে এটা করেন তারা। তবে এক শ্রেণীর অর্থলোভী শিক্ষার্থী ভর্তিচ্ছুদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ব্যবসা করে।”

এদিকে ভর্তি পরীক্ষার সময় যেসব দোকানে এসব শীট বিক্রি করা হয় সেসব দোকান বসানোর অনুমোদন দেয়া হয় না বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান। এসব শীট বিক্রি বন্ধ করতে শিক্ষার্থীদের সহযোগীতা কামনা করে তিনি বলেন, “ভর্তি পরিক্ষার সময় আমাদের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যসহ এস্টেট অফিসারবৃন্দ এই বিষয়টি নজরদারী করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই এগুলোর সাথে জড়িত থাকায় সহজে এসকল শীট বিক্রি বন্ধ করা সম্ভব হয় না। তারপরও এসব শীট বিক্রি বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

এদিকে এসব শীট বই বিক্রি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শুরু হয়েছে জোর আলোচনা-সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটাকে অনেকেই আধুনিক ভিক্ষাবৃত্তি বলেও অভিহিত করেছেন।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: