দ্বিতীয় বারের মতো চলতি বছরের নভেম্বরের ২৮ তারিখ থেকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবসিক ১৮ টি হলের ছাত্রলীগের সম্মেলন। এ সম্মেলনের মাধ্যমেই উঠে আসবে হল ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব। আগামী দিনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব উঠে আসাসহ নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ ঢাবি ছাত্রলীগের এ সম্মেলন। হল সম্মেলনে এবার বিভিন্ন চমক থাকছে বলে জানান ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা। যোগ্য নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সার্বিক চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান শীর্ষ নেতারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হল সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীরা আছেন দৌড়ে। কেন্দ্রীয় দুই শার্ষ নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শীর্ষ নেতা ক্যাম্পাসে আসলেই হলের কর্মীদের নিয়ে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হচ্ছে মধুর ক্যান্টিনসহ সারা ক্যাম্পাস। নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন পদপ্রত্যাশীরা।
তবে কিভাবে হল সম্মেলন হবে? কোথায় হবে, সার্বিক বিষয়ে নেতাকর্মীদের রয়েছে বিভিন্ন প্রশ্ন!
সম্মেলনের উত্তাপ এখন বিশ্ববিদ্যলয় ক্যাম্পাসের সর্বত্র। গত ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর সর্বশেষ হল সম্মেলন হয়। এর ১৬ দিন পর ১৩ ডিসেম্বর এক বছরের জন্য ঢাবি ছাত্রলীগের ১৮টি হল শাখার কমিটি ঘোষণা করা হয়।
২০১৮ সালের ২৯ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনের মাধ্যমে ৩১ জুলাই সনজিত চন্দ্র দাস সভাপতি ও সাদ্দাম হোসেন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেও এতদিন হল কমিটি হয়নি। প্রায় পাঁচ বছর পর হতে যাচ্ছে এই হল সম্মেলন।
সম্মেলনের প্রস্তুতি বিষয়ে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম বলেন, ‘সম্মেলনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ সম্মেলন সফলতার সাথেই আমরা সম্পন্ন করতে চাচ্ছি।
‘কেমন নেতৃত্ব আসছে?’- এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাবি ছাত্রলীগের এ নেতা বলেন, ‘ত্যাগী, পরিচ্ছন্ন রাজনীতিতে বিশ্বাসী ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে এমন পদপ্রত্যাশীদের নেতৃত্বে আনতে চাই। এক্ষেত্রে যারা নিয়মিত ছাত্র, তাদের গুরুত্ব দেয়া হবে। ’
তবে সার্বিক বিষয়ে যথাসময়ে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান সাদ্দাম।
এদিকে হল সম্মেলনকে ঘিরে সব আবাসিক হলসহ পুরো ক্যাম্পাসেই উদ্দীপনা বিরাজ করছে। রাজনীতির আতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত মধুর ক্যান্টিনে সকাল থেকে রাত অবধি উপস্থিত হচ্ছেন হল কমিটিতে পদপ্রত্যাশীরা। সেখানে নেতাদের নজরে আসতে স্লোগান দিয়ে জানান দিচ্ছেন নিজেদের সরব উপস্থিতি। রাতের বেলা ক্যাম্পাসের টিএসসি, ডাস, শাহবাগ ও মুধর ক্যান্টিনেও নেতাদের সান্নিধ্যে আসার চেষ্টা করছেন তারা। এছাড়া ক্যাম্পাসে নিয়মিত শোডাউনও করছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন হলের একাধিক পদপ্রত্যাশী সময় ট্রিবিউন কে জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হল সম্মেলন প্রতিটি নেতাকর্মীর জন্য উৎসবের মতো; হল সম্মেলনকে ঘিরে আমাদের প্রত্যাশা প্রতিটি হলে যেনো বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মীরা নেতৃত্বে আসে। একই সাথে যারা দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে কাজ করে এমন মেধাবী শিক্ষার্থীবান্ধব নেতৃত্ব আমরা হল ছাত্রলীগে প্রত্যাশা করি।
সব হলের সম্মেলন একসাথে নাকি আলাদা আলাদা হবে? সম্মেলনের দিনে কি কমিটি দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, 'এ বিষয়ে এখনো আমরা চূড়ান্ত করি নি। একসাথে করা যায় নাকি প্রতিটি হলে আলাদা আলাদা করা যায় সেটা নিয়েও আমরা ভাবছি। পরিবেশ পরিস্থিতির দিক বিবেচনায় সম্মেলনের দিন সন্ধ্যা বা রাতে অথবা দু একদিন পর কমিটি ঘোষণা করা হবে।'
সম্মেলনের স্থানের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে লেখক বলেন, 'সব হল একসাথে যদি হয় তাহলে অপরাজেয় বাংলা। আর আলাদা আলাদা যদি হয় তহলে স্ব স্ব হলে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।'
নেতৃত্বের ক্ষেত্রে কোন জিনিসটা বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের এ শীর্ষ নেতা বলেন, 'শুধুমাত্র যারা দলীয় কর্মীদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখে তারা নয় বরং যারা সাধারণ শিক্ষার্থীসহ সকলকে নিয়ে কাজ করতে পারবে তাদেরকে আমরা বাছাই করবো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু সারাদেশের শিক্ষার্থীরা অবস্থান করে সেই হিসেবে নির্দিষ্ট কোন এলাকা যেন বেশি সুবিধা না পায় সে দিকটাও আমরা বিবেচনা করবো। হলের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে আমরা বাছাই করবো। এক্ষেত্রে এলাকা, গ্রুপিং ইত্যাদি বিষয় তেমন বিবেচনা করা হবে না।
হল সম্মেলনের সার্বিক বিষয়ে লেখক ভট্টাচার্য বলেন, দীর্ঘদিন করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও বন্ধ ছিল। বর্তমানে যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে সে হিসেবে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু ছাত্রলীগের নিউক্লিয়াস সে হিসেবে আমরা হল কমিটিতে যেন পরিচ্ছন্ন, ক্লিন ইমেজধারীরা আসতে পারে তারজন্য প্রচেষ্টা চালাবো। দলীয় কর্মী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে আশার প্রতিফলন সেই আশা বাস্তবায়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন লেখক ভট্টাচার্য।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: