ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়া পূরণ করে এইচএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে অংশগ্রহণ করে। তারপরেও কেন এতো কম শিক্ষার্থী পাশ করে? এ নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। অনেকেই বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের মান ভালো। অনেকেই বলছেন দেশের চলমান জিপিএ পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থা তা যথাযথ মানের শিক্ষা ব্যবস্থা নয়। তাই এইচএসসি ও এসএসসি তো ভালো ফলাফল করেও উত্তীর্ণ হতে পারে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে!
আজ (বুধবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ক' ইউনিটের ২০২০-২১ সেশনের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে দেখা যায় পাশের হার ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে ৯৪ হাজার ৫০৯ জন। পাশ করেছে ১০ হাজার ১৬৫ জন। সে হিসেবে ফেল করেছে ৮৪ হাজার ৩৪৪ জন। যা শতকারে হারে ৮৯ দশমিক ২৪ শতাংশ।
এদিকে গতকাল (মঙ্গলবার) 'খ' ইউনিটের ফলাফলে একই দৃশ্য দেখা যায়।পাসের হার ১৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আর পাশ করেছেন ৭ হাজার ১২ জন। ফেল করেছেন ৮৩ দশমিক ১১ শতাংশ শিক্ষার্থী। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে ৪১ হাজার ৫২৪ জন। পাশ করেছে সাত হাজার ১২ জন। আর ফেল করেছেন ৩৪ হাজার ৫১২ জন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন, প্রশ্ন তৈরির কাজে যত বেশি মানুষ যুক্ত থাকবে প্রশ্নের মান তত ভালো হবে।আবার বর্তমানে আমরা দেখি, আমাদের দেশে জিপিএ'র যে বাম্পার হয় এর যে মান ভালো না এটাও প্রমাণ হয়। গোল্ডেন ফাইভ পেয়েও অনেকে পাশ করতে পারে না। এ দৃষ্টিকোণ হিসেব করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নের মান ভালো। পাশাপাশি যদি বহির্বিশ্বের সাথে তুলনা করলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নের মান যথাযথ নয়। প্রশ্নের মানের ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা দরকার। যা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পারে না।
এছাড়া যারা প্রশ্ন তৈরি করেন তাদেরকে রাজনৈতিক দিক বিবেচনা করে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে উল্লেখ করেন কামরুল হাসান।
করোনাকালে শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট সময় পাওয়ার পরেও কেন এ অবস্থা? জানতে চাইলে কামরুল হাসান বলেন, করোনাকালের সময়টুকু ইফেক্টিভ ছিল না। কারোর জন্য না। কারো বাবার চাকরি চলে গেছে। কারো আত্মীয়-স্বজন মারা গেছে। বিভিন্ন দূর্ঘটনা ঘটেছে। যার কারণে সময়টাকে ইফেক্টিভ সময় ধরা যাচ্ছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ক' ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক মিহির লাল সাহা বলেন, আমাদের একটি শর্ত হলো এমসিকিউতে ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। সে শর্ত হিসেবে যারা এ ক্রাইটেরিয়া পূরণ করতে পারে তাদেরকে বাছাই করা হয়। এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় হলো আমরা আমাদের আসন সংখ্যার পাঁচগুন শিক্ষার্থীকে বাছাই করি। 'ক' ইউনিটে আসন সংখ্যা হলো ১৮১৫ টি। সে হিসেবে ৯০৭৫ জন হয়। কিন্তু যেনো কোন ধরনের সমস্যা না হয় সেজন্য ১২৭৫০ জন শিক্ষার্থীর খাতা আমরা মূল্যায়ন করেছি। সেখান থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে ১০ হাজার ১৬৫ জন। সবাইকে তো কোয়ালিফাই করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সবাই কোয়ালিফাই করে না বলে উল্লেখ করেন মিহির লাল।
'খ' ইউনিটের প্রধান সমন্বয়য় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এবারে যতজন শিক্ষার্থী পাশ করেছে ততজন আমরা ভর্তি করাতে পারবো না। ৬০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে না। পাশ করে ভর্তি হতে না পারাটা একটা কষ্টের বিষয়।
প্রশ্নের মান ভালো হওয়ায় এইচএসসি ও এসএসসিতে ভালো করা অনেক শিক্ষার্থীরা উত্তীর্ণ হতে পারে না বলে উল্লেখ করেন এ অধ্যাপক।
তিনি আরো বলেন, একসময় শুধু এমসিকিউ ছিলো। বর্তমান এমসিকিউ'র পাশাপাশি লিখিত রয়েছে যার কারণে পাশ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রতিযোগিতা রয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: