দাবি আদায় না হলে পহেলা নভেম্বর থেকে দুর্বার আন্দোলনের হুশিয়ারি

ঢাবি প্রতিনিধি | ২০ অক্টোবর ২০২১, ২১:৩৬

ছবিঃ সংগৃহীত

শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজামণ্ডপে হামলা ও বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে ৭ দফা দাবি থেকে সরে এসে তিন দফা দাবির ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। দাবি আদায় না হলে পহেলা নভেম্বর থেকে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার হুশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

আজ (বুধবার) বেলা ১২ টার সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিন দফা দাবি এবং ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সেই দাবি মেনে না নেওয়া হলে নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে সারাদেশে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষকে সাথে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার হুশিয়ার উচ্চারণ করেন শিক্ষার্থীরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদের সদ্য সাবেক সাহিত্য সম্পাদক জয়দীপ দত্ত।

জয়দীপ দত্ত বলেন, "মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িকতাকে ভিত্তি করে বাংলাদেশের পথ চলা। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পাকিস্তানি ভাবাধারাপুষ্ট মৌলবাদী ও উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বারবার বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, নির্যাতন, লুট, খুন এবং অরাজকতা
সৃষ্টি করেছে। পূর্বেও বহুবার এদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ অক্টোবর শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষ্টমীর দিন কুমিল্লা থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম, খুলনা, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি রংপুর, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসতবাড়ি ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে লুটপাট এবং পরবর্তীতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলা, লুট ও হত্যা প্রতিহত করতে প্রশাসন কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেনা। সারাদেশে এখনও বিভিন্ন জায়গায় হামলার পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা চলছে। ফলে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা অত্যন্ত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

তিনি আরো বলেন ''আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা গত ১৮ অক্টোবর শাহবাগ অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছি এবং প্রশাসনের কাছে আমাদের ৭ দফা দাবি উপস্থাপন করেছি। পরবর্তীতে ১৯ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছি এবং আমাদের দাবিগুলো আলোচনার প্রেক্ষিতে ৩ দফায় রূপান্তর করেছি।


দাবিগুলে হলো:

দোষীদের গ্রেফতার ও দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।

ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির, বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংস্কারে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং হামলার আহত ও নিহতদের পরিবারগুলোকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।

সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন এবং হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রদান করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জয়দীপ দত্ত আরো বলেন,"সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টাই করবে। তাই জনদুর্ভোগ কমাতে আমরা আপাতত আমাদের অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করছি। তবে দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। আমরা আশাবাদী হলেও আত্মতুষ্টিতে ভুগতে রাজি নই। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির প্রতি আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, যদি আবারও দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টি হয় তবে আমরা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আবারও রাজপথে নামবো এবং দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।"

সংবাদ সম্মেলনে জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী প্রনব শর্মা(বাঁধন), নীল অনির্বান, সুব্রত বিশ্বাস, শিপন সূত্রধর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: