ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হওয়া ঝুমন দাসের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার স্ত্রী সুইটি রানী বলেন,"আমি অসহায়,নিরুপায় হয়ে এখানে এসেছি।সকল সংগঠন ও গণমানুষের কাছে আমার একটাই আবেদন দ্রুত আমার স্বামীর মুক্তি দেয়া হোক।"
বুধবার বিকাল সাড়ে চারটায় ঝুমন দাসের মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত সাংস্কৃতিক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
ঝুমন দাসের স্ত্রী সুইটি রাণী বলেন," আমি এখানে আমার স্বামীর মুক্তি চাইতে এসেছি। আমার সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আমার স্বামী৷ আপনারা তো জানেন না আমি কিভাবে দিন কাটাচ্ছি! আমি কোনো কিছু আশা করছি না,আমি সরকারের কাছে শুধু একটাই আশা করছি যে,আমার স্বামীর নিঃশর্তভাবে মুক্তি দেয়া হোক। পরবর্তীতে আমি আর কোনো ঝামেলায় থাকতে চাই না। আমি আর নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকতে চাই না। আমি নিজেও নির্যাতিত, স্বামীর মুক্তির আন্দোলনের সময় হাত ভেঙে দিয়েছিলো। আমি অসহায়,নিরুপায় হয়ে এখানে এসেছি।' কথাগুলো বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
তিনি আরো বলেন,"আমাকে বলা হয়েছিলো আমার স্বামীকে নিরাপত্তার জন্য পুলিশী হেফাজতে নেয়া হচ্ছে। কিন্ত আমি এটা জানতাম না যে,আমার স্বামীর নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হবে। কী অপরাধে আমার স্বামী জেলে গেছে? কী জন্য আমার সাথে এই ধরনের অন্যায় বার বার হচ্ছে? সাত আবেদন করার পরও আমার স্বামীর জামিন মেলেনি। কিন্তু যারা অপরাধী তারা আমার সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি দিন দিন আমার মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলছি,কার কাছে কোন সময়ে কী বলব সেটাও আমার কাছে নেই। সকল সংগঠন ও গণমানুষের কাছে আমার একটাই আবেদন দ্রুত আমার স্বামীর মুক্তি দেয়া হোক।"
উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপনের সভাপতিত্বে এবং সহকারী সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমামের পরিচালনায় সমাবেশ বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম, সাংবাদিক একেএম শাহীন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সদস্য কাজল দেবনাথ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মাহমুদ, ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সহ-সভাপতি অনিক রায়, ঝুমন দাসের স্ত্রী সুইটি রাণী দাস প্রমুখ। লিখিত বার্তা পাঠিয়ে সংহতি জানিয়েছেন মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল।
সভাপতির বক্তব্যে জামশেদ আনোয়ার তপন বলেন, আমরা এই সমাবেশের মাধ্যমে সরকারের কাছে দাবি জানাবো, আপনারা ঝুমন দাসের মুক্তি দিন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করুন। এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে অন্যায়ভাবে কাউকে গ্রেফতার করা হবে না,কোনো সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হবে না,কিন্তু এখন পর্যন্ত ১৭৬জন সাংবাদিককে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের অপরাধ, তারা তাদের লেখনীর মাধ্যমে যারা দুর্নীতি করছে, লুটপাট করছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ, অন্যায় অপরাধ করছে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলছে। এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন জনগণকে নিরাপত্তা দেয় না। এই আইন লুটপাটকারীদের নিরাপত্তা দেয় । এই স্বাধীনতা,মৌলিক মানবাধিকার ও ৭২এর সংবিধানের পরিপন্থী। তাই এই আইন বাংলাদেশে থাকতে পারে না। আমরা অবিলম্বে এই বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
সমাবেশে গান পরিবেশন করেন চারণ শিল্পগোষ্ঠীর সদস্য বুলবুল, গণসংগীত পরিবেশন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও চারণ শিল্পীগোষ্ঠী। সেখানে নাটক ‘মোড়ল পুলিশিং’ ইন্ট্রোভাইজেশন (কোনো গান বা নাটকের কিছু শব্দ পরিবর্তন করে ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপনা) করে সাস্কৃতিক সংগঠন প্রাচ্যনাট। এছাড়া নাটক ‘রাতের রানি’ পরিবেশন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন বটতলা এবং ‘একটি সাহসী ফুল’ পরিবেশন করে থিয়েটার বায়ান্ন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: