কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কার কাজে আবারও বিতর্কিত সেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান

তাসফিক আবদুল্লাহ, কুবি প্রতিনিধিঃ | ৬ জুলাই ২০২১, ০৩:০৯

ছবিঃ সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) হলের সংস্কারমুলক কাজের দায়িত্ব পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে আগে থেকেই ব্যাপক সমালোচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরাইয়া এন্টারপ্রাইজ।বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি আবাসিক হল, টিচার'স ডর্মেটরি, একাডেমিক ভবন এবং প্রশাসনিক ভবনের যাবতীয় সংস্কার কাজ করবে এই প্রতিষ্ঠানটি।

এই সংস্কারমূলক কাজ করতে গিয়ে ইতোমধ্যে গত ২৭ জুন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের পাঁচ তলা থেকে পড়ে এক শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে টিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির অবহেলা ছিলো বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়াও সুরাইয়া এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে রয়েছে অনেক অভিযোগ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চসহ অন্যান্য লাইটিংয়ের কাজগুলোও একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছিল। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কিছু দিনের মধ্যে মুক্তমঞ্চে ফাটল দেখা দেয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে লাইটিং এর কাজে নিম্নমানের সামগ্রী এবং লাইট ব্যবহার করার অভিযোগ উঠে ফজল খানের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরাইয়া এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুবিতে সংস্কারমূলক কাজে নিয়োজিত শ্রমিকেরা কোনো ধরণের জীবনরক্ষাকারী সামগ্রী ছাড়াই কাজ করছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ছিল না কোন নজরদারী। শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে তাদেরকে জীবনরক্ষাকারী সামগ্রী দেওয়া হয় না।

সুরাইয়া এন্টারপ্রাইজের কাজের মান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ওসমান ফারুক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে লাইটিং এর উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় দুবছর আগে লাইটিং জন্য বিশাল পরিমাণ অর্থ খরচ করে ক্যাম্পাসে লাইটিং এর ব্যবস্থা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু ছয়মাস না যেতেই অধিকাংশ লাইটগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। কাজের মান অতিরিক্ত দূর্বল না হলে এতো কম সময়ের মধ্যে এই বেহাল দশা শিক্ষার্থীদের দেখতে হতো না। প্রশাসন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গুলোর নিন্মমানের কাজের দায় এড়াতে পারে না। প্রশাসনের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থের কথা চিন্তা করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গুলোকে জবাবদিহিতার সম্মুখীন করা।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সুরাইয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক ফজল খান বলেন, 'আমি আমার কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করেছি। কাজগুলো আমি ১ বছর আগে শেষ করেছি। কাজের মেয়াদ ১ বছর ছিল। বাকি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের। আমি আর কিছু বলতে পারব না।'

অভিযোগ থাকার পরও প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত না করে তৃতীয় বারের মতো কাজের দায়িত্ব সুরাইয়া এন্টারপ্রাইজকে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, কাজ শুরু করার আগে সুরাইয়া এন্টারপ্রাইজকে নিরাপত্তার বিষয়ে বলা হয়েছে। তারা তা মানেনি এই জন্য প্রশাসন তাদের শোকজ করবে। যথাযথ ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। বর্তমানে যেসকল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তাদের সবাইকে শ্রমিক নিরাপত্তার বিষয়ে চিঠি দেওয়া হবে।

'সুরাইয়া এন্টারপ্রাইজকে কালোতালিকা ভুক্ত করা হবে কিনা' জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার বলেন, কালোতালিকাভুক্ত করতে চাইলে আমাদের আইনের আশ্রয় নিতে হবে। টেন্ডারের বিষয়গুলো যথাযথ নিয়ম মেনে করা হয় এবং কম খরচে যে প্রতিষ্ঠান কাজ করতে পারবে তাকে কাজ দেওয়া হয়। এখন যেহেতু সুরাইয়া এন্টারপ্রাইজের কাজ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে ডিফল্ট ঘোষণা করবে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সিটি করপোরেশনকেও আমরা চিঠি দিব।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মীর শওকত হোসেন বলেন, অভিযোগ না দিলে আমার কিছু করার নেই। আপনারা অভিযোগ দেন আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিব।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: