সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার এক মাইলফলক জাবির ‘ধ্বনি’

সাইদুল ইসলাম, জাবি | ৩ মার্চ ২০২৪, ২১:৫২

সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার এক মাইলফলক জাবির ‘ধ্বনি’
‘‘দিগন্তে চলো শব্দ যেথায় সূর্যসত্য’’ এই শ্লোগান ধারণ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে(জাবি) আবৃত্তি ও বাক্ উৎকর্ষ নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে আবৃত্তি সংগঠন ‘ধ্বনি’। 
 
ধ্বনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের ৯নং কক্ষে রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সপ্তাহে পাঁচদিন বিকেল ৫ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
 
আগামীর পরিকল্পনা ও প্রত্যাশা নিয়ে ধ্বনির সভাপতি মনিরুল ইসলাম বলেন, ধ্বনির নিয়মিত কার্যক্রম এর অংশ হিসেবে ‘জ্বালো ঐতিহ্যের আলো’ নামে একটি মাসিক আয়োজন পরিচালনা করে। সেক্ষেত্রে সমসাময়িক কোনো বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে আয়োজনটি হয়ে থাকে। আগামী ১০ মার্চ ‘সময়ের প্রলাপ’ নামে একটি আয়োজনের কাজ চলছে এবং পরবর্তীতে ত্রৈমাসিকভাবে আয়োজনটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা আছে। এক্ষেত্রে সমসাময়িক বিষয়াদি প্রাধান্য পাবে। এছাড়া মাসব্যাপী আয়োজন ‘আবৃত্তি ও বাক্ উৎকর্ষ বিষয়ক কর্মশালা’ করার পরিকল্পনা আছে। বছরের শেষে ‘আবৃত্তি উৎসব’ আয়োজনের চিন্তা ভাবনা চলছে। তাছাড়া বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতে ধ্বনি সর্বদা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেলে টিএসসির ৯ নম্বর কক্ষে ধ্বনির নিয়মিত চর্চা চলবে।
 
একঝাঁক আবৃত্তিপ্রেমী ও সংস্কৃতির মননে উজ্জীবিত তরুণের হাত ধরে ধ্বনির যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৬ সালের ১২ ই অক্টোবর। এরপর থেকেই সংগঠনটি দলীয় আবৃত্তি প্রযোজনার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানারকম সৃষ্টিশীল ও কল্যাণমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পড়ালেখার পাশাপাশি  শিক্ষার্থীদের সুস্থ সংস্কৃতি ও সুন্দর মন গড়ে তোলায় দীর্ঘদিন ধরেই ভূমিকা রাখছে সংগঠনটি। নিজেদের যাচাই করতে তারা নিয়মিতভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।
 
ধ্বনি সদস্যরা নিজেদের অবদান রেখে চলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের অঙ্গনেও। জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক উৎসব এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তারা সবসময় সুনাম বয়ে এনেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। পাশাপাশি সংগঠনটি সমাজের বিভিন্ন অনিয়ম, শোষণ, নিপীড়ন, অসংগতির বিরুদ্ধে মঞ্চে ও রাজপথে নিরন্তর ভূমিকা রেখে চলেছে। তাই এটিকে সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন হিসেবেও মনে করেন এর সদস্যরা।
 
ধ্বনির নিয়মিত কার্যক্রমের ভেতর রয়েছে সাপ্তাহিক কবিতা আবৃত্তির আসর, মাসিক পাঠচক্র, জ্বালো ঐতিহ্যের আলো, বার্ষিক আবৃত্তি ও বাক্ উৎকর্ষ বিষয়ক কর্মশালা এবং বার্ষিক আবৃত্তি উৎসব। প্রতিবছর ধ্বনি তিন থেকে পাঁচদিন ব্যাপী আবৃত্তি উৎসব আয়োজন করে যাতে দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্বদের গুণীজন সম্মাননা দেয়ার পাশাপাশি নিজস্ব প্রযোজনা, আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমন্ত্রিত আবৃত্তিদলের অংশগ্রহণ, দেশসেরা আবৃত্তিশিল্পীদের অংশগ্রহণ থাকে। 
 
উল্লেখ্য, গতবছর আয়োজিত ”কবি মোহাম্মদ রফিক আবৃত্তি উৎসব- ২০২৩” এ গুণীজন সম্মাননা প্রাপ্ত হোন কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক আকিমুন রহমান। ধ্বনি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবৃত্তি সংগঠন যা বিগত ২৬ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে আবৃত্তিচর্চায় সারথির ভূমিকা পালন করছে। ধ্বনি সর্বদা সামাজিক দায়িত্ববোধে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় রাখার চেষ্টা করে। 
প্রতিবছর ধ্বনি তিন থেকে পাঁচদিন ব্যাপী আবৃত্তি উৎসব আয়োজন করে যাতে দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্বদের গুণীজন সম্মাননা দেয়ার পাশাপাশি নিজস্ব প্রযোজনা, আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমন্ত্রিত আবৃত্তিদলের অংশগ্রহণ, দেশসেরা আবৃত্তিশিল্পীদের অংশগ্রহণ থাকে।
 
ধ্বনির উল্লেখযোগ্য প্রযোজনার মধ্যে রয়েছে_ পুরুষের পৃথিবীতে এক মেয়ে, কপিলা, শেষের কবিতা, পরাণের গহীন ভিতর, হীরক রাজার দেশে, হাজার বছর ধরে, পদ্মানদীর মাঝি, অসময়ের ইশতেহার, প্রশ্ন রাখি কোথা, তোমার আমার এই যুদ্ধক্ষেত্রে প্রমুখ।
 
ধ্বনি প্রযোজনায় সবসময় দেশের সাম্প্রতিক সংকট ও সামাজিক বাস্তবতা উঠে এসেছে; সামাজিক নানা বিষয়ে অবদান ও মননশীল চর্চার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে আলোড়িত করেছে ধ্বনি বারবারই।
বর্তমানে ধ্বনি একটি নান্দনিক আবৃত্তি চর্চাকেন্দ্র হিসেবে দেশে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। ধ্বনি শুরু থেকে কবিতা আবৃত্তি, প্রমিত উচ্চারণ ও শুদ্ধ বাচনভঙ্গি নিয়ে কাজ করে আসছে। বছরব্যাপী নানা আয়োজন করে থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে - আবৃত্তি ও বাক্উৎকর্ষ বিষয়ক কর্মশালা,  আবৃত্তি উৎসব,  মাসিক কার্যক্রম হিসেবে জ্বালো ঐতিহ্যের জ্বালো, দৈনন্দিন রেওয়াজ ও কবিতা পাঠের আসর। 
 

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: