র্যাগিং নিয়ে বরাবরই শিরোনামে থাকা যেনো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি)। ফুল পরী ঘটনার পর আরো বেশকিছু ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি নিশ্চিত করা হলেও থামানো যাচ্ছে না এই র্যাগিং। অথচ র্যাগিং বন্ধ করতে প্রতি বছর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে(ইবি) র্যাগিং বিষয়ে 'জিরো টলারেন্স' ঘোষণা দিয়ে সচেতনতামূলক মাইকিং প্রচারণা চালায় প্রশাসন। কিন্তু র্যাগিং বন্ধে প্রশাসনের শত চেষ্টার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ে যেনো র্যাগিং থামানো যাচ্ছে না।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ্ হলের ১৩৬ নম্বর গণরুমে রাতভর বিবস্ত্র করে র্যাগিং এর ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ এসেছে সিনিয়র দুই শিক্ষার্থীর উপর। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুদাচ্ছির খান কাফি এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাগর। তবে জানা যায়, শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা বিষয়টি ঘরোয়াভাবে সমাধান করায় প্রশাসনের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়েরই নবীন শিক্ষার্থী ভর্তির পর পরই সিনিয়র-জুনিয়র বন্ডিং সহ নানা আদব কায়দা শেখানোর জন্য সিনিয়র কতৃক তাদের সেশন চলমান থাকলেও বর্তমানে তা রূপ নিয়েছে র্যাগিং-এ।
গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ দ্বারা ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে র্যাগিংয়ের নামে পাশবিক নির্যাতনের ঘটনাটি পুরো দেশেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। পরে আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতিসহ পাঁচ অভিযুক্তকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়।
ফুলপরী ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী তাহমিন ওসমানকে র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। তারা হলেন শেখ সালা উদ্দিন সাকিব, মিজানুর রহমান ইমন, শাহরিয়ার হাসান, হিশাম নাজির শুভ ও সাদমান সাকিব। এঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা ওসমান গনি শওকত রেজিস্ট্রার বরাবর মেইলে অভিযোগ জানায় এবং পরে ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর বরাবর ছয় পৃষ্ঠার লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। এঘটনার তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্তদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে প্রশাসন।
এবিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, র্যাগিং বন্ধ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুরু থেকেই সর্বোচ্চ চেষ্টা করে আসছে। ক্যাম্পাসে নতুন ব্যাচ পা রাখার সাথে সাথেই মাইকিংয়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়। এছাড়াও দপ্তর ও বিভাগগুলোতেও সচেতনতামূলক চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর পরও শিক্ষার্থীরা যে কেনো এরকম র্যাগিং কান্ডে জড়াচ্ছে আমি বুজে উঠতে পারছি না।
সাম্প্রতিক লালনশাহ্ হলে র্যাগিং কান্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি এবং বিভিন্ন গনমাধ্যমে দেখেছি। কিন্তু ভুক্তভোগী আমাদের কাছে কোনো রকমের অভিযোগ পত্র জমা দেয় নি। তবে এঘটনায় প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্তে যদি সত্য প্রমাণিত হয় তাহলে প্রশাসন এর আগের ঘটনাগুলোর ন্যায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, র্যাগিং একটি ফৌজদারি অপরাধ। যারা র্যাগিংয়ের মতো জঘন্য কাজ করে তারা সাধারণত নৈতিকতার অভাবেই করে। র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে আমরা প্রথম থেকেই জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি। যে কেউই যদি এর সাথে জড়িত থাকুক না কেনো আমরা এর সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিবো।
এই বিভাগের অন্যান্য খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: