ধর্ষণের বিচারে ৫ দফা দাবিতে 'জাবি সাংস্কৃতিক জোট' এর প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ 

জাবি প্রতিনিধি | ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ০৭:২২

ধর্ষণের বিচারে ৫ দফা দাবিতে 'জাবি সাংস্কৃতিক জোট' এর প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ 
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) সাংস্কৃতিক জোট ধর্ষণের বিচারের ৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ করছে।
 
শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারী ) সন্ধ্যা ৭ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে এই প্রতিবাদী  সাংস্কৃতিক সমাবেশ পালন করেছে।
 
এই প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশে ধ্বনির দপ্তর সম্পাদক ফাইজা মেহজাবিন প্রিয়ন্তীর সঞ্চালনায় ৫ দফা দবি উত্থাপন করা হয়।  দাবিগুলো হলো - চলমান ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু সুরাহা এবং জড়িত সকলকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে, যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর করে পূর্বের সকল অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার পূর্বক দায়িত্ব অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে, হল থেকে অছাত্রদের বিতারণ করে সিট সংকট নিরসন করতে হবে,ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের দৌরাত্ম্য নিরসনে পদক্ষেপ নিতে হবে।
 
সমাবেশে ধ্বনির দপ্তর সম্পাদক ফাইজা মেহজাবিন প্রিয়ন্তীর সঞ্চালনায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক প্রাপ্তি তাপসী তার বক্তব্যে বলেন, এই ধর্ষণ কোনো বিচ্ছিন্ন কর্মকান্ড নয়। জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের তীব্র আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল অকার্যকর ভুমিকা পালন করছে। অভিযোগ আসে কিন্তু ভুক্তভোগী তার অভিযোগের আশানুরূপ সুরাহা পান না। আমরা দেখেছি এই ধরনের অভিযোগ বারংবার আসার পরেও সে অভিযোগের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠিত হয় কিন্তু তদন্তের রিপোর্ট পেশ করা হয় না। সাংস্কৃতিক জোট বলতে চায় যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর করে বিদ্যমান সকল অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে হবে ও আশু সুরাহা করতে হবে। 
 
তিনি আরও বলেন, যে প্রশাসন চাঁদাবাজি, ছিনতাইয়ের অভিযোগ আসার পরেও চুপ করে বসে থাকে শিক্ষার্থীরা সেই প্রশাসনকে মান্য করে না। ধর্ষণকান্ডের পর থেকে প্রশাসন তাদের দায়িত্ব থেকে যে পিছনগুটিয়ে চলে এসেছে তার দায় এই প্রশাসনকে নিতে হবে এবং  বিশ্ববিদ্যালয়কে সকল জনসাধারণের জন্য নিরাপদ করতে হবে। প্রশাসন যদি ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দৌরাত্ম্যের নিরসনে কাজ না করে তবে আমরা আরও কঠোর ভূমিকা নিতে বাধ্য হবো। 
 
জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সম্পাদক ওমর ফারুক বান্না বলেন, আমরা জানতাম এই ক্যাম্পাসে রাতে-দিনে নারীরা সবসময় নিরাপদ। এই যে মোস্তাফিজ ও মুরাদ তারা একদিনে গড়ে ওঠেনি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিং ও গণরুম বন্ধ হয় নি এখনো। যে গনরুম বিশ্ববিদ্যালয়ে একেকটি মোস্তাফিজ ও মুরাদ তৈরী করছে সেই গনরুমকে বন্ধ করতে হবে। 
 
তিনি তার বক্তব্যে আরও বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার হয় নি।  যদি মোস্তাফিজ জানতো এই জনির বিচার হয়েছে তাহলে সে ধর্ষণের মতো এরকম কাজ করার সাহস পেত না। ধর্ষণকাণ্ডে শুধু মোস্তাফিজ ও মুরাদরা জড়িত নয়। এর পেছনে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 
 
 
এই সমাবেশে সাংস্কৃতিক জোটের সাধারন সম্পাদক সুমাইয়া জাহান বলেন,
ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়েই মূলত জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের উৎপত্তি। আমরা সবসময়ই আন্দোলন করার চেষ্টা করেছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে। সেই আন্দোলনের ফলে যে আউটপুট গুলো আসে সেই আউটপুটগুলো হয়তো কিছুদিন কার্যকর থাকে, তারপর কিছুদিন পর সেগুলো আর সেভাবে কার্যকর থাকে না, যেমন- যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল। এই যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল তৈরি হয়েছিল জাহাঙ্গীরনগরে ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের ফসল হিসেবে। এখন আমরা সবাই জানি যে যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর তো নেই, উলটো ভিক্টিমরা অভিযোগ করছেন যে তাদের ভিক্টিম ব্লেমিং করা হচ্ছে। এজন্য আমাদের পাঁচ দফা দাবি আছে তার মধ্যে একটি দাবি এটিও যে, আমাদের যে যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল আছে সেটা কার্যকর করা। 
পাশাপাশি, দেশের প্রচলিত আইনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে সেই মামলাটি যেন দ্রুত কার্যকর হয়। 
 
তিনি আরও বলেন, এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট নিরসনের মূল যে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন তা হচ্ছে হল গুলো থেকে অছাত্রদের বিতারিত করা। এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের যারা হলে অনেকগুলো সিট একসাথে দখলে রেখেছেন এবং পলিটিকাল ব্লক তৈরি করে থাকেন তাদের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
 
 সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি শরণ এহসান বলেন, আমাদের আজকের এই আয়োজনটি হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ধর্ষণের ঘটনার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এবং তার প্রেক্ষিতে মুহূর্মুহু যে সব তথ্য উঠে আসছে  ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে, মাদক, চোরাকারবারি এবং অভারওল ক্যাম্পাসের শিক্ষাব্যবস্থা কিংবা প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। এই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা যারা  সংস্কৃতি কর্মী, আমরা জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সংস্কৃতি কর্মী রয়েছি, আমরা শিল্পের মাধ্যমেই আমাদের প্রতিবাদের ভাষা তুলে ধরতে সর্বদা চেষ্টা করি।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: