বিতর্কের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে ইবি ছাত্রলীগ

ইবি প্রতিনিধি | ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১৮:৫৮

বিতর্কের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে ইবি ছাত্রলীগ

নিয়োগ বাণিজ্য’সহ বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয়ে ক্রমাগত অডিও ফাঁস এবং বছরজুড়ে পত্র-পত্রিকার পাতায় সমালোচিত শিরোনামে এখন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগ। ফলে নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝেই তৈরি ক্ষোভ। প্রকাশ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ক্ষোভের প্রকাশও করছেন তারা।

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতের কন্ঠস্বর সদৃশ একাধিক অডিও ফাঁস, সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের নাম ব্যবহৃত কাবিননামা ও হুয়াট্স অ্যাপ চ্যাট ফাঁসের পর সমালোচনার ঝড় তৈরি হয়েছে ইবি ছাত্রলীগ নিয়ে।
 
গত ৩০ জানুয়ারি রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের নাম সম্বলিত একটি কাবিননামা। প্রকাশিত কাবিননামা সূত্রে দেখা যায়, গত ১৩ মে ২০২১ তারিখে নিকাহটি রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেনমোহরে কনে বৈশাখী খাতুন, পিতা: জিল্লুর রহমান, মাতা: আছিয়া বেগমের সাথে বর নাসিম আহমেদ জয়, পিতা: তবারক হোসেন, মাতা: নাসিমা খাতুনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন বলে কাবিননামা থেকে জানা যায়।
 
তবে তবে এই বিষয়টি বানোয়াট এবং ইডিট বলে দাবি করেছেন ইবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়। কাবিননামা সূত্রে আরও জানা যায়, উক্ত নিকাহ রেজিস্ট্রেশনের সাক্ষী ছিলেন, সাক্ষী-১: রাকিবুল ইসলাম রাকিব (সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ইবি শাখা ছাত্রলীগ), পিতা: মো: রেজন আলী, মাতা: রাশিদা খাতুন। সাক্ষী-২: মো: তারিকুল ইসলাম, পিতা: তাহাজ্জত শেখ, মাতা: তহমিনা খাতুন।
 
এ বিষয়ে ইবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার যে নাম পরিচয় ব্যবহার করা হয়েছে সেটা সঠিক। তবে আমি এখনই এই বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি নই। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে আমি আমার অবস্থান পরিষ্কার করব। 
 
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এধরনের কাবিনামা তৈরি করা সময়ের ব্যাপার মাত্র। যে রেজিস্ট্রেশন নম্বর এবং মেয়ের নাম দিয়েছে সেগুলো ভিত্তিহীন তথ্য। আমাদের সংগঠনে ছাত্র রাজনীতি করা অবস্থায় বিয়ে করা সংবিধানে নাই। আমি সংগঠন বিতর্কিত হবে এমন কোন কাজ অবশ্যই করবো না। সংগঠন বিরোধী কিছু চক্র আছে যারা এসব কার্যকলাপ ছড়াচ্ছে। আমার নিজের বিয়ে অথচ আমি নিজেই জানবোনা!
 
এছাড়াও ১ বছর মেয়াদি কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে দেড় বছর অতিবাহিত হলেও এখনো কমিটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেনি ছাত্রলীগ। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার আশ্বাসবাণীতে জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহের প্রায় ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও আলোর মুখ দেখেনি সেই কমিটি। এছাড়াও হল কমিটি, ফ্যাকাল্টি কমিটি গঠনের কথা বলা হলেও সেই আশ্বাস এখন কেবলই অতীতের শিরোনাম। তবে এসকল বিষয়ে নিশ্চুপ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দিকপালেরা।
 
গতবছর ১২ ফেব্রুয়ারি ফুলপরি র‌্যাগিং নিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা'সহ ৫ জনকে ছাত্রলীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কারাদেশ দেয়া হয়। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ছিট থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীকে নামিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। গত ২০ আগস্ট ২০২৩ তারিখে শোক দিবসের অনুষ্ঠানের পর কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ এবং ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল হাই এমপির উপস্থিতিতেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় ছুরিকাঘাতে আহতদের ঘটনাও ঘটে। ফলে এসকল বিষয় সমূহ নিয়ে একপ্রকার বিতর্কিত বৃত্তের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে ছাত্রলীগের এই ইউনিট।
 
পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠনের ব্যাপারে সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত জানান, আমি নিজেও চাই শাখা ছাত্রলীগের পুর্নাঙ্গ কমিটি হোক। আমার হাতে সুযোগ থাকলে আমি আজকেই পুর্নাঙ্গ কমিটি দিয়ে দিতাম। কিন্তু পুর্নাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তারা অনুমোদন না দিলে আমরা কি করতে পারি! যদিও আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের একাধিকবার বিষয়টি নিয়ে বলেছি।
 
সাধারণ সম্পাদকের কাবিননামা ফাঁসের ব্যাপারে বলেন, এমন কাবিননামা চাইলেই বানানো যায়। যেটা ফাঁস হয়েছে সেটায় মেয়ের বয়স জয়ের চেয়ে বেশি। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে যে কাজীর পরিচয় দেয়া হয়েছে সেটাও ভুয়া। ওই নামে, ওই ঠিকানায় কোন কাজী নেই।
 
নিজের নামে ছড়ানো অডিও ক্লিপের বিষয়ে বলেন, যে সকল বিষয় নিয়ে অডিও ক্লিপ ভাইরাল হচ্ছে সেগুলো অস্পষ্ট ও ভিত্তিহীন। আমার ছবি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্বার্থান্বেষী মহল প্রোপাগাণ্ডা চালাচ্ছে। আমি ইতোমধ্যে থানায় জিডি করেছি। আমিও চাই যে বিষয়গুলো খোলাসা হোক।
 
কাবিননামার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ বলেন, কাবিননামাটা আমি এখনও দেখি নাই। তবে আমরা প্রাথমিক খোঁজখবর নিয়ে জানতে পেরেছি বিষয়টি ভূয়া। আর যদি সত্যিও হয় তবুও সাংগঠনিকভাবে সমস্যা নেই। পদবি পাওয়ার পর বিবাহিত হলে সমস্যা নাই। 
 
এছাড়াও তিনি বলেন, অডিও ফাঁস বা কাবিননামার ব্যাপারে আমাদের কাছে অফিসিয়াল অভিযোগ আসে নাই। আর আমরা ফেসবুক দেখে সংগঠন চালাই না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা অনেক সময় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেও এগুলো করে থাকে।
 
কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার বিষয়ে তিনি বলেন, কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার বিষয়টি চলমান। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি করতে বিভিন্ন দিক থেকে ভাবতে হয়৷ এটা একটি বড় প্রক্রিয়া। সব এলাকার ছেলে-মেয়েদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হয়৷
 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: