বেরোবির ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাচ্ছে না আবাসিক সুবিধা

ক্যাম্পাস ডেস্ক: | ১৫ জুন ২০২৩, ০৫:৪৮

সংগৃহীত ছবি

প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরের পেরিয়ে গেলেও আবাসন সংকট কাটেনি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ৮ হাজার। তিনটি আবাসিক হল মিলে আসন সংখ্যা মাত্র ৯৩৭টি। সে তুলনায় ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা হতে বঞ্চিত। হলে সিট না পেয়ে ক্ষুব্ধ হন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছয়টি অনুষদের অধীনে ২২টি বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় আট হাজার। ক্যাম্পাসে আবাসিক হল চারটির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ প্রকল্প ছাত্রীদের জন্য (শেখ হাসিনা হল) আবাসিক ১০ তলা ভবন কাজ থমকে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি আবাসিক হল মিলে আসন সংখ্যা মাত্র ৯৩৭টি। এর মধ্যে ছেলেদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে সর্বাধিক আসন ৩০৪টি ও শহীদ মুখতার ইলাহী হলে ২৪০টি। আর মেয়েদের জন্য একমাত্র শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৩৪২টি আসন রয়েছে। মোট শিক্ষার্থীর তুলনায় এ আসন সংখ্যা অতি নগণ্য। বর্তমানে আবাসিক সংকটই বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় সমস্যা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবাসিক হলে থাকার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ১২ শতাংশ।

ফলে ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থীই আবাসিক সুবিধাবঞ্চিত। এদের অনেককেই নগরীতে বাসা ভাড়া বা মেস করে থাকতে হচ্ছে।

আবাসিক সংকটের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা জিম্মি হন মেস মালিকের হাতে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেস ও বাড়িতে ভাড়া থাকতে হয়। এ সুযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে গড়ে উঠেছে রমরমা মেস বাণিজ্য। বিকল্প না থাকায় মেস মালিকরা স্বেচ্ছাচারী আচরণ করেন। কেউ দু-এক মাসের জন্য উঠতে চাইলেও তিন মাসের টাকা জামানত দিতে হয়। এতে বিপাকে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যেও মেসের চড়া মূল্য ও খাবার বিল দিতে অতি কষ্টে দিন অতিবাহিত করছেন গরিব শিক্ষার্থীরা।

আবাসিক হলে অবস্থান করা একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায় ,একটি রুমে শিক্ষার্থী থাকার কথা চারজন সেখানে আমরা ১০ জন একরুমে থাকছি। এতে করে পড়াশোনার জন্য ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পরিবার থেকে তেমন আর্থিক সুবিধা না থাকায় কষ্ট হলেও গাদাগাদি করে থাকছি।

ছাত্রী হলেও একই সমস্যা। সবাইকে ডাবলিং করে থাকতে হচ্ছে। খাওয়া, গোসল, ঘুম সবকিছুই পালা করে করতে হচ্ছে। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থী নুপুর (ছদ্মনাম) বলেন, একরুমে আটজন থাকা, ছোট একবেডে দুজন গাদাগাদি করে থাকা লাগে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কমল দেবনাথ বলেন, হলে এভাবে একবিছানায় দুজন থাকা খুবই কষ্টকর। ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। গাদাগাদি থাকার কারণে পড়াশোনা ঠিকমতো করতে পারি না।

এদিকে অনার্স শেষ করেও হলে সিট না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জাকের হোসেন পাশা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আবাসিক হলে সীট না পাওয়া সত্যি অনেকটা আক্ষেপ ও খারাপ লাগার। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষের পথে হলেও তবু হলে বৈধ পন্থায় সিট পাইনি। আবাসন সংকটের মূল কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র অনুপাতে হল সংখ্যা অপ্রতুল, হলে বৈধ পন্থায় সিট বণ্টনে হল প্রশাসনের উদাসীনতাও যথাযথ উদ্যোগের অভাব।

এ বিষয়ে বেরোবি রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী বলেন, হল সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আমরা ইউজিসিকে জানিয়েছি। বাজেট পেলে কাজ শুরু করবো। খুব শীঘ্রই শেখ হাসিনা হলের (১০ তলা) কাজ শুরু হবে। তখন মেয়েদের বাইরে আর থাকা লাগবে না। তাদের সমস্যা সমাধান হবে।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ বলেন, ভৌত অবকাঠামো সংকট নিরসনে একটি মেগা প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি এই প্রকল্পটির অনুমোদন পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামগত সমস্যার সমাধান হবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: