কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের একাংশ ও সাংবাদিক সমিতির উচ্চবাচ্য

কুবি প্রতিনিধি | ৩০ মে ২০২৩, ২২:৫৬

ছবিঃ সংগৃহীত

"এই বিচার মানি না। আমাদের ডিপার্টমেন্টের ইস্যুতে ছাত্রলীগ কীভাবে আসে দেখে নিবো।" কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ইংরেজি বিভাগের দুই শিক্ষার্থীর মারামারির 'মীমাংসা' হতে যাওয়া ঘটনা না মেনে বিভাগের সিনিয়র হিসেবে এমন মন্তব্য করেছেন দৈনিক যায়যায়দিনের কুবি প্রতিনিধি রুদ্র ইকবাল ওরফে ইকবাল মনোয়ার। এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করেই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ (রেজা-স্বজন) ও বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির মধ্যে উচ্চবাচ‍্যের ঘটনা ঘটেছে।

সোমবার (২৯ মে) বিকেলে প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রক্টরিয়াল বডি দুই পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্র মতে জানা যায়, ইংরেজি বিভাগের ১৫তম আবর্তনের দুই শিক্ষার্থী হীরা ও আরমানের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। তাতে হীরার মাথা ও নাকে আঘাত পায়। এ ঘটনার পরবর্তী সময়ে হীরার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের বন্ধুরা আরমানের উপর হামলা করে। হীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের রেজা-স্বজন গ্রুপের একজন কর্মী।

এই ঘটনা সমাধানের জন্য প্রক্টরিয়াল বডি ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকরা তাকে (হীরা) দেখতে হলে যায়। সেখানে তারা সমাধানের লক্ষে দুই পক্ষের সাথে কথা বললে, তারা (হীরা ও আরমান) নিজেদের মাঝে বিষয়টা সমাধান করে নেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু তখন দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির অর্থ সম্পাদক রুদ্র ইকবাল শিক্ষকদের উপস্থিতিতেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অনেককে হুমকি দিতে থাকেন। হুমকির এক পর্যায়ে "এই বিচার মানি না। আমাদের ডিপার্টমেন্টের ইস্যুতে ছাত্রলীগ কীভাবে আসে দেখে নিবো।" বলে মন্তব্য করেন এবং ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে নানারকম হুমকি দেন।

এই বিষয়ে কথা বলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ছাত্রলীগ ও সাংবাদিকদের নিয়ে প্রক্টর অফিসে আসার পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন গোল চত্বরে এই উচ্চবাচ‍্যের ঘটনা ঘটে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. বনানী বিশ্বাস বলেন, আমরা তাদের (হীরা ও আরমান) মাঝে একটা মিচুয়াল করে দেই তারাও তাদের ভুল বুঝতে পারে। তখন রুদ্র ইকবাল বললো "এটা কি কোনো মিচ‍্যুয়াল হলো" তখন ঐখানে কয়েকজন বললো "তারা যেখানে মিচ‍্যুয়াল করে ফেলেছে সেখানে আপনি কথা বলেন কেন?" তখন রুদ্র ইকবাল রাগান্বিত হয়ে দুই ঠোঁট এক করে মুখে আঙ্গুল দিয়ে সবার সামনে চুপ করতে বলেন উপস্থিতিদের। এরপরই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। যখন তাকে (রুদ্র ইকবাল) থামানো হলো তখন আমি রুদ্র ইকবালকে জিজ্ঞেস করি তোমার তো দুইটা আইডেন্টিটি তুমি সাংবাদিক আবার ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্টও। যেখানে তারা দুইজন তাদের ভুলটা বুঝতে পেরে তারা মিচ‍্যুয়াল হয়ে গেছে সেখানে আমাদের কি ইন্টারেস্ট থাকতে পারে থার্ড পার্টি হয়ে জিনিসটাকে না ভাঙিয়ে জিনিসটাকে অন্য দিকে নিয়ে যাবো? খারাপ জিনিসকে বাড়তে দেওয়া ভালো না। পরে সে কোনো উত্তর দিতে পারলো না।'

হীরার বন্ধু শাহাদাত তানভীর রাফি এ বিষয়ে বলেন, 'আমরা জানতে পারি আমার ফ্রেন্ড হিরাকে কে যেন মেরেছে, তখন আমরা সবাই ফ্যাকাল্টির নিচে দাঁড়িয়ে আছি। এসময় চুল লম্বা ভাই (রুদ্র ইকবাল) আমাদের কাছে এসে বলেন, ছাত্রলীগের কোনো ছেলে যেন আমার ডিপার্টমেন্টে না যায়, গেলে ক্যাম্পাস থেকে তাদের বিতাড়িত করব।'

এ বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আশিফ এন্তাজ রাব্বি বলেন, আমাদের বঙ্গবন্ধু হলের একটা ছেলেকে মারছে। সেখানে শিক্ষকরা, প্রভোস্ট স্যার, প্রক্টর স্যাররা আসছেন কথা বলে সমাধান করার জন্য। সেখানে হলের লোকজনও কথা বলতেছে। তারপর সেখানে রুদ্র ইকবাল নামে একজন সাংবাদিক এসে বললো এখানে আমরা কথা বলার কে? এমনকি সে ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছে। আমরা এর বিচার চাই।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির অর্থ সম্পাদক ও দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার প্রতিনিধি রুদ্র ইকবাল ওরফে ইকবাল মনোয়ার বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো একটি বিভাগের কাজ করতে গেলে শিক্ষার্থীদের মাঝে মারধরের ঘটনা ঘটে। বিভাগের সিনিয়র হিসেবে বলেছি যে বিভাগের ইস্যু বিভাগের শিক্ষার্থীরা সমাধান করবে, হলের পোলাপান যেন বিভাগে এসে ঝামেলা না করে। পরবর্তীতে আমি হলে গিয়ে হলের পোলাপানকে পাকিস্তানি মসজিদের সামনে হওয়া মারামারির কথা জিজ্ঞেস করলে তারা আমার দিকে তেড়ে আসে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আহমেদ ইউসুফ আকাশ বলেন, 'সংবাদ সংগ্রহের সময় দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রুদ্র ইকবাল (ইকবাল মনোয়ার) হেনস্তার শিকার হয়েছেন। বিষয়টি দুঃখজনক। ছাত্রলীগ বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করছে।'

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহী বলেন,
সাংবাদিক যারা আছে তারা যদি শার্টের কলার ধরে, একজনকে দোষী সাব্যস্ত করে তাহলে কিছু বলার নেই। সাইফ, নওশীন, রাফির কলার ধরে তারা ধমক দিচ্ছিল বঙ্গবন্ধু হলে৷ সেখানে প্রক্টর স্যাররাও ছিলেন। তার কথা ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে নাকি ছাত্রলীগ ঢুকতে পারবে না। এই ঘটনার পরবর্তী সময়ে মারামারি করা ইংরেজি বিভাগের ঐ দুই ছেলে নিজেরা মিলে গেছে প্রক্টর অফিসে৷ পরে আহমেদ ইউসুফ আকাশ ও ইকবাল এসে এখানে সিনক্রিয়েট করা শুরু করে ও গালাগালি করা শুরু করে। আমরা চাই সাংবাদিকতা সুষ্ঠু হোক৷ কোনো জামাত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সাংবাদিকতাকে ব্যবহার না করতে পারে৷ আমরা ভালো কাজের পক্ষে।'

এই ঘটনার পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টি পর্যন্ত ঝটিকা মিছিল করেন ছাত্রলীগের রেজা-স্বজন গ্রুপ। এই মিছিলে তাদের স্লোগান ছিল 'হলুদ সাংবাদিক নিপাত যাক নিপাদ যাক', 'জামাত-শিবিরের আস্তানা ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও'।
এই মিছিলের ব্যাপারে রেজা-ই-এলাহি বলেন, এই মিছিল জামাত-শিবিরকে উদ্দেশ্য করে দেয়া হয়েছে। এই বাংলায় জামাত-শিবিরের কোন ঠাঁই নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, 'দুই পক্ষের (ছাত্রলীগের একাংশ - সাংবাদিক সমিতি) মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। দুই পক্ষকেই আমাদের পক্ষ থেকে সংযত করার চেষ্টা করেছি। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। আপাতত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবো।'



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: