দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন খেলার মাঠ ও ভবনের ছাদে বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বসে পড়েন তারা। উদ্দেশ্য আর কিছু নয় একসঙ্গে ইফতার করা। কেউ শরবত বানাতে লেগে পড়েন, কেউ নেন ছোলা-মুড়ি মাখানোর দায়িত্ব।
ইফতার আয়োজন নিয়ে ক্যাম্পাসগুলো এখন মুখর। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় গত দুই বছর পবিত্র রমজান মাসে এই মিলনমেলার সুযোগ ছিল না। ইফতার আয়োজনগুলো এবার তাই আরও বেশি জমজমাট। দেড় বছর ক্লাসরুমে তালা ঝুললেও ভর্তি হয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী, যোগ হয়েছে অনেক নতুন মুখ। দল বেঁধে ইফতার করার ব্যাপারে তাঁদের আগ্রহ আরও বেশি। ইফতারের সময় কে কোন বিভাগ, কে কোন বর্ষ, সেসবের ভেদাভেদ থাকে না। নির্ধারিত জায়গায় হাজির হয়ে গেলে কোনো না কোনো দল ঠিকই টেনে নেয়। বাহারি রকমের ইফতারে রয়েছে ছোলা, মুড়ি, পাকোড়া, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, জিলাপিসহ নানা মুখরোচক খাবার। এছাড়াও লেবুর শরবত এবং হরেক রকমের ফলফলাদিও পরিবেশিত হয়।
তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও হলের আবাসিক ছাত্র হাসিন ইশরাক বলেন, "পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে সবাইকে রমজানুল মুবারক। এবারেও প্রতি বছরের ন্যায় রমজান মাসের রোজা পালন শুরু করেছি ক্যম্পাসের ভাই ও বন্ধুদের সাথেই। পরিবার থেকে দূরে থাকার মন খারাপ যেমন আছে পাশাপাশি ক্যম্পাসের কাছের মানুষদের সাথে রোজা, সেহেরি ও ইফতারী করতেও এখন ভালো লাগে। আল্লাহ আমাদের সবার রোজা কবুল করুক।"
ক্যাম্পাসে ইফতারের অনুভূতি প্রকাশ করে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী সিদরাতুল মুনতাহা মুন বলেন, "পবিত্র রমজান মাসে ইফতার করাটা সবসময়ই একটা ভালোলাগার কাজ। আর সেটা যদি প্রিয় মানুষদের সাথে হয় তাহলে তো কথাই নেই। তবে ক্যাম্পাসে থাকাকালীন সময়ে পরিবারের সাথে ইফতার করাটা ভীষণ মিস করা হয়। কিন্তু ক্যাম্পাসে বন্ধু-বান্ধব, সিনিয়র, জুনিয়রদের সাথে ইফতার করার মজাটাই অন্যরকম। সকল ধর্মালম্বী মানুষ নির্বিশেষে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে শামিল হয়।সাধারণত, ক্যাম্পাসের টিএসসি, স্কুলমাঠ প্রাঙ্গণ সহ বিভিন্ন জায়গায় সমবেত হয়ে ইফতার করা হয়।"
তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী তুহিন শুভ্র মন্ডল বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর থেকে প্রতিবছরই বন্ধুদের সাথে ইফতারে অংশগ্রহণ করা হয়। এটা আমার কাছে একটু অন্যরকম অভিজ্ঞতা। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ইফতার পালনের সংস্কৃতিটা আমারকাছে একাধারে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাস্তব প্রতিফলন, অন্যদিকে অন্যধর্মের বিশ্বাস, রীতিনীতি এবং সংযমের মাহাত্ম্যকে খুব কাছ থেকে দেখার একটি সুযোগ, যা মানুষ হিসেবে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করে। তাই আমার মতে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়, আমাদের উচিত দেশ এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে সকল ধর্মের' সকল ধর্মীয় উৎসবে, ধর্ম-বর্ণের উর্ধ্বে গিয়ে সকলে অংশগ্রহণ করা এবং ভ্রাতিত্ব ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার একটি শান্তিপূর্ণ, সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।"
ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বিভাগ ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলোও নিজেদের মতো ইফতার আয়োজন করে। কিছু সংগঠন রয়েছে যারা নিজেরা চাঁদা উঠিয়ে দুস্থ মানুষের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: