রাবিতে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ: ছাত্রলীগ নেতার হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত

আসিফ আজাদ সিয়াম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:২১

সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আন্তঃবিভাগ ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই বিভাগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় একজন শিক্ষককে লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু সিনহার বিরুদ্ধে। গতকাল রোববার বেলা ১১টা শহীদ হবিবুর রহমান হল মাঠে ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট ও ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিভাগের খেলা চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।

পরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষককে লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ ভবনের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে মানববন্ধন করেন ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষার্থীরা। কিছুক্ষণের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক ও ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর সেখানে উপস্থিত হন এবং শিক্ষার্থীদেরকে আশ্বস্থ করেন। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষক, বিভাগের চেয়ারম্যান ও কয়েকজন ছাত্রকে নিয়ে আলোচনায় বসেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রোববার সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃবিভাগ টুর্নামেন্টের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) ও ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিভাগের মধ্যে ম্যাচ শুরু হয়। ৫০ মিনিটের নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হয়। পরে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে প্রথম দুটি করে শটে উভয় পক্ষই গোল করেন। তবে রেফারির বাঁশি বাজানোর আগেই তৃতীয় শটটি নেন ভেটেরিনারি বিভাগের খেলোয়াড় রিয়াদ। সেই শট ফিরিয়ে দেন আইবিএ’র গোলরক্ষক। তবে বাঁশি বাজানোর আগেই কিক দেওয়ায় রেফারি ওই শটটি বাতিল ঘোষণা করেন। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত না মেনে রেফারিকে অবরুদ্ধ করেন আইবিএ’র খেলোয়াড়রা। এসময় আইবিএ’র এক শিক্ষক সেখানে এগিয়ে আসলে ভেটেরিনারি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোইজুর রহমানও সেখানে উপস্থিত হন। সেখানে আইবিএ’র এক খেলোয়াড় অধ্যাপক মোইজুর রহমানকে ধাক্কা দেন। এনিয়ে উভয় পক্ষের খেলোয়াড়দের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। পরে সেখানে ওই শিক্ষকের টি-শার্টের কলার ধরে টানা হেচড়া করেন আইবিএ শিক্ষার্থীরা। এসময় আইবিএ’র প্রভাষক আনাম শাহরিয়ার রাব্বীকে মারতে ঔদ্ধত হন ভেটেরিনারি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তবে তার গায়ে হাত দেননি।

সংঘর্ষের একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অধ্যাপক ড. মোইজুর রহমানের টি-শার্টের কলার ধরে টানা হেচড়া করছেন ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও আইবিএ ছাত্রলীগের সভাপতি আবু সিনহা। তাকে পেছন থেকে টেনে শিক্ষককে রক্ষার চেষ্টা করছেন ভেটেরিনারি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু নাইম তন্ময়। এসময় লাঠি হাতে তেড়ে আসতে দেখা যায় আইবিএ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈকত রায়হানকে। আর পেছন থেকে ভেটেরিনারি বিভাগের শিক্ষার্থীদের কিল ঘুষি মারতে থাকেন আইবিএ শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোইজুর রহমান বলেন, ওই সময় আইবিএ’র কয়েকজন শিক্ষার্থী আমার জার্সির কলার ধরে টানা হেচড়া করেন। এতে আমার জার্সিটি ছিড়ে যায়। পরে আমি এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ বিভাগের সভাপতির মাধ্যমে মাননীয় উপাচার্য বরাবর জমা দিয়েছি।

শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষার্থী আবু নাঈম তন্ময় বলেন, আমাদের স্যারকে যখন লাঞ্ছিত করা হয় তখন তিনি আইবিএ’র কয়েকজন শিক্ষকের কাছে বিষয়টি জানালেও তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। পরে আইবিএ’র শিক্ষার্থীরা আমাদের কয়েকজনকে বেধম মারধর করে। এতে আমাদের বিভাগের এক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। আমরা শিক্ষক লাঞ্ছিতের সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা আবু সিনহা বলেন, ওই শিক্ষকই প্রথমে আমাদের খেলোয়াড়দের মারধরের নির্দেশ দেন তার বিভাগের শিক্ষার্থীদের। এতে দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। সেই সংঘর্ষের ভিতর শিক্ষক ছিল কিনা না আমি বুঝতে পারি নাই। তবে যখন তিনি পরিচয় দেন তখন আমরা সেখান থেকে আমরা চলে আসি।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, এ ঘটনায় ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জহুরুল আনিসকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্যরা হলেন- ফার্মেসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল মামুন এবং আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: