রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ (আইবিএস) সেমিনারকক্ষে 'শোকে-আক্ষেপে আমাদের পনেরই আগস্ট' শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আলোচনা সভায় ইনস্টিটিউটের ফেলো শুভেন্দু সাহার সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম।
ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ নাজিমুল হকের সভাপতিত্বে আইবিএস-এর বন্ধবন্ধু অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা বক্তৃতা প্রদান করেন। এছাড়া অন্যদের মধ্যে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মো. আবুল কাশেম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস প্রমুখ বক্তৃতা দেন।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা তাঁর বক্তৃতায় বলেন, এটা আমাদের আক্ষেপ কমায় না যখন দেখি পঁচাত্তরের পর থেকে আজ পর্যন্ত বেশিরভাগ সময় কেটেছে এখানে পাকিস্তানি ভাবধারায় পুষ্ট ক্ষমতার নির্দেশনায়। বোঝা যায়, প্রভাব-বলয়ে পাকিস্তান আন্দোলন ও সেই রাষ্ট্রে বসবাসের অভ্যাস কতটা ছাপ রেখে গেছে। এটা সরল যোগ-বিয়োগের ব্যাপার নয়। চেতনায় মিশ্রণে তারও অস্তিত্ব থেকে যায়।
তিনি আরও বলেন, পঁচাত্তরেও এই ছাপ ছিল দগদগে। আজ অধিকাংশ মানুষের স্মৃতি তাকে ধারণ করে না। কিন্তু ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় তা ঐতিহ্যে মেশে। বহু জনকে সক্রিয়ও করে। এই রকম আরো অনেক উপাদানে গণমানুষের মনোজগৎ ঠাসা। তাতে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিমায়া ও কীর্তিগাথা এক স্থায়ী সম্পদ। তবে প্রতিদিন পূজারতি ও নাম সংকীর্ত্তন স্বয়ং কোন কল্যাণ আনবে না। তাঁর জীবন কথা থেকে সঞ্চিত প্রেরণায় মিলিত উদ্যোগে লক্ষ্য স্থির করে এগিয়ে যেতে পারলেই সার্বিক মঙ্গলে হয়ত কিছু না কিছু আমরা ধারাবাহিক যোগ করে যেতে পারব। অন্তত তত দিন যতদিন যৌথ স্মৃতির সঞ্চয়ে তাঁর ব্যক্তি মায়া, ও কর্মপ্রতিভা জাগ্রত থাকবে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা ও দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের চিত্র তুলে ধরে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, বঙ্গবন্ধুকে একদিনের ষড়যন্ত্রে এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়নি। এ হত্যাকাণ্ড ছিল পূর্ব ও সুপরিকল্পিত। কেননা পিছনে ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ ধ্বংস করার চক্রান্ত। ১৯৭৩ সাল থেকে দেশদ্রোহীরা এদেশকে ফের পাকিস্তানের রূপ দিতে পরিকল্পনা শুরু করেছিল। অবশেষে '৭৫-এ সম্মিলিতভাবে বাঙালির ভাগ্যকে পিছনে ঘুরে দিতে নির্মমভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে সক্ষম হন ঘাতকরা। তবে এ হত্যাকাণ্ড কোন সুশীল জাতি মেনে নেয়নি। সেজন্য পশ্চিমারা তখন এসব হত্যাকারীকে তাদের দেশে ঢোকার অনুমতি দেয়নি। আমেরিকা বলেছিল, তাদের হাতে আছে রক্তের দাগ। কিন্তু পাকিস্তানের মদদে তারা তখন রক্ষা পেয়েছিল। অন্যদিকে বাঙালি জাতি হারিয়েছিল সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টাকে।
শোকে-আক্ষেপে ১৫ আগস্ট প্রতিপাদ্যে দেয়া বক্তৃতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, শোক সকলের হলেও আক্ষেপটা কেবল বিবেকবানদের। কেননা ইতিহাস মূল্যায়নের নিজস্ব ক্ষমতা না থাকলে, আক্ষেপ প্রকাশ করা যায় না। শোকের মাসে আক্ষেপ মূলত দুইটি। প্রথমটা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এবং অপরটি বিবেকহীনদের নিয়ে। তবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আক্ষেপের প্রশ্ন উঠার অবস্থা নেই। কারণ, তাকে হত্যার মাধ্যমে তা শেষ করে দিয়েছে ঘাতকরা। তবে আমরা যে উন্নত জাতি কিংবা আধুনিক মানুষ হওয়ার চেষ্টা করছি, তা কেবল বঙ্গবন্ধুকে ঘিরেই।
তিনি আরও বলেন, তৎকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে করা বিভিন্ন অপপ্রচার যে মিথ্যা ছিল, আজ ইতিহাস তা প্রমাণ করছে। কেননা বঙ্গবন্ধু নিজের কোন স্বার্থে ক্ষমতায় ছিলেন না। তিনি শোষণের বিরুদ্ধে ও শোষিতদের পক্ষে কথা বলতেন৷ তিনি শুধু দেশ নয়, পুরো বিশ্বের শোষণমুক্তির কথা বলতেন। তাই বঙ্গবন্ধুর নামে অপপ্রচার নয়, সেই আদর্শ নিয়ে জীবন গড়ার মাধ্যমে প্রকৃত মানুষ হওয়ার আহ্বান জানান উপ-উপাচার্য।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: