নীলাভ ধূসর শার্ট-গাঢ় নীল রঙের প্যান্ট; গলায় সবুজ বর্ণের রুমাল পরে সেবার মনোভাব নিয়ে ছোটাছুটি করছে একদল স্বেচ্ছাসেবক, সেবা দিচ্ছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
বলছি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রোভার স্কাউটের কথা। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) ২০২১-২২ সেশনে ভর্তি পরীক্ষায় নিয়ম শৃঙ্খলা রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে সংগঠনটি। সেবার মূলমন্ত্র ধারণ করে লর্ড ব্যডেন পাওয়েলের হাতে ১৯০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সংগঠনটি।
পরীক্ষার্থীদের সারিবদ্ধভাবে কেন্দ্রে প্রবেশ করানো, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া, অসুস্থ শিক্ষার্থীদের সেবা প্রভৃতি সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছে তারা। শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সিঁড়ি বেয়ে পরীক্ষার কক্ষে নিয়ে যেতে সাহায্য করতে দেখা যায় তাদের।
তবে এই সংগঠনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে। লাখ লাখ ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থী এই সবুজ নীড়ে একটি আসনের জন্য ছুটে আসে দূর-দূরান্ত থেকে। তাদের পরীক্ষা চলাকালীন যেন কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এবং কেউ যেন পরীক্ষায় অসৎ উপায় অবলম্বন করতে না পারে সেই বিষয়ে তারা থাকে খুবই সচেষ্ট। শৃঙ্খলা রক্ষা তাদের প্রধান কাজ হলেও পরীক্ষার্থীদের পথনির্দেশনা দেয়া, জরুরি প্রয়োজনে দেরিতে আসা পরীক্ষার্থীর জিনিসপত্রের ব্যবস্থাও কখনো কখনো করে দেয় স্কাউটরা।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) রোভার স্কাউটের সিনিয়র রোভার মেট ওহিদুল ইসলাম জানান, 'আমরা দেশসেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এবারে আমরা মোট ১১ টি কেন্দ্রে ১২৪জন রোভার নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি গুচ্ছের তিনটি ইউমিটের পরীক্ষায়। ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন শৃঙ্খলা রক্ষা ও শিক্ষার্থীদের সুশৃঙ্খলভাবে সময়মত পরীক্ষার হলে প্রবেশ ও বের করতে কাজ করেছি। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের রোভার সদস্যবৃন্দ নিষ্ঠা ও সততার সাথে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছে ভর্তি পরীক্ষার আইন শৃঙ্খলা টিমের সাথে। আমরা ভর্তি পরীক্ষায় স্বচ্ছতা প্রকাশ করার জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি। পাশাপাশি অসুস্থ পরীক্ষার্থীকে তার আসন পযন্ত পৌঁছে দিয়েছি। গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস প্রিন্ট করে দিয়েছি, হারিয়ে যাওয়া ডকুমেন্টস খুজে পেতে সাহায্য করেছি। এ কাজ গুলো আমরা আমাদের দায়িত্ব বলে মনে করি এবং সেবার মাধ্যমে পাবিপ্রবির সুনাম অর্জন করতে চেষ্টা করেছি। আমাদের লক্ষ্য সেবা।যেমনটি আমরা জেনেছি,"তুমি যেমন টা পেলে পৃথিবী তার থেকে সুন্দর করে রেখে যাও"-বিপি.'
পাবিপ্রবিতে পরীক্ষা দিতে আসা এক পরীক্ষার্থী বলেন, ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে পরীক্ষার হল খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে স্কাউট সদস্যরা আমাকে কেন্দ্রে পৌঁছাতে সহায়তা করেন।
সেবামূলক কাজের অনুভূতি সম্পর্কে রোভার মেট নাজমুল ইসলাম আবির বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর থেকেই স্কাউটের সাথে যুক্ত আছি। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা, বিপদ আপদে এগিয়ে আসা, সামাজিক নেতৃত্ব তৈরিতে স্কাউটের ভূমিকা অগ্রগণ্য। স্কুল-কলেজ থেকেই আমরা সবাই স্কাউট সম্পর্কে অবগত। যা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পরিসরে আরো বড় হয়, স্কাউটদের দায়িত্বও আগের তুলনায় বেড়ে যায়। ঠিক একইভাবে এই দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে সেবার ব্রত নিয়ে এগিয়ে চলছে পাবিপ্রবি রোভার স্কাউট গ্রুপ। স্কাউটে জানার ও শেখার অনেক কিছুই আছে। আমি অনেক কিছু শিখেছি এই সংগঠন থেকে। আর সেবাদানের অনুভূতি সে এক অন্যরকম অনুভূতি, যা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব।'
প্রসঙ্গত, পাবিপ্রবিতে স্কাউট আন্দোলন মূলত শুরু হয় ২০১৪ সালে। সেই থেকেই প্রতিবছর বিভিন্ন জাতীয় দিবসসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মসূচি ও অনুষ্ঠানে পাবিপ্রবি রোভার স্কাউট নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: