নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস এম মুশফিকুর রহমান আশিকের বিরুদ্ধে মার্ক টেম্পারিং, যৌন হয়রানিসহ নানা বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (১৪ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর এবং শিক্ষা বিভাগের চেয়ারম্যান বিপ্লব মল্লিক বরাবর এই অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ১৮ শিক্ষার্থী।
লিখিত ওই অভিযোগপত্রে মোট ১৬টি বিষয় উল্লেখ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। সেগুলো হলো-
১. নির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদেরকে রাত ৮.০০-৮.৩০ টা পর্যন্ত ভয়ভীতি (পরীক্ষার ফলাফলের) প্রদর্শনের মাধ্যমে তার নিজস্ব অফিস কক্ষে বসিয়ে রাখতে বাধ্য করা।
২. অনলাইন পরীক্ষার ভাইভা বোর্ডে মেয়ে শিক্ষার্থীদের অশালীন প্রশ্ন করা।
৩. নিজের পছন্দের শিক্ষার্থীকে দিয়ে একই ব্যাচের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ফলাফল রেজাল্ট শীটে লিপিবদ্ধ করা।
৪. শ্রেণীকক্ষে থাকার থেকে শিক্ষকদের রুমে থাকলে সিজিপিএ ভালো করা যায়। এ ধরণের বিভিন্ন কথা বলা।
৫. মার্কস বাড়িয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্নভাবে অশালীন ও অনৈতিক ইঙ্গিত প্রদান করা।
৬. পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে তার পছন্দের শিক্ষার্থীদের অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা।
৭. শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলে এবং শ্রেণিকক্ষে সরাসরি হুমকি প্রদান করা এবং অপমান, অপদস্ত, লাঞ্ছিত করা, যার কারণে অনেক শিক্ষার্থী এসব মেনে নিতে না পেরে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন, এমনকি বহুবার আত্মহত্যার কথাও চিন্তা করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
৮. প্রকাশ্যে মেয়ে শিক্ষার্থীদেরকে হুমকি দেয়া, যে তাঁর(ওই শিক্ষকের) রুমে কারণে বা অকারণে বসে না থাকলে পরীক্ষায় মার্কস দেওয়া হবে না। এমনকি এটি লক্ষণীয় যে যেসব মেয়েরা তার রুমে বসে থাকে কারণে বা অকারণে তাদের রেজাল্টের সাথে যারা তার রুমে বসে থাকেন না তাদের রেজাল্টের অনেক পার্থক্য। যা পূর্ববর্তী কয়েকটি সেমিস্টারের ফলাফল পর্যবেক্ষণ করলেই স্পষ্টভাবে বুঝা যায়।
৯. শিক্ষার্থীদের সামনে এবং শ্রেণীকক্ষে বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকদের এমনকি চেয়ারম্যানকে নিয়েও বাজে মন্তব্য এবং কটুক্তি করা।
১০. ক্লাস টেস্ট এবং ব্যবহারিক পরীক্ষাসহ অ্যাকাডেমিক বিভিন্ন বিষয়ে পক্ষপাতিত্বপূর্ণ আচরণ করার মাধ্যমে তার পছন্দের শিক্ষার্থীদের বেশি নম্বর প্রদান করেন যা সর্বশেষ পরীক্ষার ফলাফলে সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে।
১১.অভ্যন্তরীণ ভাইভা ও প্রেজেন্টেশনে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ব্যক্তিগত ইস্যু টেনে এনে অপমান-অপদস্ত করা।
১২. বোরকা পরে প্রেজেন্টেশন অথবা ভাইভা দেওয়ার কারণে তার কাছে অনেক শিক্ষার্থী হেনস্তার শিকার হয়েছে।
১৩. একটি সেমিস্টারে একাধিক কোর্স পাওয়ার ফলে স্বেচ্ছাচারিতার পরিমাণ বেড়ে যায়। বিভাগীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিভিন্ন সিটি, প্রেজেন্টেশন, অ্যাসাইনমেন্টের নম্বর নিজের ইচ্ছেমতো বণ্টন করেন।
১৪.পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে, শিক্ষার্থীদের খাতা মূল্যায়ন করে পরীক্ষা চলাকালীন সময়েই ফলাফল প্রদান করেন এবং শিক্ষার্থীদের এক্সাম হলে ফলাফলের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিরূপ মন্তব্য করে থাকেন তিনি।
১৫. পরীক্ষার আগের রাতে তাঁর পছন্দের শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা। পরীক্ষার হলে পছন্দের শিক্ষার্থীকে এমনকি উত্তর বলে দেওয়া।
১৬. বিশ্ববিদ্যালয়ের আইকিউএসি কর্তৃক পরিচালিত 'শিক্ষক মূল্যায়ন' প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ভয়-ভীতি প্রর্দশন করার মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করা হয়, যাতে করে শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে কোনো মন্তব্য প্রদান করতে না পারে।
এদিকে অভিযোগপত্রের কপি সাংবাদিকদের হাতে আসলে তারা বিষয়টি নিয়ে নিরপেক্ষভাবে লেখালেখি করার পর ফেসবুকে হুমকিমূলক মন্তব্য করেন তার আশীর্বাদপুষ্ট একাধিক শিক্ষার্থী। এছাড়াও অভিযোগ ধামাচাপা দিতে সংঘবদ্ধ হয়ে ফেসবুকে দেয়া পোস্টে রিপোর্ট, কমেন্ট করছেন তার আশীর্বাদপুষ্ট শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের প্রথম ব্যাচের ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বিভাগের কম বেশি সব মেয়েরাই স্যারের হেনস্তার শিকার। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ছাত্রী শিক্ষক দ্বারা হেনেস্তার শিকার হবে এটা কোনভাবেই কাম্য নয়।
বিভাগের ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী বলেন,'মার্ক টেম্পারিং ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে অশালীন ও অনৈতিক ইঙ্গিত দেওয়ার বিষয় অনেক আগের হলেও এটি এখন মাত্রা ছড়িয়ে গেছে। আমরা আমাদের বিভাগের চেয়ারম্যান ও ডিনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। আমরা চাই উনাকে যেন বিভাগের সকল কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা বিভাগের চেয়ারম্যান বিপ্লব মল্লিক বলেন, শিক্ষার্থীরা একটি আমাদের বিভাগের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আমার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও শিক্ষা বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, ‘আমাদের কাছে একটি অভিযোগপত্র এসেছে। এটি খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়। আমরা উপাচার্য স্যারের সাথে বসে তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে এই অভিযোগটি যাচাই করে দেখব। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা বিভাগের শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক এস এম মুশফিকুর রহমান আশিক বলেন, এসব ঘটনা ঘটেনি। আপনারা বিভাগের অন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। কেউ আমার বিরুদ্ধে লেগে এগুলো করছে৷
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: