দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) ছেলেদের আবাসিক হলগুলোতে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, ডরমেটরি ২ হল এবং তাজউদ্দীন আহমদ হলের শিক্ষার্থীদের মাঝে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কয়েক দফায় এই সংঘর্ষ ঘটে। এই ঘটনায় ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমেটরি ২ হলের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আনজারুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৮ থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী বেধড়ক মারপিট করেন। এতে ওই শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হলে তাকে দিনাজপুরের এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থীরা মারামারির পর শেখ রাসেল হলে গিয়ে আশ্রয় নেন। এই খবর ডরমেটরি ২ হলের শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে তারা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তারা শেখ রাসেল হলের দিকে গেলে ডরমেটরি ২ হলের শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলার পর একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
মীমাংসা শেষের দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের একজন শিক্ষার্থী ডরমেটরি-২ হলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ডরমেটরি-২ হলের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে ওই শিক্ষার্থীর সামান্য হাতাহাতি হয়। এর জের ধরে শেখ রাসেল হল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থীরা ডরমেটরি ২ হলের ভিতরে আচমকা আক্রমণ করে এবং ভাংচুর ও মারপিট করে চলে যায়। পরবর্তীতে ডরমেটরি ২ এবং তাজউদ্দিন আহমদ হলের শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে আক্রমণ চালায়। কয়েক দফা সংঘর্ষের পর তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে প্রবেশ করে প্রায় ত্রিশ মিনিটের মতো অবস্থান করে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়ে বের হয়ে আসে।
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের হল সুপার অধ্যাপক ড. মো. হাসানুর রহমান বলেন, 'সংঘর্ষের ঘটনার বিষয়টি এখন আর আমাদের হাতে নেই। তদন্ত কমিটির মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা ও অপরাধীদের খুঁজে বের করা হবে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মামুনুর রশিদ বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোটেই কাম্য নয়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।'
৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র হালদার বলেন, 'আমরা যতো দ্রুত সম্ভব তদন্ত করার মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি দিতে চাই। এরমধ্যেই আমাদের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করে দিয়েছে। আশা করি খুব শীঘ্রই তদন্ত কমিটির ফলাফল প্রকাশ করতে পারবো।'
উল্লেখ্য, সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন থমথমে অবস্থা ও চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: